পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম দুই জেলায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখেছেন তাঁরা। শীর্ষ আদালত নিয়োগ বাতিল করায় তাঁরা হয়ে গিয়েছেন ‘অযোগ্য’। সেই ‘অযোগ্য’দেরই একাংশ তাঁদের মূল্যায়ন করা উত্তরপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ঘাটালের একটি বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার আক্ষেপ, “আমি ইংরেজির খাতা দেখে জমা দিয়েছি। অনেকেই ভাল লিখেছিল। ভাল নম্বরও পেয়েছে। জানি না আমার এই মূল্যায়নের ভবিষ্যৎ কী?’’
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কর্তা চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য শুক্রবার স্বীকার করেছেন, উচ্চ মাধ্যমিকে খাতা দেখা নিয়ে সমস্যা হতে পারে। কারণ, উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা যাঁরা দেখছেন তাঁদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শিক্ষক বাতিলের তালিকায় রয়েছেন।
ছিলেন অঙ্কের শিক্ষক। দেখছিলেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার অঙ্কের খাতা। গড়বেতার শতবর্ষ উত্তীর্ণ ওই স্কুলের শিক্ষক চাকরিহারা হয়েছেন। প্রথম দফার খাতা দেখা প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরের সপ্তাহেই জমা দিতেন। ফোনে ওই শিক্ষক বললেন, ‘‘আমার যে ক'টা খাতা দেখা বাকি আছে, তা দেখে পদ্ধতি মতো জমা দিয়ে আসব।’’ নারায়ণগড় এলাকার চাকরিহারা এক শিক্ষক বলেন, ‘‘মানসিক অবস্থা ঠিক নেই। কী ভাবে খাতা দেখব।
চাকরিহারা কেশপুরের একটি স্কুল শিক্ষিকা বলছেন, ‘‘কিছু খাতা দেখা বাকি আছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে, ফেরত দিয়ে দেব।’’ কৃষ্ণেন্দু দত্ত নামে এক শিক্ষক বলছেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা আর দেখব না। খাতা ফেরতও দেব না!’’ ঘাটালের এক শিক্ষক বলছিলেন, “উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা দেখছি। এই খাতা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ। এই অবস্থায় দ্রুত কোনও নির্দেশ জারি হলে ভাল হয়।’’
বিনপুরের আঁধারিয়া রাজবল্লভ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানের শিক্ষিকা ঝুমা প্রধান চাকরি হারিয়েছেন। উচ্চ মাধ্যমিকের পুষ্টিবিজ্ঞানের দেড়শো খাতা দেখেছিলেন। তিনি বলছেন, ‘‘খাতা দেখে প্রধান পরীক্ষকের কাছে জমা দিয়েছি।’’ উচ্চ মাধ্যমিকের পাশাপাশি একাদশের উত্তরপত্র মূল্যায়নেও দায়িত্বে ছিলেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। এখন কী ভাবে স্কুলের সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে তা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। ডেবরার ব্রাহ্মণশাসন হাইস্কুলের পাঁচ জন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অসীমকুমার পাল বলেন, ‘‘ওই ৫ জন শিক্ষকের সকলেই একাদশের খাতা দেখছিলেন। এখন তাঁদের চাকরি চলে যাওয়ায় আমরাও বিপদে পড়ে গেলাম। কারণ আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে একাদশের ফল পোর্টালে আপলোড করতে হবে।’’
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মনিটরিং কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রামজীবন মান্ডি বলেন, ‘‘যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিকের খাতাপত্র দেখছেন, তাঁরাই দেখবেন। তাঁরা যে আর উত্তরপত্রের মূল্যায়ন করতে পারবেন না, এমন কোনও নির্দেশ বা আদেশ আসেনি।’’ একই কথা বলছেন ঝাড়গ্রাম জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শক্তিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায়ও।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)