গেটে তালা দিয়ে বিক্ষোভ টিএমসিপি-র একটি গোষ্ঠীর। —নিজস্ব চিত্র।
অশান্তির মাঝেই পরিচালন সমিতির জরুরি বৈঠকে খড়্গপুর কলেজের টিচার ইন চার্জ পদত্যাগ করলেন। পরিচালন সমিতির সভাপতিকে দেওয়া পদত্যাগ পত্রে তিনি লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত কারণেই এই সিদ্ধান্ত।’ হঠাৎ করে কী এমন ব্যক্তিগত সমস্যা তৈরি হল, যার জেরে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হল? টিচার ইন চার্জ অচিন্ত্য চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “অন্য কিছু নয়। ৫৮ বছর বয়সে এই পদের দায়িত্ব সামলাতে অসুবিধা হওয়ায় সরে এসেছি।”
খড়্গপুর কলেজে টিপিএমসিপি-র দ্বন্দ্বে অশান্তি নতুন নয়। বুধবারও শহর সভাপতি রাজা সরকারের গোষ্ঠীর সঙ্গে শহর সহ সভাপতি শেখ হায়দর আলির গোষ্ঠীর গোলমাল হয়। রাজা-বাহিনীর হাতে মার খেয়ে চিকিৎসাধীন স্বয়ং হায়দর ও তাঁর এক অনুগামী। আগেও হায়দর-রাজা বাহিনীর সংঘর্ষের বহু নজির রয়েছে এই কলেজে। অভিযোগ, সচিত্র পরিচয় পত্র নিয়ে কলেজে ঢোকা বাধ্যতামূলক করার পরেও বহিরাগতদের ঢোকা বন্ধ করতে পারেননি কলেজ কতৃর্পক্ষ।
ফলে প্রশ্ন উঠছে, অশান্তি বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েই কি এই সিদ্ধান্ত? না কি অন্য কোনও কারণ? এ ব্যাপারে কলেজের কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। বৃহস্পতিবার কলেজ পরিচালন সমিতির বৈঠকে অচিন্ত্যবাবুর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। সমিতির সভাপতি নির্মল হাজরা বলেন, “উনি ব্যক্তিগত কারণে টিআইসি-র পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত সদস্যেরা তা মেনে নিয়েছেন। তবে ৭ মার্চ পর্যন্ত অচিন্ত্যবাবুকেই দায়িত্ব সামলাতে বলা হয়েছে।” উল্লেখ্য, এ দিনের বৈঠকে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাজা ‘ঘনিষ্ঠ’ সানি দত্ত উপস্থিত ছিলেন না।
কলেজ চত্বরে বুধবারের গোলমালের ঘটনায় শহর টিএমসিপি সভাপতি রাজা সরকার-সহ ১২ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে হায়দরের অনুগামীরা। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রাতেই বাদল দাস নামে এক বহিরাগত যুবককে গ্রেফতার করে। পুলিশ কেন মূল অভিযুক্ত রাজাকে গ্রেফতার করছে না, এই প্রশ্ন তুলে এ দিন সকাল থেকে কলেজের গেটের বাইরে হায়দারের অনুগামীরা বিক্ষোভ দেখায়। কলেজের গেটে তালাও ঝুলিয়ে দেয় তারা।
বিক্ষোভে সামিল প্রথম বর্ষের অর্ণব বর্মন, তৃতীয় বর্ষের রাজেশ ভট্টাচার্যেরা বলেন, “কলেজে রাজা সরকারের নেতৃত্বে বহিরাগতরা ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। দুই ছাত্রকে মেরেছে। এরপরও পুলিশ মূল অভিযুক্তকে ধরেনি।” তাঁদের হুমকি, যতক্ষণ না মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার হবেন, ততক্ষণ এ ভাবেই ক্লাস বয়কট করে আন্দোলন চলবে।
এ দিনের এই গোলমালের জেরে কলেজে কোনও ক্লাস হয়নি। ক্লাস বন্ধ করে, গেট আটকে এমন বিক্ষোভ কী উচিত? টিএমসিপি-র কলেজ সভাপতি শেখ ইসতেয়াকের দাবি, ‘‘পড়ুয়ারা স্বতস্ফূর্ত ভাবে এই বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। পুলিশ, কলেজ কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিলেই বিক্ষোভ তুলে নেব।”
এমন বিক্ষোভ চলতে দেবেন? পরিচালন সমিতির সভাপতি বলছেন, “বুধবার যা হয়েছে, তা কাঙ্খিত নয়। কিন্তু, ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে যা শুরু হয়েছে, তা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ প্রসঙ্গে মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানিয়েছেন। তাঁরা চাইলে আচলাবস্থা কাটাতে ব্যবস্থা নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy