Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Indian Railway

ফুল-পান সংরক্ষণে সঙ্কট, কিসান রেলে লাভ কী!

কিন্তু এতে আদৌ কি কৃষকেরা  সরাসরি উপকৃত হবেন— তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

দিগন্ত মান্না
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:৩৮
Share: Save:

কৃষি বিপণন ব্যবস্থাকে উন্নত করতে এ বারের বাজেটে নানা পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই তালিকায় অন্যতম কিসান রেল। সে ক্ষেত্রে রেলের বিশেষ বাতানুকূল কামরায় মাছ, মাংস, দুধ-সহ ফুল, পানের মত পচনশীল পণ্য রফতানি করা যাবে।

কিন্তু এতে আদৌ কি কৃষকেরা সরাসরি উপকৃত হবেন— তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। কারণ ফুল, পানের মতো পণ্য স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করা না গেলে কিংবা পরিবহণে বাতানুকূল গাড়ির ব্যবস্থা না করা গেলে শুধু কিসান রেলে কী লাভ হবে, প্রশ্ন তুলছেন কৃষকদেরই একাংশ।

ফুলচাষের মানচিত্রে এ রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। জেলার মধ্যে ফুলচাষে সেরা পাঁশকুড়া ব্লক। পাঁশকুড়ার পাশাপাশি কোলাঘাট ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও ফুলচাষ হয়। আর তমলুক, নন্দকুমার, মহিষাদল, রামনগর, নন্দীগ্রাম জুড়ে হয় পানের চাষ। কৃষিপণ্য পরিবহণের বাতানুকূল ট্রেন চালু হলে ব্যবসায়ীদের কিছুটা লাভ হলেও কৃষকদের কতখানি লাভ হবে প্রশ্ন সেখানেই।

এই জেলায় পান ও ফুল সংরক্ষণের মতো পর্যাপ্ত সরকারি হিমঘর নেই। পাঁশকুড়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ফুল সংরক্ষণের জন্য একটিমাত্র সরকারি হিমঘর থাকলেও সেটি খুব বড় নয়। ফলে, সেখানে খুব বেশি পরিমাণ ফুল রাখা যায় না। তাই যখন ফুলের চাহিদা থাকে না, তখন কৃষকদের একাংশ বেসরকারি হিমঘরে অত্যধিক ভাড়া গুনে ফুল রাখতে বাধ্য হন। একই অবস্থা পান চাষিদেরও। পাঁশকুড়া ও কোলাঘাটের ফুল সাধারণত কলকাতা বিমানবন্দর থেকে আকাশপথে পাড়ি দেয় ভিন্‌ রাজ্যে। কিন্তু পাঁশকুড়া থেকে কলকাতা বিমানবন্দর পর্যন্ত সরাসরি রেল যোগাযোগ না থাকায় এখানকার ফুলচাষিদের কাছে কিসান রেল লাভজনক হবে না বলে অভিমত কৃষকদের একাংশের। তাছাড়া জেলার ফুলবাজারগুলিতেও নেই কোনও বাতানুকূল গাড়ি যাতে ফুল, পান চাপিয়ে নিয়ে তোলা যাবে বাতানুকূল কিসান রেলে।

কৃষকদের একাংশের মতে, গ্রীষ্মকালে ফুল ও পান দ্রুত সংরক্ষণ করতে না পারায় দ্রুত সে সব শুকিয়ে যায়। তাই বাজারগুলিতে সরকারি উদ্যোগে বাতানুকূল পণ্য পরিবহণ গাড়ির ব্যবস্থা না করলে কিসান রেলের উদ্দেশ্য সফল হবে না। পাশাপাশি কৃষকদের দাবি, যেহেতু এ রাজ্য কৃষি নির্ভর, তাই প্রতিটি জেলায় সরকারি হিমঘর গড়ে তোলা জরুরি। পর্যাপ্ত হিমঘর থাকলে বাড়তি ফলনের সময় কম খরচে সংরক্ষণ করা যাবে ফুল, পানের মতো দ্রুত পচনশীল কৃষিপণ্য। না হলে আখেরে লাভ হবে শুধু ব্যবসায়ীদের। কারণ, বাড়তি ফলনের সময় সংরক্ষণের অভাবে ফুল, পানের দাম পড়ে যায়। সেই সুযোগে ব্যবসায়ীরা তা কম দামে কিনে ভিন্‌ রাজ্যে রফতানি করে দেন।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পানচাষি সমন্বয় সমিতির সভাপতি বিবেকানন্দ রায়ের মতে, ‘‘কিসান রেল চালু হলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। কিন্তু জেলার পানচাষিদের উপকার করতে হলে চাই সরকারি হিমঘর। কিন্তু এমন কোনও ঘোষণা তো বাজেটে শুনিনি।’’ একই সুরে সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাজেটে যে কিসান রেল চালু করার কথা বলা হয়েছে তা হবে পিপিপি মডেলের। অর্থাৎ ওই বাতানুকূল কামরায় পণ্য পরিবহণ খরচ সাধারণের তুলনায় অনেক বেশি হবে। তা ক্ষুদ্র ও পারন্তিক চাষিদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। এতে শুধু পণ্য ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। তাই কিসান রেল নামে কৃষক থাকলেwও আদতে এর সঙ্গে কৃষকদের উন্নয়নের কোনও সম্পর্কই নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railway Rail Budget
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE