ঝুঁকি নিয়েই নিত্য যাতায়াত।
রেলগেট কিংবা সাবওয়ে না থাকায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার হতে হয় দীর্ঘ দু’দশক ধরে লাগাতার বিক্ষোভ-আন্দোলন করলেও সেই দাবিপূরণ হয়নি। সেই ক্ষোভে নতুন রেলপথের কাজ দেখতে আসা খড়্গপুর শাখার ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখালেন বেশ কিছু গ্রামের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে খড়্গপুর-হাওড়া শাখার জকপুর স্টেশনের কাছে এই বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারাই। পরে স্টেশন থেকে জাতীয় সড়কে যাওয়ার রাজ্য সড়কেও অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জংশন স্টেশন খড়্গপুরের পরের স্টেশনই জকপুর। এর উত্তরে রয়েছে খড়্গপুর ২ ব্লকের ঘোলাগেড়িয়া, জকপুর, লছমাপুর, কৃষ্ণনগর, চকগণেশ-সহ বহু গ্রাম। দক্ষিণে রয়েছে রাধানগর, কাজলা, কাঁটাগেরিয়ার, মহিষার মতো কিছু এলাকা। উত্তর ও দক্ষিণের গ্রামগুলির মাঝে রয়েছে চারটি রেললাইন। অথচ নেই রেলগেট। ফলে রেললাইন পেরিয়েই দু’পাশের স্কুল, বাজার-সহ নানা কাজে যাওয়া-আসা লেগেই থাকে এলাকাবাসীর।
এই অবস্থায় অন্তত দু’দশক ধরে রেলগেট অথবা সাবওয়ের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। কিন্তু এত দিনের কোনও হেলদোল দেখা যায়নি রেল কর্তৃপক্ষের। এ দিকে চালু হতে চলা তৃতীয় লাইনের ফলে বেড়েছে আরও দু’টি রেলপথ। তাই লাইন পেরিয়ে চলাচলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছেই। সে কথা জানিয়ে বুধবারই ফের ডিআরএমের কাছে দাবিপত্র দেয় এলাকাবাসী। তারপরেও কোনও আশ্বাস না মেলেনি বলে বিক্ষোভকারীদের দাবি।
খড়্গপুর শাখার ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ও মানছেন, “আমার কাছে ওঁরা বুধবারই ওই দাবি জানিয়েছিল। সেটি গ্রহণও করেছি। তার পরেও বৃহস্পতিবার কয়েকজন একই দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। বিষয়টি রেল বোর্ডে জানাব।”
তৃণমূলের বিক্ষোভ বৃহস্পতিবার।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার জকপুরে তৃতীয় লাইন পরিদর্শনে রেল আধিকারিকদের আসার খবরে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে তৃণমূল সমর্থকেরা। এ দিন সকাল থেকেই তৃতীয় লাইনের উপরে দলীয় পতাকা লাগিয়ে দেয় তৃণমূল। পরে আরপিএফ সেই পতাকা খুলে দেয় বলে অভিযোগ। তাতে আরও তেতে যান তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ইতিমধ্যে রেলের বিশেষ ট্রলিতে চলে আসেন কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি ও ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ। নেতৃত্বে ছিলেন যুব তৃণমূলের লছমাপুর অঞ্চল সভাপতি নান্টু দোলুই।
নান্টুর অভিযোগ, “এত দিন চারটি লাইন ছিল। এ বার বেড়ে ছ’টি লাইন হলেও দাবি পূরণ হল না!” বিক্ষোভের জেরে বেলা ১২টা থেকে প্রায় আধ ঘণ্টা আটকে থাকেন আধিকারিকেরা। পরে দাবি বিবেচনার কিছুটা আশ্বাস মিললে অবরোধ ওঠে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। তবে পতাকা খুলে দেওয়ার দাবিতে ফের জাতীয় সড়কগামী কৃষ্ণনগরের রাজ্য সড়কে অবরোধে বসেন তৃণমূল সমর্থকেরা। প্রায় দু’ঘণ্টা রাস্তা অবরুদ্ধ থাকার পরে বিক্ষোভ ওঠে। নান্টু বলেন, “আমরা আপাতত বিক্ষোভ তুলে নিলাম। দাবি পূরণ না হলে লাগাতার আন্দোলন করবো।”
জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা ওই ব্লকের নেতা অজিত মাইতি বলেন, “বহুবার রেল বোর্ডে জকপুরে রেলগেট কিংবা সাবওয়ের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রতিশ্রুতি দিলেও, তা পূরণ হয়নি।” তাঁর যুক্তি, “কত দিন এ ভাবে ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করা যায়! তাই গ্রামবাসীরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।”
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy