Advertisement
E-Paper

‘হুমকি সংস্কৃতি’ এ বারের ভোটেই চোখে পড়ল প্রথম

ডেমোক্র্যাটিক ভলান্টিয়ার বলে কমলা হ্যারিসের বেশ কিছু প্রচার সম্পর্কে অবহিত আমি। ভোটের কিছু সপ্তাহ আগে ঝড়ের গতিতে তখন প্রচার সারছিলেন হ্যারিস।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

মিতা পাল

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:৪৬
Share
Save

বেশ ঠান্ডায় আজ ঘুম ভেঙেছে মেরিল্যান্ডের। নভেম্বরের গোড়াতেই ঠান্ডা জাঁকিয়ে বসেছে দেশের বেশির ভাগ প্রদেশে। তবু এই শীত উপেক্ষা করেই সকাল থেকে ভোটের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন আমেরিকার মানুষ। রাজধানী ওয়াশিংটন লাগোয়া এই মেরিল্যান্ড প্রদেশের বেশির ভাগ মানুষই অবশ্য ‘আর্লি ভোট’ দিয়ে দিয়েছেন। পরিসংখ্যান বলছে, এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমেরিকার অন্তত ৭ কোটি মানুষ নিজেদের পছন্দের প্রার্থী বেছে ফেলেছেন। তবু অন্তত তার দ্বিগুণ সংখ্যক নাগরিক দেশের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট বাছতে ভোট দিচ্ছেন আজ। অনেক দিক থেকেই আমেরিকার এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তাৎপর্যপূর্ণ। ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান, যে প্রার্থীই ওভাল অফিসের দায়িত্ব হাতে নেবেন, ইতিহাস লিখবেনই। তবে এ বারের ভোটের অন্য আর এক তাৎপর্যও আছে। কারণ এ বারই প্রথম চোখে পড়ল এখানকার ‘হুমকি সংস্কৃতি’র প্রভাব।

ডেমোক্র্যাটিক ভলান্টিয়ার বলে কমলা হ্যারিসের বেশ কিছু প্রচার সম্পর্কে অবহিত আমি। ভোটের কিছু সপ্তাহ আগে ঝড়ের গতিতে তখন প্রচার সারছিলেন হ্যারিস। নির্বাচনী প্রচারের জন্য ঘুরছেন আমেরিকার প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামে গ্রামে। কাকে ভোট দেবেন? কমলাকেই তো? বহু আমেরিকান নাগরিকই তখন খোলসা করতে চাননি নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর নাম। আমেরিকার রাজনীতিতে যা বিরল। ডেমোক্র্যাট হোক বা রিপাবলিকান প্রার্থী, কিংবা নির্দল। কে কাকে ভোট দিচ্ছেন, তা নিয়ে এত দিন সত্যিই মাথাব্যথা ছিল না রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের। কিন্তু এ বারই চোখে পড়ল অন্য রকম কিছু। বেশির ভাগ নাগরিকই খোলসা করতে চাইলেন না কাকে ভোট দেবেন তাঁরা। কারণ? কমলার নাম বললে অন্য দলের কোপে পড়তে হতে পারে তাঁদের। ভিতরে ভিতরে সেই ভয়টাই পাচ্ছেন তাঁরা। মুখে বলতে চাইছেন না অবশ্য। অনেকেই বলেছেন, তাঁরা তখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, কার দিকে যাচ্ছে তাঁদের ভোট। বেশি খোঁচালে কেউ কেউ উত্তরে জানিয়েছিলেন, চার বছর আগের ক্যাপিটল হিল কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি চান না তাঁরা। রিপাবলিকান প্রার্থী তথা দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হেরে গেলে তাণ্ডব চালাতে পারেন তাঁর সমর্থকেরা। সেই ভয়েই পছন্দের প্রার্থীর নাম মুখে আনতে চাইছেন না অনেকে। এই ‘হুমকি সংস্কৃতি’ কিন্তু আমেরিকার মাটিতে বিরল।

ওয়াশিংটনের বাসিন্দা বাঙালিনি নন্দিনী সেন এক জন ওয়ার্ড কমিশনার। তিনি নিজে ক্যুইয়ার। জানালেন, তাঁর সঙ্গী জামাইকান, তাঁদের দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রবল উদ্বেগে তিনি। ট্রাম্পের মতো দক্ষিণপন্থী নেতা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফের ফিরে এলে তাঁর এই সমপ্রেমের বিয়েটাই বৈধ থাকবে কি না, প্রশ্ন তুলেছেননন্দিনী। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমার পরিবার এবং বন্ধুরা কি নির্বাসিত হবে?’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমেরিকানরা ঘৃণা ও ভয়ভীতিকে প্রতিহত করতে পারে কি না, এ বারের নির্বাচনের ফল সেটাই দেখাবে।’’

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরাও অবশ্য জানাচ্ছেন, ভোটারদের মনে এই ভয় খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। কম ব্যবধানে হারলে ট্রাম্প নিজের পরাজয় স্বীকার করবেন না বলেই ধরে নিচ্ছেন অনেকে। সে ক্ষেত্রে শুধু ক্যাপিটল কাণ্ডের পুনরাবৃত্তিই নয়, দেশের নানা প্রান্তে দাঙ্গা বাধার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বছরের শুরুতে ছবিটা এ রকম আদৌ ছিল না। আশি পেরোনো জো বাইডেন প্রথম থেকেই ছিলেন বেশ কিছুটা নড়বড়ে। তাঁর নিজের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অধিকাংশ নেতা-নেত্রীই ধরে নিয়েছিলেন, এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাসতে হাসতে জিততে চলেছেন বাইডেনের রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ তথা আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে জুলাইয়ের শেষে যখন বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ালেন, নিমেষে ছবিটা পাল্টাতে শুরু করেছিল। বিভিন্ন সমীক্ষায় ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করেছিল। অগস্টের শুরু থেকে কমলার ঝুলিতে অনুদানও পড়তে শুরু করল প্রবল ভাবে। ডেমোক্র্যাট কর্মী-সমর্থকেরাও নতুন করে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ার শক্তি পেলেন।

আজ সকাল সকাল ভোট দিতে বুথে গিয়েছিলেন রিপাবলিকানদের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জে ডি ভান্স। সিনসিন্যাটির সেন্ট অ্যান্টনি গির্জায় ছিল তাঁর বুথ। স্ত্রী উষা, সন্তানদের নিয়ে ভোট দিয়ে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ভান্স। বললেন, ‘‘আমি জানি, এ ভাবে আগে থেকে কিছু বলা যায় না। তবে এই দৌড় নিয়ে আমি আশাবাদী। জয় নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’’ প্রথম বার ভোট দিচ্ছেন ফ্লরিডার বাসিন্দা, বছর কুড়ির ড্যাভিয়েনা পোর্টার। তাঁর আদি বাড়ি পুয়ের্তো রিকোয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে পুয়ের্তো রিকো নিয়ে বেশ কিছু কুমন্তব্য করেছিলেন। তবে সে সবে আমল না দিয়ে ট্রাম্পকেই ভোট দিয়েছেন বলে জানালেন তরুণী। বললেন, ‘‘আমি জানি উনি অনেক কিছু করতে পারেন।’’

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে সমাজমাধ্যমে ভোটারদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এক্স হ্যান্ডলে ওবামা লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এ দেশের বেশির ভাগ মানুষই সৎ, সজ্জন এবং উদার। ফলে তাঁরা যাঁকেই ভোট দিন, ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান বা নির্দল, তাঁরা চাইবেন তাঁদের সেই আদর্শ এবং মূল্যবোধগুলি তাঁদের রাজনৈতিক মতামতের মধ্যেও প্রতিফলিত হোক’।

শেষ মুহূর্তের প্রচারে কমলার নাম নিয়ে তাঁকে বুদ্ধিহীন আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে কমলা অবশ্য বুদ্ধি করেই ফিলাডেলফিয়ার শেষ প্রচার সভায় ট্রাম্পের নামই মুখে আনেননি। বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় একদম শেষে এসে সেই শুরুর কথাই বলতে পারি আমরা। সেটা হল আশাবাদ।’’ ভোটারদের কাছে ট্রাম্প যুগ শেষ করার আবেদনও জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প নিজে বহু মামলায় অভিযুক্ত হয়েও ভোট দেওয়ার অধিকার হারাননি। জিতলে তাঁর প্রেসিডেন্টের গদিতে বসাও আটকাবে না। সাতটি ‘সুইং স্টেট’-এর ফলাফল জানতে অন্তত অপেক্ষা করতে হবে ভারতীয় সময় আগামী কাল দুপুর পর্যন্ত।

(লেখক অবসরপ্রাপ্ত তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী ও ডেমোক্র্যাট পার্টির ভলান্টিয়ার)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump Kamala Harris US Presidential Election 2024

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}