একজন এ বছর মাধ্যমিক পাশ করেছে। অন্য জন দশম শ্রেণির ছাত্রী। কন্যাশ্রী প্রকল্পে নাম রয়েছে দু’জনেরই। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রীটি আবার একাদশে ভর্তি না হলেও কন্যাশ্রীতে নাম পুনর্নবীকরণ করেছিল। আর তার পরেও ঘটা করে বিয়ের আয়োজন হয়েছিল দুই কন্যার।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ১ ব্লকের দু’টি আলাদা গ্রামে ওই দুই নাবালিকার বিয়ে অবশ্য ঠেকানো গিয়েছে। শুক্রবার বিয়ের দিনই গ্রামের লোকের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ, প্রশাসন, চাইল্ড লাইনের লোকজন গিয়ে পৌঁছয়। মেয়ে দু’টির অভিভাবকদের দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া হয়, ‘আঠারোর আগে কোনওভাবে মেয়ের বিয়ে দেব না।’ তবে এই দুই ঘটনা প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্পকে। অনেকেরই জি়জ্ঞাসা, দাসপুরের ঘটনা কি বিচ্ছিন্ন? না এমন প্রবণতা বাড়ছে?
ক’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের প্রকল্প কন্যাশ্রীকে কুর্নিশ জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। পুরস্কার নিতে নেদারল্যান্ডের দ্য হেগ শহরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে দিন মমতা বলেছিলেন, ‘‘যে ৪০ লক্ষ কন্যা এই প্রকল্পের সুবিধা পায়, এই পুরস্কার তাদেরই উৎসর্গ করলাম।’’
সে দিক থেকে দাসপুরের এই দুই নাবালিকাও কন্যাশ্রী পুরস্কারের অংশীদার। প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই যেখানে নাবালিকা বিয়ে ঠেকানো, সেখানে এই দুই কন্যাশ্রী কেন কাঁচা বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছিল? দশম শ্রেণির ছাত্রীটির বাবার ব্যাখ্যা, “ভাল পাত্র পেয়েছিলাম। তাই আর ভাবিনি।” মাধ্যমিক উত্তীর্ণ কিশোরীর বাবা বলছেন, “মেয়ে বড় হচ্ছে। তাই নিরাপত্তার জন্য বিয়ে দিচ্ছিলাম।” তাহলে কন্যাশ্রীতে নাম লিখিয়ে লাভ কী হল? দুই বাবারই জবাব, “কন্যাশ্রীতে মেয়েদের নাম আছে ঠিকই। কিন্তু অতসব চিন্তা করিনি।”
স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য চিন্তায়। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রীটির স্কুলের সহ-শিক্ষক তাপসকুমার পোড়েল বলেন, “মেয়েটি একাদশে ভর্তি হয়নি। তবে কন্যাশ্রীতে নতুন করে নাম তুলেছিল। তবে ওর বিয়ে হচ্ছে জানতাম না।’’ ওই ছাত্রীকে একাদশে ভর্তির ক্ষেত্রে এ বার স্কুল উদ্যোগী হবে বলেও জানান তিনি।
দাসপুরের এই দুই ঘটনাকে সামনে রেখে বিঁধতে ছাঁড়ছে না বিরোধীরা। এলাকার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সুনীল অধিকারীর কথায়, “প্রকল্পটি নিঃসন্দেহে ভাল। কিন্তু এর সাফল্য নিয়ে যত প্রচার হয়, সচেতনতা বাড়াতে তার কানাকড়িও হয় না। সে জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে।’’ যদিও দাসপুরের তৃণমূল বিধায়ক মমতা ভুঁইয়ার দাবি, “এগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কন্যাশ্রীতে বহু দরিদ্র পরিবারের ছাত্রী উপকৃত হচ্ছে।”
প্রশাসনও বিরোধীদের অভিযোগ মানতে নারাজ। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা থেকে শুরু করে দাসপুর ১-এর বিডিও ভাস্কর রায় বলছেন, “কন্যাশ্রীর সৌজন্যে গ্রামেগঞ্জে প্রায় আশি ভাগ বাল্য বিবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমরা নিয়মিত প্রচারও চালাচ্ছি।” চাইল্ড লাইনও পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছে, গত এক বছরে শুধু ঘাটাল মহকুমায় ৪২জন নাবালিকার বিয়ে রোখা গিয়েছে। ঘাটালে চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর প্রদীপ শাসমল বলেন, “আগের চেয়ে নাবালিকা বিয়ে কমছে। কোথাও এমন হলে স্থানীয়রাই খবর দিয়ে দিচ্ছে। এটাও তো সচেতনতা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy