প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে পর্যটন সংস্থার কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র।
ঘটনা এক। বেলপাহাড়ির ঘাঘরায় পাথরের টিলায় ওঠার সময় পা ফস্কে পড়ে গিয়ে বেড়ানোটাই মাটি হয়ে গিয়েছিল সুজাতা গোস্বামীর। কলকাতার বাসিন্দা সুজাতাদেবীর ডান পায়ের গোড়ালি থেকে রক্ত বেরোতে দেখে গাড়ির চালক ও গাইড দু’জনেই তখন বিভ্রান্ত। গাড়িতে ‘ফার্স্ট এড বক্স’ ছিল না। ওই অবস্থায় দু’হাতে পা চেপে ধরে সুজাতাদেবীকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন অত্যাধিক রক্তপাতের ফলে তাঁর অবস্থা কাহিল।
ঘটনা দুই। কানাইসর পাহাড়ে ওঠার সময় আচমকা মাথা ঘুরে পড়ে যান সমীরকুমার বসু। ভুবনেশ্বরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সমীরবাবুর সুগারের রোগী। হঠাৎ করে তাঁর রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিক হারে কমে গিয়েছিল। গাড়ির চালক ও গাইড বুঝতেই পারেননি তাঁরা কী করবেন।
সুজাতাদেবী বা সমীরবাবুর মতো আর কোনও পর্যটক যাতে বিড়ম্বনায় না পড়েন, তা নিশ্চিত করতে গাড়ির চালক ও গাইডদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দেওয়া হল। শিবিরে ট্যুরিস্ট গাইড মিলন দে, অভিজিৎ মান্না, শুভদীপ কুণ্ডু, গাড়ির চালক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, দেবাশিস মাহাতো, শুভেন্দু মাহাতোরা শিখলেন, গাড়িতে ‘ফাস্ট এড বক্স’ থাকলে কী ভাবে স্টেরাইল গজ দিয়ে প্রেশার ব্যান্ডেজ করে দিলেই প্রাথমিক ভাবে রক্তপাত বন্ধ করা যায়। রক্তে আচমকা শর্করার পরিমাণ কমে গেলে রোগীকে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ানো হলে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
এতদিন জঙ্গলমহলের ভ্রমণ সংস্থাগুলির প্যাকেজে ‘ফার্স্ট এডের’ ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যায় পড়তে হত পর্যটকদের। এ বার অবশ্য চিত্রটা বদলাতে চলেছে। জঙ্গলমহলে বেড়ানোর সময় কোনও পর্যটক অসুস্থ হয়ে পড়লে ‘ফার্স্ট এড’ দেবেন ট্যুরিস্ট গাইড ও গাড়ির চালকরা। সরকারি উদ্যোগে এই প্রথমবার জঙ্গলমহলের বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থাগুলির কর্মী, গাইড ও গাড়ির চালকদের ফার্স্ট এড-এর প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সহযোগিতায় এই কর্মসূচিতে হাসপাতালের চিকিৎসকরা শেখাচ্ছেন, বেড়ানোর সময় হঠাৎ পর্যটকদের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা দুর্ঘটনায় জখম হলে তখন কী করা উচিত।
ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “ঝাড়গ্রামে এখন প্রচুর পর্যটক আসছেন। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভ্রমণ সংস্থাগুলি ফার্স্ট এডের গুরুত্ব বুঝেছেন। সংস্থাগুলির আবেদনের ভিত্তিতে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ফার্স্ট এড প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সভাঘরে প্রথম পর্যায়ে বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থাগুলির ২০ জনকে ফার্স্ট এডের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিত্সক প্রসূন ঘোষ, শল্য চিকিৎসক গৈরিক মাঝি, অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ মৃণালকান্তি সাহা, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক শুভঙ্কর গায়েন, দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ অরুণাভ চট্টোপাধ্যায়, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ অনিন্দ্যসুন্দর পাত্র-রা হাতে কলমে ও স্লাইড শো’র মাধ্যমে ফাস্ট এডের প্রশিক্ষণ দেন।
সরকারি চিকিৎসক প্রসূন ঘোষ, গৈরিক মাঝি, মৃণালকান্তি সাহাদের অবশ্য বক্তব্য, “প্রাথমিক শুশ্রূষার পরেই রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটা অত্যন্ত জরুরি।” ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “বেড়ানোর সময় সম্ভাব্য বিপদ ও তার প্রতিবিধান সম্পর্কে পর্যটন সংস্থার কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েক দফায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।” ঝাড়গ্রাম পর্যটন সংস্থার কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, “প্রাথমিক শুশ্রূষার বিষয়গুলি হাতে কলমে শিখে অনেক কিছু জানতে পারছি। এখন থেকে ট্যুরিস্টদের গাড়িতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ‘ফার্স্ট এড বক্স’ রাখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy