উপভোক্তা মারা গিয়েছেন বছর আটেক আগে। অথচ তাঁর নামেই ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠল। আবার মৃতার মেয়ের দাবি, তিনি ওই টাকা পান নি। কারণ আদৌ তাঁর কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই নেই।
তৃণমূল পরিচালিত ঘাটাল ব্লকের বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েতের এমন ঘটনার কথা জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে খোদ শাসকদলের মধ্যেই। টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে ঘাটালের বিডিওর কাছে ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন অর্চনা চৌংরে নামে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের এক সদস্যা। ঘাটালের বিডিও সঞ্জয় পণ্ডিত বলেন, “অভিযোগ পেয়েই তদন্ত শুরু করেছি। প্রাথমিক তদন্তে যাঁর নামে টাকা মঞ্জুর হয়েছে তিনি মারা গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এখন ওই টাকা কোথায় এবং কার অ্যাকাউন্টে ওই টাকা গিয়েছে-তার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
ঘটনাটি ঠিক কী?
স্থানীয় ও ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে উপভোক্তারা ৪৮ হাজার টাকা করে পেতেন। গত আর্থিক বছর থেকে ওই টাকার পরিমাণ বেড়ে ৭৫ হাজার টাকা হয়েছে। তিন কিস্তিতে ওই টাকা এখন উপভোক্তারা পাচ্ছেন। মাস তিনেক আগে ঘাটাল ব্লকের বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েতে একাধিক উপভোক্তাকে তাঁদের অ্যাকাউন্টে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা দেওয়া হয়। সেই খাতে টাকা বরাদ্দ হয় ঘাটাল ব্লকের শ্যামসুন্দরপুরের তিলকা পালের নামেও। অথচ বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, বার্ধক্য জনিত কারণে বছর আটেক আগে মারা গিয়েছেন তিলকাদেবী। তাঁর এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ছেলে মারা গিয়েছেন ও দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তবে অবিবাহিত রয়েছেন ছোট মেয়ে ভারতী পাল। তাই তিলকাদেবীর বিপিএল তালিকার একমাত্র অংশীদার বছর তিরিশের ভারতীদেবীই। ভারতীদেবীর অভিযোগ, তাঁদের কোনও অ্যাকাউন্টই নেই। তিনি বলেন, “টাকা পাওয়া তো দূরের কথা। আমার ওই নম্বরে কোনও অ্যাকাউন্টই নেই।”
নিয়মানুযায়ী, ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পের জন্য পঞ্চায়েত অফিস থেকে উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি হয়। সেই সময়ই তাঁদের পাশবইয়ের নকল কপি-সহ বিডিও অফিসে পাঠানো হয়। তাতেই প্রমাণ থাকে কার নামে ওই টাকা বরাদ্দ হচ্ছে এবং তাঁর ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বরই বা কত। ওই পঞ্চায়েতের নিবার্চিত সদস্যা সিপিএমের অর্চনা চৌংরের অভিযোগ, “মৃত ব্যক্তির নামে কীভাবে টাকা বরাদ্দ হল? আর এমন একটা অ্যাকাউন্ট নম্বরে টাকা গেল যার দাবিদার ভারতীদেবী নন। তাহলে টাকাটা গেল কোথায়?” তাঁর আরও অভিযোগ, “বীরসিংহ পঞ্চায়েতে নানা দুর্নীতির সঙ্গে এই প্রকল্পেও আরও কারচুপি হচ্ছে। প্রশাসন ঠিকঠাক তদন্ত করলেও সব বেরিয়ে আসবে।”
প্রকল্পের টাকা পেয়ে বাড়ি তৈরি না করে অন্যভাবে টাকা খরচের অভিযোগ উপভোক্তাদের বিরুদ্ধে নতুন কিছু নয়। কিছুদিন আগেই চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পরই সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিও একাধিক উপভোক্তার নামে থানায় মামলাও করেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এখন ইন্দিরা আবাস-সহ সরকারি নানা প্রকল্পে টাকা পাওয়ার পর উপভোক্তারা ঠিক ভাবে টাকা খরচ করছেন কি না, তা জানার জন্য রিসোর্স পার্সেন নিয়োগও করেছে। তাঁদের কাছেই রিপোর্ট নেওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত থেকে আসা রিপোর্ট ঠিক আছে কি না তা যাচাই করে নেওয়া হয়।
ফলে আট বছর আগে মৃত এক ব্যক্তির নামে কী করে টাকা বরাদ্দ হল? আর উপভোক্তার উত্তরসূরীকে এমন কোন অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হল যা তিনি পেলেনই না? তার চেয়েও বড় হল, যে টাকা এভাবে অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গেল, তা কি ফেরত পাওয়ার কোনও আশা রয়েছে? উঠছে এমনই সব প্রশ্ন।
পুরো বিষয়টি স্বীকার করে বীরসিংহ পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান গুরুপদ ঘোষ বলেন, “কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রথম কিস্তির টাকার হদিশ করা হচ্ছে। যাতে ওই টাকা ফেরত হয়-তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।” আর ঘটনার কথা স্বীকার করলেও কোনও মন্তব্য করতে চাননি বীরসিংহ পঞ্চায়েতের প্রধান জয়ন্তী বিশুই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy