তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের বিক্ষোভের মুখে শিউলি সাহা। নিমতৌড়িতে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
তৃণমূলের একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হল তমলুকে। রবিবার বিকেলে ওই সভায় বক্তব্য রাখার সময় তাঁকে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরির। জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর উপস্থিতিতেই শিশির-অনুগামীরা তাঁর বক্তৃতায় বাধা দিয়েছে, এই অভিযোগ তুলে সভা ছেড়ে বেরিয়েও যান অখিলবাবু।
তাঁর সঙ্গেই সভাস্থল ছাড়েন তমলুকের বিধায়ক তথা জল সম্পদমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, হলদিয়ার বিধায়ক শিউলি সাহা, চণ্ডীপুরের বিধায়ক অমিয় ভট্টাচার্য। তৃণমূলের অন্দরে এঁরা সকলেই শিশির বিরোধী গোষ্ঠীর লোক হিসেবে পরিচিত। শিউলিদেবীর অভিযোগ, সভা থেকে বেরনোর পথে তাঁকে ঘিরে তৃণমূলের কিছু স্থানীয় নেতা বিক্ষোভ দেখায়, তাঁকে হেনস্থাও করা হয়।
পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সঙ্গে অখিল অনুগামীদের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। অখিলবাবু সম্প্রতি জেলা কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পরে বিরোধের মাত্রা বেড়েছে। এ দিনের ঘটনার পর সরাসরি জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন অখিলবাবু। তাঁর অভিযোগ, “শিশিরবাবু পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমাকে ডেকে এনে অপমান করা হয়েছে। মাত্র ২০-২৫ জন বক্তব্যে বাধা দিল। শিশিরবাবু নিজে মঞ্চে থেকেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না।” অখিলবাবু জানান, গোটা ঘটনার কথা তিনি দলের রাজ্য নেতৃত্বকে ফোনে জানিয়েছেন। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তিনি লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাবেন। ১৬ জুলাই পাঁশকুড়ায় ৫ হাজার মানুষের জমায়েত করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অখিলবাবু।
অখিলবাবুরা বেরিয়ে যাওয়ার পরে অবশ্য এ দিন সভার কাজ হয়। বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিশিরবাবু বলেন, “একটা ছোট্ট ঘটনা ঘটেছে। উনি (অখিল) কেন চলে গেলেন জানি না। আমি ওঁকে ফিরে আসতে বলেছিলাম। উনি আসেননি। এ নিয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলবো।” বিষয়টিতে প্রকাশ্যে অন্তত গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের কথায়, “এটা কোনও বড় ঘটনা নয়। দলের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার।”
আগামী ২১ জুলাই কলকাতায় তৃণমূলের সমাবেশ রয়েছে। তারই প্রস্তুতি হিসেবে ও দলের সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা করতে এ দিন বিকেলে নিমতৌড়ি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে দলীয় সভা ডেকেছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী। জেলায় দলের সব বিধায়ক, জেলা পরিষদ সদস্য-সহ দলের পদাধিকারীদের চিঠি দিয়ে সভায় ডাকা হয়েছিল। মুখ্যবক্তা হিসেবে থাকার কথা ছিল তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর। তবে শেষমেশ তিনি আসেননি। বিকেল সাড়ে তিনটেয় সভা শুরুর বেশ কিছু আগেই এসে পৌঁছন শিশিরবাবু, অর্ধেন্দু মাইতি, রণজিৎ মণ্ডল। সভা শুরুর ঠিক মুখে আসেন অখিলবাবু, সৌমেনবাবু, শিউলিদেবী, বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরী, অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য। সভা মঞ্চে শিশিরবাবুর পাশের চেয়ারেই বসেছিলেন অখিলবাবু।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এগরার বিধায়ক সমরেশ দাস বক্তব্য রাখার পরেই পর সঞ্চালক অর্ধেন্দু মাইতি অখিলবাবুর নাম ঘোষণা করেন। অখিলবাবু বলতে উঠে গোড়াতেই ক্ষোভের সুরে জানান, এই সভায় অনেককেই ডাকা হয়নি। আবার অনেকে জানেই না। তারপর তিনি বলেন, “সভায় সাংগঠনিক ও ২১ জুলাই দু’টি বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা। নেতাজি ইন্ডোরে সংগঠন নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, সে প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাই।” এরপর অখিলবাবু জানতে চান, সভাস্থলের বাইরে মাইক বাজছে কিনা। কারণ, বাইরে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি-সহ অনেকেই রয়েছেন। সঞ্চালক জানান, বাইরে মাইক বাজছে না। এরপর অখিলবাবু বক্তব্য শুরু করতে গেলে জনা কুড়ি তৃণমূলের স্থানীয় নেতা বলতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। গালিগালাজও করা হয়। পরিস্থিতি দেখে মঞ্চ থেকে নেমে বেরিয়ে আসেন অখিলবাবু। তাঁর পিছু পিছু বেরিয়ে যান বিধায়ক শিউলিদেবী, অমিয়বাবু, মন্ত্রী সৌমেনবাবু।
অভিযোগ, সভা ছেড়ে চলে আসার সময় শিউলিদেবীকে ঘিরে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের একাংশ বিক্ষোভ দেখায়, নানা কটূ মন্তব্য করে। তাঁকে ঠেলাঠেলির চেষ্টাও করা হয়। উপস্থিত পুলিশকর্মীরা পরিস্থিতি সামলান। পরে সাংবাদিকদের শিউলিদেবী বলেন, “যা ঘটেছে, আপনারা দেখেছেন। এত অপমানের পর আর এখানে থাকা যায় না।” সৌমেনবাবু অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy