পথে-প্রতিবাদে: পুলিশের গাড়ি ঘিরে মহিলাদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
এলাকার যত্রতত্র চোলাই ভাটি। সঙ্গে বেআইনি মদের দোকানও। নেশায় বুঁদ বাড়ির পুরুষ থেকে স্কুল পড়ুয়ারাও। একে সংসারে অভাব, তার উপর প্রতিবাদ করলে স্বামী বা ছেলের হাতে মার খেতে হয় বাড়ির মহিলাদের। প্রশাসনের সাহায্য পেয়েও মেলেনি। এ বার তাই মদের ভাটি ভেঙে অবৈধ মদের দোকানে হানা দিলেন মহিলারাই। সঙ্গে চলল পথ অবরোধ।
বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কেশিয়াড়ির কাঞ্চনপুরে। ব্লকের সদর কেশিয়াড়ির কাঞ্চনপুর, তল কেশিয়াড়ি, গোপালপুর, দাসিসরিষা-সহ ৫টি গ্রামে অভিযান চালায় প্রমীলা বাহিনী। ভেঙে দেওয়া হয় বেআইনি পাঁচটি মদের ভাটি। তারপর মহিলারা যান কেশিয়াড়ি বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি বেআইনি মদের দোকানে। অভিযোগ, পানগুমটির পিছনের গুদামে মদ মজুত রেখে রমরমিয়ে কারবার চলছিল। গুদাম থেকে মদ বের করার দাবিতে তাই কেশিয়াড়ি-ভসরা রাজ্য সড়কে অবরোধ করেন মহিলারা। দীর্ঘক্ষণ অবরোধ চলার পরে পুলিশ এসে ওই দোকান মালিককে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে মহিলাদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল বচসা বাধে। তারপর গুদামের শাটার খুলে মদের বোতলের হদিস পায় পুলিশ। ক্ষুব্ধ মহিলারা বেশ কিছু বোতল ভেঙে দেন। পরে ওই দোকান মালিকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। আর ঘটনার ১২ ঘন্টা পরেও বিডিও গৌতম সান্যালের বক্তব্য, ‘‘ঘটনার কথা জানা নেই।’’
আখের চাষ ও সেই সূত্রে গুড়ের জনপ্রিয়তা রয়েছে কেশিয়াড়িতে। চোলাইয়ের রমরমা কারবারও এখানে বহু দিন ধরে চলছে। এর বিরুদ্ধে কয়েকমাস ধরে সরব হয়েছেন মহিলারা। এর আগে কেশিয়াড়ি ব্লকের খাজরা, হাতিগেড়িয়ায় মদের ভাটি ভেঙেছেন মহিলারা। কিন্তু ব্লক সদরে রমরমিয়ে চলা মদের ভাটিগুলি বন্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। মহিলাদের অভিযোগ, শুধু প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা নয়, সম্প্রতি ওই সব ভাটিতে দেখা যাচ্ছে স্কুল পড়ুয়াদেরও। তাই আর চুপ থাকতে পারেননি এলাকার মেয়ে-বৌরা। কাঞ্চনপুরের বাসিন্দা শেখ নজরুল বলছিলেন, “আমার বাড়িতেই প্রতি সপ্তাহে মহিলারা বৈঠকে বসেন। আসলে এখানে বেআইনি মদ ভাটির বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয় না। তাই মহিলারা পথে নেমেছেন। আমরা কিছু পুরুষও ওঁদের সমর্থন করছি।”
বুধবার রাতের অভিযানে সামিল কাঞ্চনপুরের সায়রা বিবি, ভারতী বারিক, লক্ষ্মী সিংহরা বলেন, “প্রতিদিন মদ খেয়ে এসে স্ত্রীদের মারধর করছে বাড়ির পুরুষরা। স্কুলের ছেলেরাও অবাধে মদ পাচ্ছে। প্রশাসন সব জেনেও নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। তাই নিজেরাই লড়াইয়ে নেমেছি।’’ ভারতী, সায়রারা জানান, অবরোধের পরে নুদ্রা শিটের দোকান থেকে ৫ পেটি মদ বেরিয়েছে। সেগুলি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে কেশিয়াড়ি পুলিশ অবশ্য দাবি করে, পেটি নয়, কয়েক বোতল মদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আর একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
কিন্তু ঘটনার ১২ঘন্টা পরে বিডিও-র কাছে কেন খবর নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্নের মুখে পড়েছে প্রশাসনের ভূমিকাও। বিডিও গৌতমবাবুর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘কেউ অভিযোগ করলে আবগারি দফতরে জানাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy