Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

রাতভর ঘেরাও মহিলা রেঞ্জার

মেদিনীপুর বন বিভাগের চাঁদড়া রেঞ্জের চাঁদড়া বিটের হেতিয়াশোল গ্রামে এই ঘটনার খবর পেয়ে রবিবার রাতেই পুলিশ পৌঁছলেও ঘেরাও ওঠেনি।

কাটা গাছ নিয়ে যাচ্ছেন বন কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

কাটা গাছ নিয়ে যাচ্ছেন বন কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৭
Share: Save:

জঙ্গলে শাল গাছ কাটা হচ্ছে খবরটা এসেছিল রবিবার সন্ধ্যায়। খবর পেয়ে জঙ্গলে যান মহিলা রেঞ্জ অফিসার নিবেদিতা মাঝি। অন্ধকারেই কাটা গাছ উদ্ধার করে ফিরছিলেন তিনি। তখন দেখেন গ্রামের কয়েকটি বাড়ির উঠোনেও কাটা গাছ পড়ে রয়েছে। সেই গাছ উদ্ধারে গেলে বাধা দেন গ্রামবাসী। সেই অশান্তির জেরে সারা রাত নিবেদিতাদেবী ও বনকর্মীদের ঘেরাও হয়ে থাকতে হয়।

মেদিনীপুর বন বিভাগের চাঁদড়া রেঞ্জের চাঁদড়া বিটের হেতিয়াশোল গ্রামে এই ঘটনার খবর পেয়ে রবিবার রাতেই পুলিশ পৌঁছলেও ঘেরাও ওঠেনি। শেষে সোমবার সকালে এডিএফও পূরবী মাহাতো ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছলে ঘেরাও তুলে নে। কাটা গাছ উদ্ধার করে নিয়ে আসেন বনকর্মীরা।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হেতিয়াশোল গ্রামের কিছু বাসিন্দা জঙ্গল থেকে শালগাছ কেটে বাড়িতে এনেছিলেন পাড়ন (মাচা) তৈরি করতে।। তার উপর ধানের গাদা বসানো হয়। এক গ্রামবাসীর বক্তব্য, ‘‘আমরা জঙ্গলে থাকি। জঙ্গলের কয়েকটি গাছ কেটে কাজে লাগালে কি ক্ষতি হয়। আমাদের পূর্ব পুরুষরাও জঙ্গল থেকে গাছ কেটে বাড়ির কাজে লাগিয়েছে।’’ জঙ্গল দেখভাল ও পাহারা দেওয়ার জন্য স্থানীয়দের নিয়ে প্রতি গ্রামেই ‘বন রক্ষা কমিটি’ গড়ে তুলেছে বন দফতর। নিয়মমাফিক গাছ বিক্রির টাকার লভ্যাংশও পান কমিটির সদস্যরা। তাও কাটা গাছ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ায় হতবাক বনকর্তারা। ডিএফও মেদিনীপুর রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, ‘‘ওই গ্রামের বন রক্ষা কমিটি জঙ্গল পাহারা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। গ্রামের লোকেরাই যদি জঙ্গল থেকে গাছ কেটে নিয়ে যায় তা হলে জঙ্গল রক্ষা করা মুশকিল হবে। বন রক্ষা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে কড়া পদক্ষেপ করব।’’

হেতিয়াশোল গ্রামের বাসিন্দা এবং বন রক্ষা কমিটি-র সদস্য অমল মাহাতোর অবশ্য মত, গ্রামের লোকেরা নিজেদের প্রয়োজনে দু’-চারটে গাছ কাটবেই। এতে তাঁদের জ্বালানির সংস্থান হয়ে যায়। এটা কোনও ভাবেই আটকানো যাবে না। কিন্তু সারারাত এক মহিলা অফিসার-সহ বন কর্মীদের ঘেরাও করে রাখলেন কেন? অমলবাবুর জবাব, ‘‘গ্রামবাসী গাছ বোঝাই বন দফতরের গাড়িটি আটক করেছিল। কর্মীদের চলে যেতেই বলেছিল। কিন্তু কর্মীরা গাড়ি ছেড়ে যেতে রাজি হননি।’’

জঙ্গল বাঁচাতেই বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ‘রেঞ্জ লেভেল কো অর্ডিনেশন কমিটি’ গড়ে তুলেছে বন দফতর। সোমবার মেদিনীপুর রেঞ্জের কেশপুরের বাঘাশোল বিট অফিসে সেই কমিটির বৈঠকে ছিলেন ডিএফও, এডিএফও, জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ কাজি আব্দুল হামিদ, কেশপুরের বিডিও সৌরভ মজুমদার, পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ, কেশপুর থানার অফিসার-সহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি এবং পঞ্চায়েত সদস্যরা। এখানেও বন দফতরের প্রতিনিধিরা জানান, বাঘাশোল বিটের চড়কা গ্রামের পাশের জঙ্গল থেকে গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে, জঙ্গলের জমি দখল করে বাড়ি হচ্ছে। ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, ‘‘জঙ্গল দখলমুক্ত করতে সকলের সাহায্য চেয়েছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Villagers Ranger officer Gherao
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE