প্রতীকী ছবি।
তেরো বছরে বিয়ে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই অন্তঃসত্ত্বা।
উনিশ শতকের পটভূমিতে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পল্লি বাংলার গল্প নয়। কন্যাশ্রীর প্রচারের আলো এড়িয়ে বাল্যবিবাহ যে পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি, সন্দেশখালির এই ঘটনা সে দিকেই ইঙ্গিত করছে।
সন্দেশখালির সুখদোয়ানির মেয়ে অতসী সর্দারের বিয়ে হয় মাত্র তেরো বছর বয়সে। দশ মাসের মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে সে। ভাঙড়ের নলমুড়ি হাসপাতালে আসার পরে জানা যায় সে কথা। পুলিশের দ্বারস্থ হন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিমেষ হোড়। বাল্য বিবাহ আইন এবং পকসো ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে অতসীর স্বামীকে। অতসীকে পাঠানো হয়েছে হোমে। অনিমেষ বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে মেয়েটির প্রসবের সময়ে নানা সমস্যা হতে পারে। আমরা ঝুঁকি নিতে চাইনি। আর এটা সম্পূর্ণ বেআইনি।’’
বিয়ে আটকাতে চেয়েছিল অতসীও। তার মা ঘর ছেড়েছেন বহু বছর আগে। থাকেন সন্দেশখালিরই গাববেড়িয়ায়। বললেন, ‘‘আমার তিন ছেলেমেয়ে স্বামীর কাছে থাকে। বছর দেড়েক আগে মেয়ে আসে আমার কাছে। বলে, সৎ মায়ের কথায় বাবা জোর করে বিয়ে দিতে চাইছে।’’ মায়ের আক্ষেপ, ‘‘স্বামী কয়েক দিন বাদে এসে আমাদের মারধর করে মেয়েকে নিয়ে চলে যায়।’’
ভাঙড়ের নারায়ণপুরে স্বামী অসীমের সঙ্গে থাকে অতসী। বছর একুশের অসীম দিনমজুরি করেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বাবা-মা নেই। সংসার সামলানোর লোকের অভাব। ভেবেছিলাম বিয়ে করি। অল্পবয়সি মেয়েকে বিয়ে করা যাবে না, এ কথা জানতাম না।’’
অতসীরা তিন ভাইবোনের কেউই স্কুলের মুখ দেখেনি। ফলে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা বা আঠারো বছর বয়সের নীচে মেয়েদের বিয়ে না করার সরকারি নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। অতসী বলে, ‘‘অভাবের সংসার। সৎমায়ের কথায় বাবা বিয়ে ঠিক করে ফেলেন। আমি বলেছিলাম, এত অল্প বয়সে বিয়ে করতে চাই না।’’
সন্দেশখালির গ্রামে বাল্য বিবাহ রুখতে প্রচার চালায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তার সম্পাদক দীনবন্ধু দাসের মতে, অতসীর ঘটনা একেবারে বিচ্ছিন্ন বলা চলে না। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকায় কী ঘটছে, সব সময় নজর রাখা সম্ভব হয় না। প্রচারে আরও জোর দেওয়া উচিত সরকারের।’’ সমস্যার কথা মানছেন সন্দেশখালির বাসিন্দা তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের বিদায়ী শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ রণজিৎ দাস। তাঁর কথায়, ‘‘সুন্দরবনের গ্রামে এখনও দু’একটি এমন ঘটনা ঘটছে। আটকাতে যথাসাধ্য চেষ্টাও হয়।’’
সেই চেষ্টার সুফল স্কুলের মেয়েরা হয় তো কিছুটা পাচ্ছেও। কিন্তু অতসীর মতো যারা কোনও দিন স্কুলমুখোই হল না— তাদের জীবন থেকে গিয়েছে সেই তিমিরেই।
(অতসী ও তার স্বামীর নাম পরিবর্তিত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy