সরেজমিন: খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্তারা। নিজস্ব চিত্র।
প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে গত ৩ অক্টোবর নারায়ণগড়ের মকরামপুরের প্রসূতি রেণুকা মুর্মু এসেছিলেন খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। ওই দিনই পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ সদ্যোজাতের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা যায়। স্টেবিলাইজেশন ইউনিটে রেখেও সুরাহা না হওয়ায় সদ্যোজাতকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ‘রেফার’ করা হয়।
২ অক্টোবর খড়্গপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পুরাতনবাজারের প্রসূতি রেশমা বিবি। তিনিও ৩ অক্টোবর পুত্রসন্তান প্রসব করেন। সদ্যোজাতের ওজন কম হওয়ায় নানা সমস্যা দেখা যায়। প্রয়োজন পড়ে নিওনেটাল কেয়ার। কিন্তু হাসপাতালে ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) নেই। তাই চিকিৎসকেরা ৪ অক্টোবর পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে ওই সদ্যোজাতকেও মেদিনীপুর মেডিক্যালে রেফার করেন।
এসএনসিইউ না থাকায় খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে বহুদিন ধরেই সমস্যা হচ্ছে। রেফার করতে হচ্ছে সঙ্কটজনক শিশুদের। তবে সমস্যা এ বার মিটতে চলেছে। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে এসএনসিইউ চালু করা নিয়েই শুক্রবার এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়ে গেল। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য দফতরের উপ-সচিব জলি চৌধুরী। ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা, হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্য সারেঙ্গি, অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল। হাসপাতালে ২০ শয্যার এসএনসিইউ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তা ও পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের পরিদর্শনের পরে সেই প্রক্রিয়া আরও এক ধাপ এগোল বলেই মনে করা হচ্ছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবু বলেন, “এই এসএনসিইউ আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি। কিন্তু হচ্ছিল না। এ বার ২০ শয্যার এসএনসিইউ খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা নিয়েই বৈঠক।”
খড়্গপুর হাসপাতালের উপর ১০টি ব্লক নির্ভরশীল। মাসে গড়ে তিনশো শিশু জন্মায় এখানে। সময়ের আগে শিশু প্রসব, কম ওজন, শ্বাসকষ্ট, জন্ডিসের মতো নানা সমস্যায় এসএনসিইউয়ের প্রয়োজন পড়লে মাসে গড়ে ৪০জনকে রেফার করতে হয়। ২০০৫ সাল নাগাদ ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল ও মেদিনীপুর মেডিক্যালের সঙ্গে খড়্গপুরেও এসএনসিইউ গড়ার জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু তখন ঠিক হয়, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের বদলে পুরসভা পরিচালিত দেবলপুরের আইপিপি হাসপাতালে ওই ইউনিট খোলা হবে। কিন্তু প্রথম পর্যায়ের টাকা অন্য খাতে খরচ হয়ে যায়। তারপর আর এসএনসিইউ খোলার উদ্যোগ দেখা যায়নি।
হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “এসএনসিইউ খুব জরুরি ছিল। এতে সদ্যোজাতদের পাশাপাশি আমরাও খুব উপকৃত হব।” বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ২০ শয্যার ইউনিট খোলা হবে শিশু বিভাগে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “আপাতত শিশু বিভাগের এক পাশে এসএনসিইউ চালু হবে। প্রকল্প পাঠানো হলে টাকা বরাদ্দ হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy