মাথায় পরচুলা। অভিযানে খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ। নিজস্ব চিত্র
রবিবারের সকাল। রেশন দোকানের সামনে উপভোক্তাদের ভিড়। সেই ভিড়ে দাঁড়িয়ে ‘অদ্ভুতদর্শন’ চুলের এক ব্যক্তি। হাতে বাজারের থলে। হাবভাবটা এমনই, যে তিনিও রেশন তুলতে এসেছেন।
দোকান খোলা থাকলেও সে সময় সেখানে কোনও কর্মী ছিলেন না। কিছুক্ষণ পরে ডিলার এসে রেশন সামগ্রী দেওয়া শুরু করেন। ওই ব্যক্তি নিচ্ছেলেন কেরোসিন। কিন্তু তা কম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাতেই ডিলারের সঙ্গ শুরু হয় কথা কাটাকাটি। ডিলার ওই ব্যক্তিকে বিডিও’র কাছে অভিযোগ জানাতে বলেন। এর পরেই মাথা থেকে নিজের ‘চুল’ একটানে খুলে ফেলে ক্রেতা পরিচয় দেন নিজের। জানান, তিনি জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ। ছদ্মবেশে পরিদর্শনে এসেছেন দোকানে।
এ দিন সকাল ১০টার দিকে পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে একটি রেশন দোকানে একাই হানা দেন সিরাজ। কেউ যাতে চিনতে না পারেন, সে জন্য পরেছিলেন পরচুলা। সিরাজ জানান, রামপদ মাজি নামে ওই রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে কম সামগ্রী দেওয়া, দোকান নির্দিষ্ট সময়ে না খোলা এবং কর্মীদের দোকানে সময় মতো না থাকার বিষয়ে অভিযোগ ছিল তাঁর কাছে। এ ব্যাপারে খতিয়ে দেখতে তাই এ দিন তিনি ছদ্মবেশে দোকানে গিয়েছিলেন।
বিশ্বনাথ দাস নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘‘এখানে ওজনে কম জিনিস দেওয়া হত। রেশন দোকানের কর্মীরা দোকান খুলে রেখে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে যেতেন। খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ যে এসেছেন নিজে, তা আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি।’’ স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, মাথার চুল দেখে সিরাজকে তাঁদের প্রথমে সন্দেহই হয়েছিল। তিনি যে এলাকার নন, তা-ও তাঁরা বুঝেছিলেন। কিন্তু কেন ওই ব্যক্তি রেশন দোকানে ঘুরঘুর করছেন, তা তাঁরা বুঝতে পারেননি। বিশ্বনাথ জানান, সিরাজের কাছে রেশন কার্ড ছিল না। তিনি গ্রাহকদের কাছে একাধিক কার্ড থাকলে তা চাইছিলেন। জানাচ্ছিলেন, এতে তাঁদের পরে ভালই হবে। শেষে এক গ্রাহক সিরাজকে কার্ড দিয়েছিলেন। উমা শাসমল নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘‘ওঁকে প্রথমে দেখে অচেনা লেগেছিল। ছদ্মবেশ খোলার পরে জানলাম, উনি খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ।’’
সিরাজ বলেন, ‘‘ছদ্মবেশে থাকায় কেউ আমাকে চিনতে পারেনি। ওই রেশন ডিলারকে এবারের মত সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’ কিন্তু পরচুলাটা পেলেন কোথা থেকে? সিরাজ জানান, একটি নাট্য সংস্থার কাছ থেকে সেটি নিয়েছিলেন তিনি। এ দিনের অভিযানের পরে অভিযুক্ত ডিলার রামপদ মাজি বলেন, ‘‘এমন ভুল শুধরে নেওয়া হবে।’’
সিরাজের এ দিনের ছদ্মবেশ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা সিন্টু সেনাপতি বলেন, ‘‘সস্তার প্রচার পেতে খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ এ সব নাটক করছেন। এভাবে কি রেশন দুর্নীতি আদৌ বন্ধ করা যাবে? এর বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy