বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী।
লোকসভা ভোটের প্রার্থী ঘোষণার পরেই কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে প্রচার শুরু করে দিল তৃণমূল-সিপিএম দু’দলই। বৃহস্পতিবার চণ্ডীপুরের সভার পরই কাঁথিতে ঘাঁটি গেড়েছেন বামফ্রন্ট প্রার্থী তাপস সিংহ। আর তৃণমূলের প্রার্থী বর্ষীয়ান নেতা শিশির অধিকারী ইতিমধ্যেই কথা বলতে শুরু করে গিয়েছেন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। দু’জনের কেউই যে অপর পক্ষকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তা বোঝা যায় দু’জনের সঙ্গে কথাতেই।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা শিশির অধিকারীর নাম কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের মনোনয়ন হিসাবে প্রত্যাশিতই ছিল। বরং ওই কেন্দ্রে বামফ্রন্টের কে প্রার্থী হবেন তা নিয়েই জল্পনা চলছিল অনেক বেশি। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বামফ্রন্টের দলীয় কার্যালয় থেকে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য নাম ঘোষণা করা হয় তাপস সিংহের। তাপসবাবু বর্তমানে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য। এর আগে টানা বারো বছর দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদেও ছিলেন। তাপস সিংহের এ বারই প্রথম নির্বাচনী রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ। সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, জেলায় লক্ষ্মণ শেঠ নিয়ে অস্বস্তি কাটাতে এবং এই কেন্দ্রকে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের আঁচ থেকে দূরে রাখতে চেয়েই নবাগত তাপসকে বাছা হয়েছে। আর তাই ভোটযুদ্ধের ময়দানে সময় নষ্ট করতে চান না তাপসবাবু। শুক্রবার সকালে দলের কাঁথি জোনাল কমিটির অফিসে বসে লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত দলের বিভিন্ন কমিটির সদস্য ও কর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠকও করেন তিনি।
যুযুধান। কাঁথি কেন্দ্রের দুই প্রার্থীর সমর্থনে চলছে জোরদার প্রচার। —নিজস্ব চিত্র
তাপসবাবু সম্পর্কে কী বলছেন প্রতিপক্ষ শিশির অধিকারী?
বিপক্ষের প্রার্থী নিয়ে কোনও মতপ্রকাশ তাঁর স্বভাব বিরুদ্ধ বলে উল্লেখ করে শিশিরবাবু বলেন, “কাঁথি তো বটেই, গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সিপিএমের কোনও সাংগঠনিক অস্তিত্বই নেই। ভোটে লড়াইয়ের প্রয়োজনে জেলার বাইরে থেকে ওদের প্রার্থী আনতে হয়েছে”। নিজের জয় সম্পর্কে একশো ভাগ সুনিশ্চিত শিশিরবাবু জানালেন, “তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরই এই জেলা-সহ রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। উন্নয়নের স্বার্থে মানুষই তৃণমূলকে ভোট দেবেন।” শিশিরবাবুর ‘বহিরাগত’ কটাক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে তাপসবাবুর প্রতিক্রিয়া, “যারা আমাকে বহিরাগত বলে প্রচার করছেন তাঁরা জেলার মানচিত্র সম্পর্কে অজ্ঞ। ১৯৮৪ সাল থেকেই কাঁথি-সহ অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার ছাত্র যুব থেকে কৃষক শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। কাঁথি আমার কাছে ঘরই।” কিন্তু শিশির অধিকারীর মতো এত হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়াতে ভয় করছে না? হেসে তাপসবাবুর জবাব, “একবার লোকসভায় জিতে কেউই হেভিওয়েট হয়ে যান না। পুরসভা, বিধানসভা এমনকী লোকসভা নিবার্চনেও তিনি অতীতে পরাজিত হয়েছেন।” পুরনো ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র থেকে বাম প্রার্থীরাই সবথেকে বেশিবার জিতেছেন। ভোটের লড়াই হবে দলীয় মতাদর্শ ও নীতির ভিত্তিতে।”
শাসকদের লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকায় তারকার সমাবেশকে কটাক্ষ করেও তাপস সিংহ বলেন, “জেলার দলীয় নেতা কর্মীদের উপেক্ষা করে যেখানে বিনোদন জগতের মানুষদের প্রার্থী করতে হয়, সেখানে দলের সাংগঠনিক অস্বিস্ত্ব কতটা মজবুত তা সহজেই অনুমেয়।”
ভোট শুরু হতে দেরি এখনও প্রায় দু’ মাস। কিন্তু ভোটের লড়াই যে জমে উঠেছে, তা দু’পক্ষের প্রার্থীদের বাগযুদ্ধেই প্রমাণিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy