হাতে সময় দু’মাস। চলতি অর্থবর্ষে আগামী মার্চের মধ্যে জেলা পরিষদে পড়ে থাকা ৯৯ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। তাই সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের অর্থ- উন্নয়ন- পরিকল্পনা সংক্রান্ত স্থায়ী সমিতির বৈঠকে বেশ কিছু প্রকল্পে নতুন করে অর্থ বরাদ্দ করা হল। একইসঙ্গে খরচ করতে না পারায় প্রায় তিন কোটি টাকা ফিরিয়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থের অভাবে যেখানে প্রায়ই বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ থমকে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে, সেখানে বরাদ্দ অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে শাসকদলকে বিঁধছে বিরোধীরাও। তাঁদের অভিযোগ, জেলা পরিষদের গড়িমসির কারণেই বরাদ্দ অর্থ ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি, অধুনা বিজেপি নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ উদ্যোগী হলে এ ভাবে বরাদ্দ অর্থ ফিরিয়ে দিতে হত না। জেলা পরিষদের গড়িমসির ফলেই এটা হল।”
কয়েকদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও জেলাশাসকদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কাজ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তারপরে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে ওই উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠক হয়। বৈঠকে আবার নিজের অসন্তোষ গোপন করেননি জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ। সাফ জানিয়ে দেন, টাকা ফেলে রাখা যাবে না। ব্লকগুলোকে তাঁর পরামর্শ, খরচ করতে না পারলে টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, পড়ে থাকা অর্থ চলতি বা গত অর্থবর্ষের নয়, তার আগের। ঠিক কোন কোন খাতে টাকা পড়ে ছিল? জানা গিয়েছে, গ্রামীণ হাট তৈরি, রাষ্ট্রীয় শম বিকাশ যোজনা, ইন্দিরা আবাস যোজনা, লোধাদের বাড়ি তৈরি, দ্বাদশ অর্থ কমিশন, ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর থেকে পাওয়া টাকা, গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন (আরআইডিএফ) সহ বিভিন্ন সহ বিভিন্ন খাতেই কোটি কোটি টাকা পড়ে ছিল।
চলতি আর্থিক বছর শেষ হতে আর দু’মাসও বাকি নেই। পরিস্থিতি দেখে পড়ে থাকা অর্থ খরচ করতে তৎপর হয়েছে জেলা পরিষদ। কেমন? জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, সম্প্রতি অর্থ- উন্নয়ন- পরিকল্পনা স্থায়ী সমিতির বৈঠকে পড়ে থাকা টাকা থেকে বেশ কিছু প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। যেমন, বিনপুর- ২ ব্লকের শিলদা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং বিনপুর- ১ ব্লকের রামগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাজের জন্য ৬৬ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সবং গ্রামীণ হাসপাতালকে পরিবেশবান্ধব জেনারেটর কেনার জন্য ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গড়বেতা- ৩ ব্লকের মেটাডহরে পুকুর কাটার জন্য ১২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা এবং শালবনির আসনাবনিতে পুকুর কাটার জন্য ১১ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অন্যদিকে, শালবনিরই নোনাশোলে পুকুর পুনর্খননের জন্য ১২ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে প্রাণী সম্পদের একটি কিয়স্ক তৈরির জন্য ১৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি, জেলার ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতিকে ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ কেনা বাবদ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কয়েকটি রাস্তা সংস্কারের জন্যও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। জেলা পরিষদের এক তৃণমূল সদস্য মানছেন, “মুখ্যমন্ত্রী ধমক না- দিলে এ ভাবে অব্যয়িত অর্থ তড়িঘড়ি বরাদ্দ হয়তো হত না!” তাঁর কথায়, “এটা ঠিক, এই অব্যয়িত অর্থ আমাদের আমলে বরাদ্দ হয়নি। আগে হয়েছে। তবে অব্যয়িত অর্থ খরচ করার উদ্যোগ বছর খানেক আগে নিলেই ভাল হত!”
কেন তড়িঘড়ি অব্যয়িত অর্থ থেকে বেশ কিছু প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত? পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী বলেন, “অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে বেশ কিছু প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। যে খাতে টাকা ছিল, সেই খাতেই টাকা খরচ করা হচ্ছে।” কিছু টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও মানছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। তাঁর কথায়, “কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।” কেন? জেলা পরিষদের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “কিছু খাতে সামান্য কিছু টাকা থেকে গিয়েছিল। কম সময়ের মধ্যে এই টাকা ব্যয় করা অসম্ভব। আবার এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচও করা যাবে না। সেই ক্ষেত্রে পরে অডিটে আপত্তি উঠবে। সব দিক খতিয়ে দেখেই কিছু টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” ওই আধিকারিক জানান, “চলতি আর্থিক বছরে জেলা পরিষদের কাজ ভালই। ৪৬১ কোটি টাকা এসেছে। ৪৯৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অর্থাৎ, একশো শতাংশেরও বেশি খরচ হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অব্যয়িত অর্থ খরচ হবে তো? জেলা পরিষদের এক তৃণমূল সদস্যের স্বীকারোক্তি, “হয়তো সবটা হবে না। তবে ৯৯ কোটিকে যদি ১৫- ২০ কোটিতে নামিয়ে আনা যায়, সেটাই বা মন্দ কী! মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতোই পুরনো অর্থ দ্রুত খরচ করার সব রকম চেষ্টা চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy