দলের দুর্দিনে রদবদলের পথেই হাঁটছে সিপিএম। ভরসা রাখা হচ্ছে যুবাদের উপর।
রবিবার ছিল সিপিএমের খড়্গপুর শহর জোনাল সম্মেলন। শহরের ৬টি লোকাল কমিটির ৭৭ জন প্রতিনিধিকে নিয়ে এই সম্মেলন পরিচালনার জন্য উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তরুণ রায়, হরেকৃষ্ণ সামন্ত ও জেলা কমিটির সদস্য বিজয় পাল। ১৭ জনের জোনাল কমিটি গঠন করার কথা ছিল। রাত তিনটে পর্যন্ত সম্মেলন চলে। শেষে সম্পাদক হিসেবে অনিতবরন মণ্ডলকে বেছে নেওয়া হয়। সরে দাঁড়াতে হয় দীর্ঘ দিন ওই পদে থাকা মনোজ ধরকে। বাদ পড়েন জোনাল সদস্য লুসি নায়েকও।
সিপিএম সূত্রে খবর, এই সম্মেলনে নানা মতপার্থক্য ধরা পড়েছে। শহর জোনাল কমিটির ১৭ জনের প্যানেলে কিছু নতুন নাম উঠে আসে। প্যানেলের বিরোধিতাও করা হয়। নতুন মুখের প্রশ্নে অলোক বসু, দিলীপ দে, কেয়া শেঠের মতো ৭টি নতুন নামের প্রস্তাব জানায় দলের একাংশ। শুরু হয় প্রবল চাপানউতোর শেষ পর্যন্ত ১৭ জনের অফিসিয়াল প্যানেলে নাম থাকা নতুন মুখ সুরজিৎ সমাদ্দার সরে এলেও বিরোধ কমেনি। শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটির সিদ্ধান্ত হয়। নতুন মুখ বসন্ত সাহু ও মনোজ ধরের ভাই প্রদীপ ধরের নাম প্যানেল থেকে বাদ যাওয়ায় মুরারি ঘোষ ও সুরেশ মহাশেঠের নাম ফের অন্তর্ভুক্ত হয়। ভোটাভুটিতে হেরে যান জেলা কমিটির সদস্য কালী নায়েকের স্ত্রী লুসি। ভোটাভুটি প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিজয় পালের অবশ্য বক্তব্য, “যা হয়েছে দলের গঠনতন্ত্র মেনেই হয়েছে।” রাজ্য কমিটির সদস্য তরুণ রায়ের কথায়, “দেরিতে শুরু হওয়ায় সম্মেলন মিটতে রাত হয়েছে। আর একটি জায়গায় দু’টি নাম চলে এলে ভোটাভুটি হয়েই থাকে। এতে মতানৈক্যের কোনও প্রশ্ন নেই।”
সিপিএমর সূত্রে অবশ্য খবর, জোনাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক মনোজ ধরের সঙ্গে প্রেমবাজার লোকাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক হরেকৃষ্ণ দেবনাথের সম্পর্ক ভাল নয়। লোকাল কমিটির সম্মেলনেও তার ছাপ পড়েছে। প্রেমবাজার ও ইন্দা লোকাল কমিটিতেও ভোটাভুটির মাধ্যমে কমিটি গড়া হয়েছে। প্রেমবাজারে সম্পাদক পদ থেকে সরে গিয়েছেন হরেকৃষ্ণ। আর ইন্দায় সরে যেতে হয়েছে সৌমেন মহাপাত্রকে। প্রেমবাজারে মোহন চৌধুরী ও ইন্দায় কামরুজ্জামানের মতো নতুন মুখ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। খরিদা, মালঞ্চ, খড়্গপুর মধ্য, নিমপুরা লোকাল কমিটির সম্মেলনেও সাংগঠনিক নানা বিষয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল বলে খবর। খড়্গপুর শহরের নতুন জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডলের কথায়, “শহরে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মিটিয়ে ফেলার প্রক্রিয়া চলছে।”
গড়বেতাতেও সব লোকাল কমিটির সম্পাদক পদে রদবদল করা হয়েছে। এই এলাকায় সিপিএমের সাতটি লোকাল কমিটি ছিল। প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী না থাকায় এ বার সেখানে লোকাল কমিটির সংখ্যা কমিয়ে চারটি করা হয়েছে। চারটির সম্পাদক পদেই পরিবর্তন আনা হয়েছে। গেল সপ্তাহের শেষে গড়বেতার লোকাল কমিটির সম্মেলন-পর্ব শেষ হয়েছে। এ বার আর গোপনে নয়, গড়বেতা জোনাল কার্যালয়েই সম্মেলন হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন সুকুর আলি, তপন ঘোষ, দিবাকর ভুঁইয়ার মতো নেতারা। আগে গড়বেতা লোকাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন অজয় শর্মা। তাঁর বদলে নতুন সম্পাদক হয়েছেন হারাধন সাহা। হারাধনবাবু শ্রমিক নেতা। ফুলবেড়িয়ার সম্পাদক ছিলেন দিবাকর ভুঁইয়া। তাঁর বদলে নতুন সম্পাদক হয়েছেন যুব সংগঠন থেকে উঠে আসা বিকাশ রায়। ফতেসিংহপুরের সম্পাদক ছিলেন প্রদ্যোৎ দে। তাঁর বদলে নতুন সম্পাদক হয়েছেন সামেদ আলি গায়েন। সামেদও দলের যুব সংগঠন থেকে উঠে এসেছেন। ধাদিকায় কিরীটি হাজরার বদলে নতুন সম্পাদক হয়েছেন সুখেন্দু রায়। সুখেন্দুবাবুও দলের যুব সংগঠন থেকে উঠে এসেছেন।
লোকাল কমিটির সংখ্যা কমানো হল কেন?
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের বক্তব্য, “এটা সাংগঠনিক ব্যাপার। দলীয়স্তরে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” দীপকবাবুর দাবি, “মানুষ ভুল বুঝতে শুরু করেছেন। কর্মীরা দলের প্রতি দায়বদ্ধ থাকায় দলও ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের অবশ্য কটাক্ষ, “সিপিএমের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। মানুষই তো ওদের পাশে নেই!” আর বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের তীর্যক মন্তব্য, “তরুণ মুখ, নতুন মুখ যাই আনুক, সিপিএমের পক্ষে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়! মানুষ ওদের থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy