দিঘা-মন্দারমনি সৈকতে দুর্ঘটনা এড়াতে রাজ্য পর্যটন দফতর থেকে দিঘা পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল পাঁচটি স্পিডবোট। সেটা ২০১২ সাল। মাঝে কেটে গিয়েছে দু’বছর। জলে নামা তো দূর অস্ৎ, সেই স্পিডবোটগুলোর ঠাঁই আপাতত দিঘা থানার মালঘরে। কিন্তু এমন হাল কেন? জানা গিয়েছে, এই স্পিডবোট চালাতে ভরসা প্রশিক্ষিত নুলিয়ারা। আর প্রশিক্ষিত নুলিয়া রাখতে মাসে খরচ হবে ৫৬ হাজার টাকা। এই টাকা কে দেবে তা নিয়েই শুরু হয়েছে ধন্দ। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় নিয়োগ করা হয়নি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নুলিয়াদের। আর তাই দিঘা থানায় নষ্ট হচ্ছে পাঁচটি স্পিডবোটগুলি।
প্রথম দিকে অবশ্য সমুদ্র সৈকতে নুলিয়ার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। ২০০৩ সালে দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন দিঘার সৈকতে নুলিয়া নিয়োগ করে। নুলিয়াদের বেতন দিত ওই সংস্থাই। ২০০৬ সালে তারা নুলিয়াদের বেতন দিতে অস্বীকার করে। বক্তব্য ছিল যেহেতু তারা দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদকে কর দেয় তাই নুলিয়াদের বেতন দিতে হবে পর্ষদকেই। এরপর কয়েক বছর সৈকত নুলিয়াহীন থাকার পর ২০০৯ সালে পর্ষদ ও হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে ৬ জন নুলিয়া নিয়োগ করা হয়। ২০১২ সালে হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ফের নুলিয়াদের বেতন দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সেই থেকে পর্ষদই নুলিয়াদের বেতন দিচ্ছে। বর্তমানে শুধু লাইফ জ্যাকেট নিয়ে তিনজন নুলিয়া ওল্ড দিঘায় ও বাকি তিনজন নুলিয়া নিউ দিঘায় পযর্টকদের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রে খবর, বর্তমানে মাসিক চার হাজার টাকা করে তাঁদের বেতন দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সৈকত পযর্টনকেন্দ্র দিঘাকে গোয়া বানানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন। দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর সৈকতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা পযর্টনকেন্দ্রে গত তিন বছর ঘটা করে সমুদ্র উৎসব হয়েছে। তবে সমুদ্র সৈকতে স্নানে নামে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে পরপর। তাই সৈকতের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিলই। ২০১২ সালে তৎকালীন জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকির উদ্যোগে রাজ্যের পযর্টন দফতর দিঘার পুলিশের হাতে ৫টি স্পিডবোট তুলে দেয়। সিদ্ধান্ত হয়, ওই স্পিডবোটগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশিক্ষিত ২০ জন নুলিয়া নিউ দিঘা, ওল্ড দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুর ও তাজপুর সৈকতে থাকবেন।
বতর্মানে কর্মরত ৬ জন নুলিয়া ছাড়াও আরও নুলিয়া নিয়োগের জন্য কাঁথির মহকুমাশাসক, মহকুমা পুলিস অফিসার ও পষর্দের নিবার্হী আধিকারিককে নিয়ে একটি বাছাই কমিটি তৈরি করা হয়। বাছাইও করা হয় ১৪ জনকে নুলিয়াকে। কিন্তু ওই ১৪ জন প্রশিক্ষিত নুলিয়াদের রাখতে মাসে খরচ হবে ৫৬ হাজার টাকা। এই টাকা কে বা কারা দেবেন তা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় নুলিয়া নিয়োগ সম্ভব হয়নি। পর্ষদের নিবার্হী আধিকারিক সুজন দত্ত জানান, “নুলিয়াদের বেতন কারা দেবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ১৪ জনকে নিয়োগ করা যাচ্ছে না। প্রথমে রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতি, দিঘা-মন্দারমণির হোটেল মালিকরা ও দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ যৌথভাবে ব্যয় করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।” তবে কাঁথির মহকুমাশাসকের উদ্যোগে একটি বৈঠক ডেকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে বাছাই কমিটির সভাপতি কাঁথির মহকুমাশাসক সরিৎ ভট্টাচার্যের দাবি, “বাছাই করা ১৪ জন নুলিয়া হলদিয়ায় গিয়ে উপকূল রক্ষী বাহিনীর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তবে তাদের সমুদ্রে নেমে প্রশিক্ষণের কাজ বাকি। তাই তাদের নিয়োগ করা যায়নি।” একই কথা জানালেন সুজনবাবুও। তিনি বলেন, “বাছাই করা ১৪ জন নুলিয়ার এখনও একটি প্রশিক্ষণ বাকি রয়েছে। সেটা নুলিয়া নিয়োগ না করার আরও একটি কারণ।”
গত দেড় মাসেই দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর সৈকতে স্নানে নেমে মৃত্যু হয়েছে জনা পনেরো পর্যটকের। অথচ এই দুর্ঘটনা এড়াতে যে ব্যবস্থা রয়েছে তা থানার মালঘরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। কাঁথির মহকুমা পুলিস অফিসার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “পাঁচটি স্পিডবোট দীর্ঘদিন আগেই দিঘা পুলিশের হাতে এসেছে। গততছর বন্যার সময় স্পিডবোটগুলি পাঁশকুড়ায় বন্যাত্রাণের কাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে সেগুলি ফের দিঘায় ফিরে এলেও নুলিয়ার অভাবে তা দিঘা থানার মালঘরে পড়ে রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy