আদিবাসী পড়ুয়াকে সম্প্রদায় তুলে কটূক্তির অভিযোগ ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে। প্রতীকী চিত্র।
ক’দিন আগেই আদিবাসী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধেও রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে অপমানের অভিযোগ উঠেছিল। গত বছর খড়্গপুর আইআইটির ইংরেজির অনলাইন ক্লাসে এক আদিবাসী পড়ুয়াকে অপমানজনক কথা বলার অভিযোগ উঠেছিল এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। এবার জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে টিএমসিপি-র এক নেতার বিরুদ্ধে আদিবাসী পড়ুয়াকে সম্প্রদায় তুলে কটূক্তির অভিযোগ উঠল। ঝাড়গ্রাম সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও জনসংযোগ বিভাগের ওই ঘটনায় অবশ্য পদক্ষেপ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত দুই ছাত্রকে তলব করে বিষয়টি মিটিয়ে দিয়েছে।
অভিযুক্ত ছাত্র টিএমসিপির জেলা সম্পাদক সৌরভ চক্রবর্তী ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও জনসংযোগ বিভাগের প্রথম সিমেস্টারের পড়ুয়া। প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার সোশ্যাল মিডিয়া দেখভালের দায়িত্বে থাকা দলের অন্যতম সদস্য সৌরভ এর আগে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেছেন। গত ২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় সিমেস্টারের ছাত্র সনৎসারি সরেনের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদ হয়। সূত্রের খবর, সনৎসারিকে ‘সিনিয়র’ হিসেবে সম্মান করেননি সৌরভ, এই নিয়েই বিতর্কের সূচনা। সৌরভ সনৎসারিকে সম্প্রদায় তুলে কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ। এরপর ৬ ডিসেম্বর উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন সনৎসারি। তিনি জানান, তাঁর সম্প্রদায় ও পরিবার নিয়ে কটূক্তি করেছেন সৌরভ। এই কারণে তিনি মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। প্রতিকার না হলে আদিবাসী নিপীড়ন প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথাও জানান ওই আদিবাসী ছাত্র। সনৎসারি বলছেন, ‘‘সৌরভ বয়সে বড় হলেও সাংবাদিকতা বিভাগের সিনিয়র আমি। আমাকে অসম্মান করে ও বলেছিল আদিবাসী হয়ে ইংরেজি বললেই স্মার্ট হওয়া যায় না।’’ সনৎসারির অভিযোগপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটির কাছে পাঠান উপাচার্য। কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যরা মঙ্গলবার সনৎসারি ও সৌরভকে মুখোমুখী বসিয়ে কথা বলেন। এরপর সৌরভ দুঃখপ্রকাশ করেন। উপাচার্য অমিয়কুমার পান্ডা বলেন, ‘‘সনৎসারির অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটির কাছে পাঠিয়েছিলাম।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রশান্তকুমার পণ্ডিত জানান, দুই পড়ুয়ার বক্তব্য শুনেছে অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি। সমস্যা মিটে গিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই দুই ছাত্রের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া হলেও বিতর্কের রেশ রয়েই গিয়েছে। সৌরভের দাবি, ‘‘আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি সম্প্রদায় তুলে কোনও কথা বলিনি। সেদিন (২ ডিসেম্বর) কেবল বলেছিলাম আমি ভাই নই। এরপরই ৪ ডিসেম্বর সনৎসারি আমাকে ফোন করে দাদা না বলার জন্য দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।’’ ঝাড়গ্রামের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টিতেএখনও পর্যন্ত কোনও ছাত্র সংগঠনের ইউনিট তৈরি হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের খবর, এই ঘটনার পিছনে টিএমসিপির দ্বন্দ্ব অনুঘটকের কাজ করেছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সিমেস্টারের পড়ুয়া তথা জেলা টিএমসিপির সহ-সভাপতি অনুনয় ভট্টাচার্য মঙ্গলবার বিকেলে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘উড়ে এসে জুড়ে বসা নয়, রীতিমতো খেলতে জানা খেলোয়াড় আমরা। সম্মানে আঘাত লাগলে কোনও ক্ষমা নয়, নিয়ম মেনেই শত্রুপক্ষকে দাবিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখি। তাই খেলা শেষ হয়েছে।’’ টিএমসিপির অন্দরে অনুনয় জেলা টিএমসিপির সভাপতি আর্য ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। অনুনয় নিজে বলছেন, ‘‘আমি কিছু বলব না। যা জানান নেতৃত্বের কাছে জানুন।’’ জেলা টিএমসিপির সভাপতি আর্য ঘোষ জানান, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও সংগঠনের ইউনিট খোলা হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পড়ুয়ার বিষয়টি নিয়ে সংগঠনগত ভাবে হস্তক্ষেপ করার জায়গা নেই। একই সঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘সৌরভ যেহেতু সংগঠনের পদে রয়েছেন তাই তাঁর কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে।’’
রাজনৈতিক টানাপড়েন জুড়ে গেলেও এই ঘটনায় মূল্যবোধের খামতির বিষয়টি আরও একবার উঠে এল বলে মনে করছেন সমাজতত্ত্ববিদ তথা ঝাড়গ্রাম রাজ মহিলা কলেজের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক দেবারতি চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, ‘‘তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির যুগেও বার বার এ ধরনের অভিযোগ ওঠার পিছনে প্রধানতম কারণ হল সামগ্রিক ভাবে আমাদের সচেতনতার অভাব। বৈচিত্র্যের মধ্যে একতার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ হয় না। আমাদের মধ্যে সেই মূল্যবোধের খামতি থেকে গিয়েছে। পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি, মূল্যবোধের শিক্ষাও প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy