আটকে থাকা শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
বকেয়া মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে বুধবার দুপুরে একটি প্রাথমিক স্কুলে কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তার কিছুক্ষণ পরেই সেই স্কুলে ঝুলল তালা। কারা তালা ঝোলালো তা প্রকাশ্যে না এলেও বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তালাবন্দি থাকলেন ছয় জন শিক্ষক শিক্ষিকা। সন্ধ্যা ৬টার পরে স্কুলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ। ঘাটালের মনোহরপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মনোহরপুর বিবেকানন্দ প্রাথমিক স্কুলের ওই ঘটনায় সরব হয়েছে শিক্ষক সংগঠনও।
বকেয়া ডিএ এবং স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন চলছে। যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ নাম দিয়ে আন্দোলনে নেমেছে সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের ২৮টি সংগঠন। তারাই বুধবার দুটো থেকে চারটে পর্যন্ত কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল। বুধবার ঘাটাল ব্লকের মনোহরপুর বিবেকানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সেই ডাকে সাড়া দিয়েই কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জানা গিয়েছে, ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট ছয় জন শিক্ষক। বুধবার স্কুল খোলার পরে পাঁচ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত ভাবে কর্মবিরতির পালনের আবেদন জানান। প্রধান শিক্ষক ওই আবেদন স্কুল পরিদর্শকের (ঘাটাল চক্র) হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট করেন। তারপরে দুটো পর্যন্ত নিয়ম মেনে ক্লাস হয় ওই স্কুলে। দেওয়া হয় মিড ডে মিলও। তারপরে শিক্ষকদের মুখে কর্মবিরতির খবর শুনে পড়ুয়ারা স্কুল থেকে বাড়ি চলে যায়। এরপরেই শুরু হয় গোলমাল।
কর্মবিরতিতে যোগ দেওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, তাঁরা স্কুলেই ব্যাজ পরে বসেছিলেন। কিছু পরে এক মহিলা এসে স্কুল ছুটির কারণ জানতে চান। তারপরে স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান জয়দেব দোলই স্কুলে আসেন। তিনি স্কুল ছুটি দিয়ে কর্মবিরতির কারণ জানতে চান। বিকেল চারটের পরে স্কুলের মূল গেটে তালা ঝুলতে দেখা যায়। সেই সময় ফাঁকা থাকলেও কিছু পরে গ্রামবাসীদের সেখানে এসে ভিড় করেন। সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত তালাবন্দি থাকেন ছয় শিক্ষক-শিক্ষিকা। প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ পাল বলেন, “স্কুলের বাকি শিক্ষকেরা আমার কাছে কর্মবিরতির আবেদন করেছিলেন। স্কুলের গ্রুপে সেটি আমি পোস্টও করি। দুটো পর্যন্ত যথারীতি পঠনপাঠন হয়েছে। মিড ডে মিল হয়েছে। তারপরে কর্মবিরতি শুরু হয়।” তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎ চোখে পড়ে স্কুলের গেটে তালা ঝুলছে। কারা তালা দিল তা দেখিনি।” বিষয়টি কার্যত মেনে নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল পরিচালিত মনোহরপুর-২ পঞ্চায়েত প্রধান জয়দেব দোলই। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষকরা স্কুলে এসে এসব করতে পারে নাকি! ডিএর দাবিতে স্কুল বন্ধ করে আন্দোলন কেন? ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তাই তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। একটু শিক্ষা দরকার ছিল।”
এই ঘটনার কথা দ্রুত ছড়িয়ে যায় শিক্ষক মহলে। খবর যায় যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের নেতৃত্বের কাছেও। নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ধ্রুবশেখর মণ্ডলের দাবি, ‘‘গণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলনের অধিকার সবার আছে। তৃণমূল প্রধানের এই স্বৈরাচারী আচরণ মেনে নেওয়া হবে না। শাসক দল জেনে রাখুক, এই ভাবে আন্দোলন আটকানো যাবে না।’’
ঘাটালের বিডিও সঞ্জিব দাস বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। খোঁজ নিচ্ছি।” ঘাটাল চক্রের স্কুল পরিদর্শক সৌমেন দে বলেন, “ওই স্কুলে একটা গোলমালের খবর পেয়েছি। টিফিনে স্কুল ছুটি দেওয়ায় অভিভাবকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। শিক্ষকরা তালাবন্দি ছিলেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গাতেই তাদের ঘোষিত কর্মসূচিতে সাড়া মিলেছে বলে দাবি করেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চে। জেলায় অল ইন্ডিয়া সাবর্ডিনেট কোর্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন এই কর্মসূচিতে শামিল হয়েছে। মেদিনীপুর আদালত সহ জেলার সব আদালতে সংগঠনের কর্মীরা কর্মবিরতি করেন। ‘‘রাজ্য সরকার দাবি না মানলে আরও বড় কর্মসূচি হবে’’, জানাচ্ছেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে কিঙ্কর অধিকারী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy