হামেশাই দেখা মেলে এমন ছবির। নিজস্ব চিত্র
বিপদ যে ওত পেতে রয়েছে তা জানা নেই! বিদ্যুতের তারে দোল খেতে এসে রোজ মরছে পায়রা। মেদিনীপুর শহরের রাজাবাজার এলাকার এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন পাখিপ্রেমী ও পরিবেশকর্মীরা। স্থানীয়দের দাবি, গত কয়েকদিনে ৪০ টিরও বেশি পায়রা মারা গিয়েছে। মঙ্গলবার সকালেও ৩টি পায়রা মারা গিয়েছে।
মেদিনীপুরের মহকুমাশাসক (সদর) তথা মেদিনীপুর পুরসভার প্রশাসক দীননারায়ণ ঘোষের আশ্বাস, ‘‘বিষয়টি দেখছি। পায়রার মৃত্যু এড়াতে যা পদক্ষেপ করার করা হবে।’’ বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওন্যাল ম্যানেজার (মেদিনীপুর) চিরঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়েরও আশ্বাস, ‘‘শহরের ওই এলাকায় কেন এমন হচ্ছে দেখছি। তারে কিছু করার থাকলে তা-ও করা হবে।’’ এ দিন সকালে রাজাবাজারে এসেছিলেন স্বপন পাল। তাঁর কথায়, ‘‘দিনের পর দিন এ ভাবে পায়রা মরছে। খুব খারাপ লাগছে। প্রশাসনের উচিত, দ্রুত বিষয়টি দেখা।’’
রাজাবাজারের পাশ দিয়ে বিদ্যুৎবাহী তার গিয়েছে। কয়েকদিন আগে এখানে নতুন তার লাগানো হয়। স্থানীয়দের দাবি, নতুন তার লাগানোর পর থেকেই রোজ পায়রার মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। কখনও সকালে পায়রা মরছে, কখনও বিকেলে। রাস্তার ধারে এক গুমটি রয়েছে উত্তরা দাসের। তাঁর কথায়, ‘‘দিন কয়েক আগে নতুন তার লাগানো হয়েছে। তারপর থেকেই পায়রা মরছে। আমার মনে হয়, তার লাগানোর ক্ষেত্রে ত্রুটি রয়েছে। না- হলে এমনটা হত না।’’ স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, আগে তিনটি তার পাশাপাশি ছিল। কিন্তু এখন তিনটি তার উপরে নীচে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় তারগুলির মধ্যে দূরত্বও কম। বিদ্যুৎকর্মীদের একাংশের অনুমান, তারগুলির দূরত্ব কম হওয়ায় সম্ভবত পায়রাগুলি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হচ্ছে। কী ভাবে ? এক বিদ্যুৎকর্মীর কথায়, ‘‘পায়রা যদি নিউট্রালে বসে, আর দূরত্ব কম হওয়ায় তার গায়ে যদি ফেজ লাগে, তাহলে সে শক খাবেই। সেই ক্ষেত্রে মৃত্যু নিশ্চিত।’’ সঞ্জু সাউ নামে এক দোকানের কর্মচারীর কথায়, ‘‘রোজ এ ভাবে পায়রা মরছে দেখে নিজেদের খুব খারাপ লাগছে। মরা পায়রা দেখতে ভাল লাগছে না। প্রশাসনের কিছু একটা করা উচিত। আগে এ ভাবে পায়রা মরত না।’’
শহরের এই ঘটনার কথা শুনে জেলার বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরির আশ্বাস, ‘‘বিষয়টি দেখছি। বিদ্যুতের তারে দোল খেতে এসে এ ভাবে পায়রার মৃত্যু অনভিপ্রেত। সবদিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগামী দিনে যাতে এমন ঘটনা আর কোথাও না- ঘটে তাও দেখা হচ্ছে।’’ সপ্তাহ কয়েক আগে বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে মেদিনীপুর সদর ব্লকে ২টি পূর্ণবয়স্ক হাতির মৃত্যু হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে তার অনেকটা ঝুলে গিয়েছিল। ঝুলে থাকা তারেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় হাতি। বিদ্যুতের তারে বসে কাক, শালিখের মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। তবে মেদিনীপুর শহরে এমন ঘটনা সচরাচর তেমন ঘটে না। স্বপন বলছিলেন, ‘‘রোজ পায়রা মারা যাচ্ছে। খারাপ লাগছে। বিদ্যুতের তারের সমস্যা থেকেই এমন হচ্ছে। এ ভাবে দিনের পর দিন পায়রা মারা যেতে থাকলে তো সমস্যা। একমাত্র বিদ্যুৎ দফতরের সহযোগিতায় পায়রাগুলো রক্ষা পেতে পারে।’’
নতুন তার লাগানোর ক্ষেত্রে কী কোনও ত্রুটি রয়ে গিয়েছে? চিরঞ্জীব বলেন, ‘‘আগে ওখানে খোলা তার ছিল। খোলা তার পাল্টে কেবল তার লাগানো হয়েছে। কেবল তারে বসলে পায়রার এ ভাবে মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। ঠিক কী হয়েছে দেখছি। দফতরের কর্মীদের ওখানে পাঠাচ্ছি। সবদিক খতিয়ে দেখেই যে পদক্ষেপ করার করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy