Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
প্রতিষেধক-কাণ্ডে বার্তা স্বাস্থ্য দফতরের

কুকুর কামড়ে দিলে যান স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

কুকুর কামড়ানোর প্রতিষেধক নিয়েছে এমন চারজনকে নিজেদের খরচে প্রথমে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পরে সেখান থেকে কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করালেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

মৃত দীপঙ্কর জানা। যার মৃত্যু নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। নিজস্ব চিত্র

মৃত দীপঙ্কর জানা। যার মৃত্যু নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০২
Share: Save:

কুকুর কামড়ালে নির্ভয়ে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। সোমবার কাঁথি ৩ ব্লকের পাইকবাড় গ্রামে গিয়ে এমনই প্রচার চালালেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। শুধু প্রচারেই শেষ নয়। কুকুর কামড়ানোর প্রতিষেধক নিয়েছে এমন চারজনকে নিজেদের খরচে প্রথমে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পরে সেখান থেকে কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করালেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

কেন এই তৎপরতা? কাঁথি ৩ ব্লকের পাইকবাড় গ্রামের বাসিন্দা সাড়ে চার বছরের দীপঙ্কর জানাকে গত ১৬ জানুয়ারি কুকুরে কামড়ায়। খড়িপুখুরিয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিষেধক দেওয়া হয় তাকে। গত শুক্রবার ওই শিশু ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ভর্তি করানো হয় কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে রেফার করে দেন। শনিবার রাতে আইডি-তে মৃত্যু হয় তার। পরিবার থানায় অভিযোগ জানায়, চিকিৎসায় গাফিলতিতেই জ্বলাতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে দীপঙ্করের। ওই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর।

তদন্ত শুরুর পাশপাশি পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায় সে জন্য রবিবার রাতেই কাঁথি ৩ ব্লকে বিধুবাহিরী গ্রামে যান জেলার সহ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সমুদ্র সেনগুপ্ত। গত ১৬ জানুয়ারি খড়িপুখুরিয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কারা প্রতিষেধক নিয়েছিল সেই তালিকা জোগাড় করেন তিনি। রাতেই সমুদ্রবাবু পৌঁছেন তাদের বা়ড়ি। স্বাস্থ্য দফতরের গা়ড়ি করে রাতেই কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে সকলকে ভর্তি করান। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রবিবার রাতে অরুণ বেরা, পিয়ালি দাস, লালমোহন বেরা ও অমর সাহুকে ভর্তি করানো হয়েছে। এদের সকলের বাড়ি বিধুবাহিরী গ্রামে। অরুণ ও পিয়ালির বয়স পাঁচ বছর, অমরের সাড়ে পাঁচ, আর লালমোহনের বয়স সাতান্ন বছর। সোমবার সকালে ওই চারজনকে বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। এ ক্ষেত্রেও জেলা স্বাস্থ্য দফতর নিজেদের খরচে চারজনকে বেলেঘাটা হাসপাতালে পৌঁছে দেয়।

এ দিন সকালে খড়িপুখুরিয়া ও দেউলিবাড় গ্রামে যান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুষার আচার্য। সেখানকার গ্রামবাসীদের তিনি বার্তা দেন, আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। তুষারবাবু বলেন, “আমাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে এলাকার মানুষের ভয় কাটানো। আর সেদিনের প্রতিষেধক নেওয়া লোকেদের পাশে দাঁড়ানো। যাতে নতুন করে আর কোনও ক্ষয়ক্ষতি না হয়। পাশাপাশি শিশুমৃত্যুর তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দল এ দিন মৃত শিশু দীপঙ্করের বাড়িতে যায়। কিন্তু সে সময় দীপঙ্করের বাবা , মা, ঠাকুমা, জেঠু, জেঠিমা ও জেঠতুতো দাদা-দিদি সকলে প্রতিষেধক নিতে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে গিয়েছিলেন। দীপঙ্করের বাবা গোপাল বলেন , “আমার ছেলেতো চলে গেল। তবে এর পেছনে যারা দায়ী তাদের যেন কঠোর শাস্তি হয়।

বিধুবাহিরী গ্রামের বাসিন্দা চারজনের চিকিৎসা চলছে বেলেঘাটা আইডি-তে। এ দিন তাদের নানা পরীক্ষা হয়েছে। পিয়ালির বাবা জয়দেব বলেন “এ দিন চারজনের বিভিন্ন পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট এলে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত জানাবেন। দীপঙ্করের মৃত্যুর খবরে আমরা খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু পিয়ালি-সহ বাকি সকলে আপাতত সুস্থ রয়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE