এখন এমনই হাল শঙ্করপুর ফুড পার্কের। ছবি: সোহম গুহ।
দেশের প্রথম ফুডপার্ক হতে পারত শঙ্করপুরে। দশ বছর আগের কথা। বাম আমলে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫ একর জমির উপর তৈরি হয়েছিল ফুডপার্ক। উদ্বোধনও হয়েছিল ঘটা করে। কিন্তু চালু করা যায়নি আজও। এমনকী পাঁচ বছর আগে পড়ে থাকা ফুডপার্কের জমিতে এবং পরিত্যক্ত ভবনে মেরিন কলেজ তৈরির বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিল মৎস্য দফতর। আইনি জটিলতায় তাও বিশ বাঁও জলে।
আন্তর্জাতিক বাজারে রাজ্যের সামুদ্রিক মাছের রফতানি বাড়ানো, পরিকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের উপর জোর দিতেই রাজ্য মৎস্য দফতরের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য নিগম ২০০৬ সালে ফুডপার্কটি গড়ে তুলেছিল। উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। বাম জমানার পর রাজ্যে পট পরিবর্তন হয়েছে। এমনকী নতুন তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় পর্যায়ের শাসন চলছে। তবু শিঁকে ছেড়েনি শঙ্করপুরের কপালে।
শুরুতে প্রতিশ্রুতির ঘাটতি ছিল না। ফুডপার্কের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজ্যের তৎকালীন মৎস্যমন্ত্রী কিরণময় নন্দ জানিয়েছিলেন, শঙ্করপুরের এই ফুডপার্কটিকে আইএসও স্বীকৃতি প্রাপ্ত দেশের প্রথম ও একমাত্র ফুডপার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ জন্য এখানে মাছের নিলামকেন্দ্র, প্রি-প্রসেসিং শেড, প্যাকেজিং সেন্টার, মাছের গুণগত মান নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা ছাড়াও, বরফকল, জলের ট্যাঙ্ক, হিমঘর এমনকী আধুনিক গবেষণাগারও গড়ে তোলা হবে। সে সব কিছুই হয়নি। শুধু বিশাল জমির উপর দাঁড়িয়ে আছে পরিত্যক্ত ভবনটি।
ফুডপার্ক কেন চালু করা গেল না? তা নিয়েও নানা মহলে নানা মত। পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘যে মৎস্যজীবীদের জন্য শঙ্করপুরে ফুডপার্ক গড়ে তোলা হয়েছিল, তাঁরাই আসতে না চাইলেন না। ফলে ফুডপার্ক চালু করা সম্ভব হয়নি।’’ এমনটা যে হতে পারে, সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন রামনগরের প্রাক্তন বাম বিধায়ক স্বদেশ নায়েক। ফুডপার্ক চালু না-হওয়ার জন্য রাজ্যের মৎস্য দফতর ও পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য নিগমের অদূরদর্শীতাকেই দায়ী করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘শঙ্করপুর মৎস্যবন্দরের পাশেই দিঘা মোহনাতে সামুদ্রিক মাছের বিশাল পাইকারি বাজার। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালনায় বহুদিন ধরেই সেই বাজার চলে। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার মাছ রফতানি হয়। দিঘা মোহনার মাছের আড়তদাররা সেই নিশ্চিত বাজার ছেড়ে ফুডপার্কের অনিশ্চয়তার মধ্যে যেতে রাজি হননি।”
তবে ফুডপার্ক চালু করতে না পেরে ওই ভবনে একটি মেরিন কলেজ গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মৎস্য উন্নয়ন নিগম সূত্রে খবর, ২০১১ সালে ওই জায়গায় পি পি মডেলে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিও হয়। তারপরেও কেটে গিয়েছে পাঁচ বছরে, মেরিন কলেজও চালু হয়নি। জমি সংক্রান্ত সমস্যায় আটকে যায় কলেজ গড়ার প্রক্রিয়া। জানা গিয়েছে, ওই বেসরকারি সংস্থার নিজস্ব জমি না-থাকায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। সে সমস্যা সমাধানে মৎস্য নিগমের একটি ট্রাস্ট তৈরি করে জমি হস্তান্তরের চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু রাজ্য ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতরের আপত্তিতে তা ব্যর্থ হয়। ওই বেসরকারি সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করার বিষয় থেকে তারা এখনও সরে আসেনি। বরং জমি না-পেয়ে মৎস্য উন্নয়ন নিগমের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য নিগমের বতর্মান ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমিতাভবাবুও মামলার কথা স্বীকার করে দাবি করেছেন, ‘‘ওই জমিতে মেরিন কলেজ করার বিষয়েই ওই বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল নিগমের। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার জন্য নয়।” এর থেকে বেশি কিছু বলতে রাজি নন তিনি।
দু’পক্ষের কাজিয়ায় একটা বিষয় পরিষ্কার— শঙ্করপুরে ফুডপার্ক হয়নি, মেরিন কলেজও হচ্ছে না। সাত কোটির ফুডপার্কটি পড়ে আছে অন্তহীন অপেক্ষায়। ভবিষ্যৎ কেউ জানে না। খোদ পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য উন্নয়ন নিগমও না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy