হুগলির ভদ্রেশ্বরের জুটমিলে সিইও-কে পিটিয়ে খুনের পরে হাওয়া এখনও ঠান্ডা হয়নি। এরই মধ্যে মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে এলোপাথাড়ি কিল-চড়-লাথি মারা হল জিন্দলদের নির্মীয়মাণ ইস্পাত কারখানার এক কর্মীকে। শালবনির ঘটনাটি শ্রমিক অসন্তোষ নয়, জমিদাতাদের একাংশের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তবে বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের উপরে এ ধরনের হামলার জেরে আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে উদ্বিগ্ন শিল্প মহলের একটা বড় অংশ।
দ্রুত কারখানা চালু এবং কাজের দাবিতে শালবনির এই প্রকল্পে জমিদাতাদের একাংশ গত কয়েক দিন ধরেই দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। সেই বিক্ষুব্ধদের কয়েকজন এ দিন সকালে জিন্দলদের নির্মীয়মাণ কারখানার মূল গেট থেকে কিছুটা দূরে কারখানার আইটি কনসালট্যান্ট সত্যব্রত ঘোষকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। গোয়ালতোড়ের যুবক সত্যব্রত বছর চারেক হল এখানে কাজ করছেন। এ দিন মেদিনীপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই যুবক বলেন, “এ ভাবে মারধর চললে আমার পক্ষে আর শালবনি অফিসে গিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়।”
এ ব্যাপারে শালবনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত হিসেবে নাম রয়েছে জমিদাতা পরিবারের এক সদস্যের। পুলিশ সূত্রের খবর, সত্যব্রত ওই লোকটিকেই চিনতে পেরেছেন। তবে সব মিলিয়ে জমিদাতা পরিবারের জনা দশেক সদস্য তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। কারখানার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। মন্তব্য করতে চাননি জিন্দলদের শালবনির ইস্পাত প্রকল্পের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিশ্বদীপ গুপ্তও।
শিল্পমহল সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, এ দিনের ঘটনা শুধু জিন্দল গোষ্ঠী নয়, রাজ্যের বিনিয়োগকারীদের অনেকের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এ দিন দুপুরে জিন্দল গোষ্ঠীর তরফে নির্মীয়মাণ কারখানার প্রজেক্ট ইনচার্জ অলোক ভট্টাচার্য-সহ তিন সদস্যের একটি দল মেদিনীপুরে এসে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা এবং মেদিনীপুর সদরের মহকুমাশাসকের অমিতাভ দত্তের সঙ্গে দেখা করে গোটা পরিস্থিতি জানায়। জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “অভিযোগের প্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” বিষয়টি নিয়ে বিশদে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসকও।
শালবনিতে জিন্দলদের ইস্পাত কারখানার শিলান্যাস হয় ২০০৮-এর ২ নভেম্বর। কিন্তু শিলান্যাস সেরে ফেরার পথে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কনভয়ে মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ হয়। ওই ঘটনার জেরে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল। ২০১০-এ ফের কারখানার নির্মাণ শুরু হয়েছে। এখনও পরিকাঠামো তৈরির কাজই চলছে। দ্রুত ওই কারখানা চালু এবং কাজ দেওয়ার দাবিতে জমিদাতা পরিবারের প্রায় আড়াইশো সদস্য গত ১০ এবং ১৬ জুন প্রকল্প এলাকার সামনে বিক্ষোভ দেখান।
কারখানা সূত্রের খবর, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দু’দিনই বিক্ষোভের ছবি তোলেন আইটি কনসালট্যান্ট সত্যব্রত। তাতে বিক্ষোভকারীদের রাগ গিয়ে পড়ে তাঁর উপরে। ১০ জুনের বিক্ষোভের পরে কয়েকজন জমিদাতা তাঁকে কাজে আসতে নিষেধও করেন। ফের ১৬ তারিখ বিক্ষোভের ছবি তোলেন সত্যব্রত।
ছবি তোলার জন্যই যে সত্যব্রতকে মারধর করা হয়েছে, সে ইঙ্গিত স্পষ্ট জমিদাতাদের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া পরিষ্কার মাহাতোর কথায়। তিনি বলেছেন, “আমাদের বিক্ষোভ হলেই উনি লুকিয়ে-চুরিয়ে ছবি তুলতেন। আমরা তাতে আপত্তি জানিয়েছিলাম। ওঁকে কাজে আসতে নিষেধ করা হয়েছিল। উনি শোনেননি।” সত্যব্রতর দাবি, এ দিন কারখানা এলাকায় ঢোকার আগেই তাঁর মোটরবাইক ঘিরে ধরেন জমিদাতা পরিবারের জনা দশেক সদস্য। তাঁর অভিযোগ, “নিষেধ করা সত্ত্বেও কাজে এসেছি কেন, জানতে চেয়ে বেধড়ক মারল ওরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy