আহত টিএমসিপি সমর্থক।
এখনও পর্যন্ত ফলাফল টিএমসিপি ২৮ বিরোধীরা ০!
ছাত্রভোটের মনোনয়ন পর্ব মিটেছে দুই মেদিনীপুরে এমন ৪৩টি কলেজের মধ্যে ইতিমধ্যেই ২৮টি কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৬টি কলেজের মধ্যে ভোট হচ্ছে অর্ধেকেরও কম, ১১টি কলেজে। আর পূর্ব মেদিনীপুরের ১৭টি কলেজের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মাত্র চারটি আসনে! অর্থাৎ, পূর্বের ১৩টি কলেজে কোনও প্রার্থীই দিতে পারেনি বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি।
শুধু তাই নয়, ভোট হবে এমন বেশ কিছু কলেজেরও ছাত্র সংসদ নিজেদের দখলে নিতে পারে টিএমসিপি। কারণ, যে সংখ্যক আসনে ভোট হচ্ছে, সেই সংখ্যক আসনে হারা জেতার উপর সংসদ কার দখলে থাকবে তা নির্ভর করে না। সব মিলিয়ে, দুই মেদিনীপুরের বেশির ভাগ কলেজেই নিরঙ্কুশ শাসক দলের ছাত্র সংগঠন।
বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর অবশ্য অভিযোগ, বেশির ভাগ কলেজে ভোটের নামে প্রহসন হচ্ছে। বহু জায়গায় মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। টিএমসিপি জোরজুলুম করেছে। এর থেকেই প্রমাণ মেলে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দিন ফুরিয়ে আসছে! এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডার অভিযোগ, “দখলদারির রাজনীতি চলছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের বদলে গায়ের জোরে সংসদ দখল করা হচ্ছে।” ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “টিএমসিপি যে আচরণ করছে, এসএফআইও তা করত না।” এবিভিপি-র জেলা সভাপতি স্বরূপ মাইতির অভিযোগ, আগে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এখন মনোনয়ন প্রত্যাহারের চাপ দেওয়া হচ্ছে। একই অভিযোগ ডিএসও-র। সব অভিযোগ উড়িয়ে টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “সব কলেজেই সুষ্ঠু ভাবে মনোনয়নপর্ব হয়েছে।” বিনা লড়াইয়ে জেতা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “ওরা যদি প্রার্থী খুঁজে না পায়, তা হলে আমরা কী করব!”
পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজ, তমলুক কলেজ, মহিষাদল কলেজ ও এগরা কলেজে অল্প কয়েকটি আসনে লড়াই হচ্ছে। এগরা কলেজে আবার বিরোধী কোনও ছাত্র সংগঠন প্রার্থী দিতে পারেনি। ১২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে টিএমসিপি বনাম টিএমসিপি। অন্য দিকে, প্রভাতকুমার কলেজে ৭টি আসনে, তমলুক কলেজে ৯টি আসনে সংগঠনের তরফে মনোনয়ন জমা পড়েছে বলে ডিএসও-র জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিশ্বজিৎ রায় জানিয়েছেন।
এসএফআইয়ের পরিতোষ পট্টনায়ক জানান, এসএফআইয়ের পক্ষ থেকে মহিষাদল কলেজে ২১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন জমা পড়েছে। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি-র পক্ষ থেকেও মহিষাদল কলেজে ১৮টি আসনে মনোনয়ন জমা পড়েছে বলে এবিভিপির জেলা পর্যবেক্ষক অসীম মিশ্র জানিয়েছেন।
উঠেছে টিএমসিপি-র হয়ে পক্ষপাতের অভিযোগও। টিএমসিপি-র চাপে খড়্গপুর কলেজের কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে সংগঠনের কিছু প্রার্থীদের বাতিল হওয়া মনোনয়ন গ্রহণ করেছেন। এই অভিযোগ তুলেছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি। তাদের অভিযোগ, উপযুক্ত নথি না থাকায় ছাত্র পরিষদ, এফএফআই, ডিএসও-র কিছু মনোনয়ন গৃহীত হয়নি। কিন্তু, টিএমসিপি-র ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় খড়্গপুর কলেজে।
ছাত্র পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় হুইয়ের অভিযোগ, “ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাথা নত করে কাজ করেছেন। টিএমসিপি-র ৩৫টি মনোনয়নপত্রে উপযুক্ত নথি না থাকলেও তা গৃহীত হয়েছে।” একই দাবি এসএফআইয়ের শহর সম্পাদক রাজীব মণ্ডলের। ডিএসও-র জেলা সভাপতি দীপক পাত্রও বলেন, “টিএমসিপি-র কারচুপিকে সমর্থন করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।” প্রতিবাদে স্কুটিনির টেবিল ছাড়ে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি। টিএমসিপির শহর সভাপতি রাজা সরকার এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অচিন্ত্য চট্টোপাধ্যায় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অচিন্ত্যবাবু শুধু বলেন, “১৮৫টি মনোনয়নের মধ্যে ১৭৮টি গৃহীত হয়েছে।”
বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির অভিযোগ, মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে তৃণমূলের সাহায্য নিয়ে টিএমসিপি কলেজে কলেজে সন্ত্রাস চালিয়েছে। তার ফলে বিরোধী সংগঠনের পড়ুয়ারা ভয়ে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি দীপক দাস। তাঁর পাল্টা দাবি, “সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির সঙ্গে নেই। যেখানে তাদের প্রতিনিধিরা আছেন, সেই সব কলেজে তারা মনোনয়ন জমা দিয়েছে। আর যেখানে নেই, সেখানে দলীয় কর্মীদের ভিড় বাড়িয়ে কলেজ গেটে নাটক করেছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার ২৬টি কলেজে ছাত্র সংসদের ভোট হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে কেশপুর, নাড়াজোল, লালগড়, মানিকপাড়া কলেজ-সহ ১৫টি কলেজে আর ভোটাভুটির প্রয়োজন হচ্ছে না। তবে সবং, কমার্স, চাঁইপাট, খড়্গপুর, হিজলি, গোয়ালতোড়-সহ ১১টি কলেজে আগামী ২৯ জানুয়ারি ভোট হবে। এই ১১টি কলেজের মধ্যে আবার কয়েকটি কলেজে ছাত্র সংসদ কার্যত টিএমসিপির দখলেই চলে গিয়েছে। কারণ, বিরোধী প্রার্থী রয়েছে নামমাত্র। অর্ধেকেরও কম আসনে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতার এই ঝোঁক নতুন নয়। রাজ্যে পালাবদলের আগে বহু কলেজে এই প্রবণতা ছিল এসএফআইয়ের। আর এখন সেই ঝোঁক চেপে বসেছে টিএমসিপির উপর। সব মিলিয়ে যেন দল বদলেছে, শাসকের ‘মুখ’ বদলেছে। বাকি সব একই রয়ে গিয়েছে!
বিশ্ববিদ্যালয়ে গোষ্ঠী সংঘর্ষ
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যেই মারপিটে জড়াল টিএমসিপি-র দু’গোষ্ঠী। সোমবার দুপুরের ওই ঘটনায় চার টিএমসিপি কর্মী জখম হয়েছেন। ২৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তার আগে ছাত্র সংসদ কার দখলে থাকবে, তা নিয়েই এই হামলা বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর। বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপি-র দ্বন্দ্ব নতুন নয়। এক দিকে রয়েছে বিদায়ী ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ সরকার ও অন্য দিকেছ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের চেয়ারম্যান তথা সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি বিশ্বনাথ দাসের গোষ্ঠী। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে সম্প্রতি দুই গোষ্ঠীর নেতাদের নিয়ে বৈঠকও করেন তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মকর্তারা। তাতেও কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি, গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা তারই প্রমাণ। সংঘর্ষের পর দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বহিরাগতদের এনে অশান্তি পাকানোর অভিযোগ তুলছে। স্বদেশ সরকার বলেন, “একদল বহিরাগতকে এনে আচমকা হামলা চালানো হয়েছে।” বিশ্বনাথের অনুগামী বলে পরিচিত টিএমসিপির বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সভাপতি প্রবীর আদক বলেন, “ছাত্রদের উপর বহিরাগতরাই হামলা চালিয়েছে।” টিএমসিপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বুদ্ধ মণ্ডল বলেন, “একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তা মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।” এই টিএমসিপি নেতার দাবি, দ্বন্দ্বের কোনও প্রভাবই পড়বে না ছাত্র সংসদ নির্বাচনে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy