Advertisement
E-Paper

বাড়ছে ক্ষোভ, বাড়তি দায়িত্ব নিতে নিমরাজি অনেক শিক্ষক

শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ১,৭০০ জন চাকরি হারিয়েছেন। এরপরে স্বাভাবিকভাবেই স্কুলে স্কুলে সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:০৯
Share
Save

চাকরিহারা শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের অভাব পূরণে বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে স্কুলের বাকিদের। বাড়ছে বিড়ম্বনা। অনেকে বাধ্য হয়ে বাড়তি কাজ করতে রাজি হলেও কেউ কেউ চাপ নিতে নিমরাজি। এই আবহে বুধবার থেকে স্কুল খুললে পঠনপাঠন-সহ মূল্যায়নের খাতা কীভাবে দেখা হবে তার কূলকিনারা পাচ্ছেন না অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে টানা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ঐক্য মঞ্চের চাকরিহারা শিক্ষকরা।

শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ১,৭০০ জন চাকরি হারিয়েছেন। এরপরে স্বাভাবিকভাবেই স্কুলে স্কুলে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। পঠনপাঠন কী ভাবে চলবে, তা ভেবেই হিমশিম খাচ্ছে অনেক স্কুল। কসবায় আন্দোলনরত চাকরিহারাদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানো ও লাথি মারার ঘটনার পরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। এই বিষয়ের ‘প্রতিবাদে’ও কাজ করতে চাইছেন না অনেক শিক্ষক, শিক্ষিতা। অনেকে অবশ্য ইচ্ছে না থাকলেও বাধ্য হয়ে বাড়তি চাপ নিচ্ছেন।

মেদিনীপুর সদর ব্লকের অন্তর্গত চুয়াডাঙ্গা হাইস্কুলের সহ শিক্ষক সুদীপকুমার খাঁড়া বলছেন, ‘‘স্কুলে যে শিক্ষকেরা রয়েছেন, তাঁদের উপর বাড়তি ‘চাপ’ তো আসছেই। কাউকে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে। কাউকে অতিরিক্ত খাতা দেখতে হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যে কাজটা ২০ জন করতেন, সে কাজটা যখন ১৫ জনকে করতে হবে, তখন সেই ১৫ জনের উপর বাড়তি ‘চাপ’ তো আসবেই। বিশেষ করে যে স্কুলে শিক্ষক এমনিতেই কম ছিলেন, তারমধ্যেও কয়েকজনের চাকরি গিয়েছে, সেখানে সমস্যা আরও বেশি।’’ মেদিনীপুর সদর ব্লকের ওই স্কুলের চারজন শিক্ষক চাকরি খুইয়েছেন।

গড়বেতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘‘চাকরিহারাদের অভাব পূরণে অন্যান্যদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। বুধবার থেকে স্কুল খুললে বোঝা যাবে বাড়তি চাপ তাঁরা যথাযথভাবে পালন করছেন কি না।’’ সবংয়ের মশাগ্রাম শিবানন্দ বিদ্যাপীঠে আগেই শিক্ষকের পদ শূন্য ছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ওই স্কুলের তিন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। ফলে এখন সবমিলিয়ে এখন ৮ জন শিক্ষককে সামলাতে হবে স্কুল। সেখানকার শিক্ষক শান্তুনু অধিকারীর ক্ষোভ, ‘‘এখন তো সমাজে আমাদের মতো শিক্ষকদের কোনও সম্মান নেই। গত কয়েক বছরে ঘেউ ঘেউ ডাক সহ বহুভাবে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। এ বার বুকে লাথির স্ট্যাম্প দিয়ে দেওয়া হল। তার পরে যদি অতিরিক্ত চাপ নিতে হয় তাহলে সেই মানসিকতা কি থাকে!’’ ঘাটালের লছিপুর হাই স্কুলের শিক্ষক সৌরভ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘শিক্ষকদের দিয়ে ভোটের যাবতীয় কাজ করাবে সরকার। অথচ কোনও দায়িত্ব নেবে না। এখন তো স্কুলে স্কুলে নানা বাড়তি চাপ শিক্ষকদেরই নিতে হচ্ছে। উল্টে সেই শিক্ষকদেরই পুলিশ লাথি মারছে।’’

দাঁতনের মনোহরপুর রাজা রামচন্দ্র বিদ্যানিকেতনের চারজন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। পরীক্ষা হয়ে গেলেও এখনও খাতা দেখা বাকি সেখানে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার শাসমল বলেন, ‘‘এখনও কিছু স্পষ্ট পরিকল্পনা হয়নি। তবে গরমের ছুটির আগে পরীক্ষার খাতা দেখা শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না।’’ দাঁতন হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আগেই এই স্কুলে পরীক্ষা ও খাতা দেখার পর্ব মিটে গিয়েছিল।

চাপ বাড়ছে ঝাড়গ্রামেও। দেবীচক দ্বারকানাথ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ মহাপাত্র বলেন, ‘‘আমাদের কলা বিভাগ আছে। সেখানে দর্শন ও বাংলার কোনও শিক্ষক রইল না। পরীক্ষার খাতা কে দেখবে এটাও এখন বড় ব্যাপার। শিক্ষাকর্মী না থাকায় দরজা লাগানো, ঘণ্টা বাজানোর মতো কাজও এখন শিক্ষকদের করতে হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}