একদিকে বৃষ্টির অভাব, অন্য দিকে কংসাবতী ক্যানাল থেকে পর্যাপ্ত জল না ছাড়ার ফলে পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার আমন ধানের চাষ মার খেতে চলেছে। এখনও পর্যন্ত ৫০ শতাংশ জমিতেও ধান রোয়ার কাজ শেষ করা যায়নি। ফলে, উদ্বিগ্ন কৃষি দফতর।
ইতিমধ্যে আলুর দাম আগুন। মেদিনীপুরের বাজারে আলুর দাম কিলো প্রতি ১৮-২২ টাকা। এই পরিস্থিতিতে আমন ধানের চাষ কম হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার আমলাগোড়া, মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম-এই তিনটি ডিভিশনে কংসাবতী ক্যানালের ডিভিশন রয়েছে। এই ক্যানেল থেকে যেখানে প্রায় ২ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হলে কৃষকদের সুবিধে হওয়ার কথা, সেখানে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জেলা পরিষদের কৃষি-সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, “ভারী বৃষ্টি না হলে এ বার আমন ধানের চাষ মার খেতে পারে। বৃষ্টির ঘাটতিতে চাষের ক্ষতি এড়াতেই আমরা বাড়িয়ে জল ছাড়ার কথা ভাবছি।”
খরিফ চাষ মূলত বৃষ্টি নির্ভর। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে চাষ ভালই হয়। সাধারণত, মে এবং জুন, এই দুই মাসই বীজতলা তৈরির সময়। জুলাই-অগস্টে ধান রোয়ার কাজ হয়। এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ এখনও পর্যন্ত প্রতি বছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ কম। কম বৃষ্টির জন্য বিভিন্ন এলাকায় বীজতলা তৈরি থেকে ধান রোয়ার কাজ পিছিয়ে গিয়েছে। যে কাজ জুলাইয়ে হয়ে যাওয়ার কথা, সেই কাজ অগস্টের গোড়াতেও হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরে চাষযোগ্য জমি রয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে খরিফ চাষ হওয়ার কথা ৫ লক্ষ ৪৪ হাজার হেক্টরে। পরিস্থিতি এমনই যে, এখনও পর্যন্ত ৫০ শতাংশ জমিতেও ধান রোয়ার কাজ শেষ করা যায়নি।
বৃষ্টিপাতের ছবিটা ঠিক কেমন? জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, জেলায় বছরে গড়ে প্রায় দেড় হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। গত ২৯ বছরের হিসেব বলছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১,৫৪১ মিলিমিটার। গত ১০ বছরের হিসেব অনুযায়ী, জেলায় বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১,৫০৩ মিলিমিটার। গত ২৯ বছরের হিসেব বলছে, জেলায় অগস্ট পর্যন্ত গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১,১৩১ মিলিমিটার। গত ১০ বছরের হিসেব অনুযায়ী, জেলায় অগস্ট পর্যন্ত গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১,১০৭ মিলিমিটার। অর্থাৎ, গত দু’দশকে বৃষ্টির গড় সামান্য কমেছে।
আবার জেলার সর্বত্র সেচের হালও খুব ভাল নয়। জেলায় কংসাবতী ক্যানালের যে তিনটি ডিভিশন রয়েছে, তার মধ্যে গড়বেতা ক্যানালের জল মূলত চারটি ব্লকের উপর দিয়ে পাঠানো হয়। গড়বেতা-১, ২, ৩ এবং চন্দ্রকোনা। মেদিনীপুর বিভাগের জলও চারটি ব্লকের উপর দিয়ে পাঠানো হয়। মেদিনীপুর সদর, বিনপুর- ১ (লালগড়), খড়্গপুর- ১, ২। অন্যদিকে, ঝাড়গ্রাম বিভাগের জল সব মিলিয়ে ছ’টি ব্লকের উপর দিয়ে পাঠানো হয়। বিনপুর-১, ২, খড়্গপুর-১, সাঁকরাইল, ঝাড়গ্রাম এবং গোপীবল্লভপুর-২। জেলার জঙ্গলমহল এলাকায় চাষযোগ্য জমি রয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ১৩ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে সেচের সুবিধে রয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজারের কিছু বেশি জমিতে। মেদিনীপুরের কংসাবতী অ্যানিকেত থেকে জেলার চারটি ব্লকের প্রায় ৮০ হাজার একর জমিতে সেচ দেওয়ার কথা। এখন নতুন অ্যানিকেত তৈরির কাজ চলছে। অ্যানিকেতে জল না থাকলে সমস্যা হয়ই। এ বারও সেই সমস্যা হচ্ছে।
জেলা পরিষদের কৃষি-সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মলবাবুর অবশ্য দাবি, “আগের থেকে জেলার সেচ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে কিছু সমস্যা হবেই। ক্যানালে জল বাড়িয়ে ছাড়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সেচের জল যাতে যতটা সম্ভব বৃষ্টির অভাব মেটাতে পারে, সেই চেষ্টা চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy