বিশালাকার প্রাণীটির কালো কুচকুচে শরীরে বিঁধে রয়েছে ঘুমপাড়ানি তির। তা শরীরে নিয়েই দিব্যি ধান খেত পেরিয়ে ছোট চা বাগানের মাঝখান দিয়ে হাঁটছিল সে। কখনও বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে হেঁটে গৃহস্থের ঘরে ঢুকল। ঘুমপাড়ানি তির খেয়েও ঘণ্টাখানেক লোকালয়ে দাপিয়ে বেড়ালো দু’টি বাইসন। রবিবার জলপাইগুড়ি শহরের কাছে রংধামালি, পাতকাট এলাকায়। জঙ্গল থেকে বসতিতে ঢুকে পড়া সেই বাইসনের হামলায় এ দিন মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধার। জখম হন অন্তত পাঁচ জন। তাঁদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি দু’জন। বিকেলে খবর পাওয়া যায়, ঘুমপাড়ানি তিরে কাবু একটি বাইসনের মৃত্যু হয়েছে।
রবিবার সকাল সাতটা থেকে জলপাইগুড়ি শহর ঘেঁষা রায়পুর চটা বাগান, রংধামালি, পাতকাটা এলাকাতে দাপিয়ে বেড়ায় জোড়া বাইসন। এর আগে জলপাইগুড়ি শহরে বুনো হাতি ঢুকে পড়েছিল। চিতাবাঘ, গন্ডারও ঢুকেছিল। শহরের এত কাছে বাইসনের চলে আসা এই প্রথম। বন দফতরও এই ঘটনাকে ‘বিরল’ বলেছে। কারণ জলপাইগুড়ি শহরের সবচেয়ে কাছাকাছি রয়েছে বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গল। সেখানে বাইসনের খুব একটা দেখা এত দিন মেলেনি।
বৈকুণ্ঠপুরের বিভাগীয় বনাধিকারিক রাজা এম বলেন, “এটি সত্যি বিরল ঘটনা। কী ভাবে বাইসন শহরের কাছে চলে এল, তা দেখা হচ্ছে। এমন ঘটনা যাতে না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় করা হচ্ছে।”
রবিবার সকাল সাতটা নাগাদ উঠোন ঝাড় দিচ্ছিলেন রায়পুরের এক বৃ্দ্ধা শ্রমিক। তার সামনে চলে আসে একটি বাইসন। কিছু বোঝার আগেই গুঁতিয়ে দেয় বৃদ্ধাকে। স্থানীয় সূত্রে খবর, উঠোনেই লুটিয়ে পড়েন দেউমনি বরাইক (৬৩)। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। দেউমনি নাতি উত্তম বরাইক বলেন, “বাইসনটি এসেই ঠাকুমাকে গুঁতিয়ে দেয়। এত বড় আকার দেখে প্রথমে অনেকেই ভেবেছিল, বোধহয় বাগানে হাতি ঢুকে পড়েছে।”
কখনও বাগানে, কখনও গ্রামে ঢুকে তাণ্ডব চালায় দু’টি বাইসন। ভেঙে দেয় ঘর। জখম করে অনেককে। একটি গরুকেও গুঁতিয়ে দেয়। জলপাইগুড়ি, গরুমারা, সুকনা-সহ বন দফতরের চারটি স্কোয়াড পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। দুপুর বারোটা নাগাদ একটি বাইসনকে ঘুমপাড়ানি তির ছোঁড়া হয়। শরীরে সেই তির নিয়েই দিব্যি বাইসনটি ঘুরে বেড়ায়। ঘরের টিন ভেঙে ফেলে। এক বার হাঁটতে হাঁটতে মাটিতে শুয়ে পড়ে একটি বাইসন। বনকর্মীরা দড়ি দিয়ে চার পা বেঁধে ফেলে। কিছুক্ষণ নিস্তেজ হয়ে শুয়ে থাকার পরেই ঝটকা দিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। পলকে সব বাঁধন ছিঁড়ে যায়। ফের বাইসনটি তেড়ে যায় জড়ো হওয়া ভিড়ের দিকে। এ ভাবেই চলতে থাকে ঘণ্টাখানেক।
বাইসন দেখতে জড়ো হওয়া ভিড় সরাতে বনকর্মীদের লাঠিও চালাতে হয়। বন দফতর সূত্রে খবর, জঙ্গল থেকে বার হয়ে প্রথমে ভোর চারটে নাগাদ বেলাকোবার একটি গ্রামে ঢোকে বাইসন দু’টি। সেখান থেকে হেঁটে মাঠ, খেত, পিচরাস্তা পার হয়ে সাতটা নাগাদ জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া রংধামালিতে পৌঁছয় দুই বুনো।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)