Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বহু মনোনয়ন, ভাবাচ্ছে ভোট কাটাকাটি

গত লোকসভা নির্বাচনে জোট ছিল। এ বার একলা চলার লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে তৃণমূলের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন পেশ। কারণ যত বেশি প্রার্থী, তত বেশি ভোট কাটাকাটি। যদিও এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। এ প্রসঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, “কী আর করা যাবে। এখন বেশি মানুষের মধ্যে দেশ সেবার ইচ্ছে জেগেছে। তাই প্রার্থী হয়েছে।”

খড়্গপুরে এক দেওয়ালে তিন প্রার্থী। নিজস্ব চিত্র।

খড়্গপুরে এক দেওয়ালে তিন প্রার্থী। নিজস্ব চিত্র।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০১:১৪
Share: Save:

গত লোকসভা নির্বাচনে জোট ছিল। এ বার একলা চলার লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে তৃণমূলের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন পেশ। কারণ যত বেশি প্রার্থী, তত বেশি ভোট কাটাকাটি। যদিও এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। এ প্রসঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, “কী আর করা যাবে। এখন বেশি মানুষের মধ্যে দেশ সেবার ইচ্ছে জেগেছে। তাই প্রার্থী হয়েছে।” এতে তৃণমূল বেকায়দায় পড়বে না বলেও মনে করেন তিনি।

আগামী ৭ মে পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রথম দফার ভোট হবে দুই কেন্দ্রে, মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে। এই দুই কেন্দ্রের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল শনিবার। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ১০ জন। এ বার সেখানে ১২ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ঝাড়গ্রামে গত লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৮। সে বার অবশ্য জোট ছিল। এবার সেখানে ১৩ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল-বিজেপি ছাড়াও রয়েছেন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন), এসইউসি, বোরোল্যান্ড পিপলস পার্টি, আমরা বাঙালী, ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা-সহ বিভিন্ন ছোট দলের প্রার্থীরা। ঘাটাল লোকসভায় আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মনোনয়ন নেওয়া হবে। সেখানে ইতিমধ্যেই ৫টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। বাকিদের মধ্যে রয়েছে এসইউসি, ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি ও পার্টি ফর ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিজম। তৃণমূল ও বিজেপি এখনও মনোনয়ন জমা দেয়নি। গত বার এই কেন্দ্রে ৭ জন প্রার্থী ছিলেন। হাতে যেহেতু আরও ৪ দিন সময় রয়েছে ফলে আরও যে মনোনয়ন পড়তে পারেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এই পরিস্থিতিতে অবাম ভোট ভাগাভাগির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আর তা হলে বামেরা কিছুটা সুবিধে পাবেই। ঝাড়গ্রামের সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কে তাই বলেন, “যা পরিস্থিতি তাতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে ফল ভালোই হবে।” জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি শম্ভু চট্টোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “এক একটি লোকসভা কেন্দ্রে এত মনোনয়ন পড়েছে দেখেই অবাক লাগছে। এর পিছনে অন্য কৌশল রয়েছে।”

এই প্রার্থীরা মূলত, দু’টি উদ্দেশ্যে নিয়েই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। প্রথমটি হল, জোট না থাকায় প্রত্যেকে নিজেদের দলীয় কর্মীদের এক ছাতার তলায় রাখতে প্রার্থী দিয়েছেন। দ্বিতীয়টি হল, বিরোধী ভোট যাতে কোনও এক জায়গায় না পড়ে বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে যায়, সে কারনেও কিছু ব্যক্তিকে গোপনে প্রার্থী করেছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি। যেমন ঝাড়খণ্ড পার্টি-র (নরেন) প্রার্থী চুনিবালা হাঁসদা বলেন, “আমাদের ভোটেই জঙ্গলমহলে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। আর এখন, মুখে উন্নয়নের কথা বলছে, কাজে কিছুই হচ্ছে না। উল্টে পুলিশ-প্রশাসনকে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে সকলকে তৃণমূল করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তারই প্রতিবাদে আমি প্রার্থী হয়েছি।”

কিন্তু আপনাদের মতো ছোট দল বা নির্দল প্রার্থীদের তো জেতার কোনও সম্ভাবনাই নেই। সে ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের সুবিধে হয়ে যাবে। চুনিবালাদেবীর জবাব, “কার কোথায় লাভ হবে তা আমরা দেখব কেন? ক্ষমতায় আসার সময় আাদের সাহায্য প্রয়োজন ছিল। আর এখন কলকাতা থেকে দল চালানো হচ্ছে। আমাদের ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রটি নিতান্ত তফসিলি বলে হয়তো কলকাতার কোনও তারকা মেলেনি। না হলে এখানেও কোনও তারকা পাঠিয়ে দিতেন।”

সব মিলিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব কিছুটা দুশ্চিন্তায়। পঞ্চায়েতের ভোটের সাফল্য ধরে রাখা কঠিন হতে পারে, এমন আলোচনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। তবে প্রকাশ্যে নেতারা বলছেন, জেলার তিন কেন্দ্রেই তৃণমূল প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জিতবেন। এক তৃণমূল নেতার কথায়, “একে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সমস্যা মেটানো যায়নি। তার উপর ভোট ভাগাভাগি হলে ফলাফলে তো তার প্রভাব তো পড়বেই।” তাই আপাতত তৃণমূল নেতৃত্বের চেষ্টা, বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নির্দল ও ছোট দলগুলির প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর। সে চেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হয়, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sumon ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE