Advertisement
০৯ অক্টোবর ২০২৪
Kurumi Community

দুই ফুলেরই সঙ্গী নির্ণায়ক কুড়মিরা

খড়্গপুর-১ ব্লকের অর্জুনি গ্রাম পঞ্চায়েতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তৃণমূলের বোর্ড গঠন কার্যত নিশ্চিত ছিল। বোর্ড গঠনে দেখা যায় ১৭ জনের সমর্থন পেয়েছেন প্রধান মানসী গোস্বামী।

কুড়মি প্রতিনিধিদের সঙ্গে মমতা।

কুড়মি প্রতিনিধিদের সঙ্গে মমতা। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৩ ১০:৩৪
Share: Save:

নিজেদের জাতিসত্ত্বার দাবি পূরণে কেন্দ্র ও রাজ্য— দুই সরকারেই জন্যই তাদের দরজা খোলা। পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে এই বার্তা বার বার দিচ্ছে কুড়মি সংগঠনগুলি। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে রাজ্যের প্রতি কুড়মি সংগঠনগুলির সুর কিছুটা নরমও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রেও ভারসাম্য বজায় রাখল কুড়মিরা। কিছু পঞ্চায়েতে নিল নির্ণায়কের ভূমিকা। সেই কাজে কোথাও তাঁরা সমর্থন করল বিজেপিকে, কোথাও আবার তৃণমূলকে।

ঝাড়গ্রাম ব্লকের শালবনি গ্রাম পঞ্চায়েতে বৃহস্পতিবার বিজেপি ও কুড়মিরা মিলে বোর্ড তৈরি করেছে। প্রধান বিজেপির ও উপপ্রধান কুড়মিদের। সাপধরা পঞ্চায়েতে তৃণমূল ও কুড়মিরা ৫টি করে আসনে জিতেছিল। লটারিতে প্রধান ও উপপ্রধান দুটোই কুড়মিদের থেকে হয়েছে। জামবনি ব্লকের জামবনি পঞ্চায়েতের ১০টি আসনের মধ্যে ৫টিতে জিতেছিলেন কুড়মিরা। তৃণমূল ২টি, বিজেপি ২টি ও সিপিএম একটি আসনে জিতেছিল। এদিন বোর্ড গঠনের আগে বিজেপির এক সদস্য কুড়মিদের সঙ্গে যোগ দেন। ওই পঞ্চায়েতটি কুড়মিরা দখল করে। নয়াগ্রাম ব্লকের চাঁদাবিলা পঞ্চায়েতে প্রধান তৃণমূলের হলেও উপপ্রধান হয়েছেন কুড়মি সদস্য।

পশ্চিম মেদিনীপুরের শিল্পতালুক এলাকার জিরাপাড়া পঞ্চায়েতে ১৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে ছিল ১২টি। বিজেপি ও কুড়মি সমাজ ১টি করে আসন পেয়েছিল। বোর্ড গঠনে তৃণমূলের ব্লক নেতৃত্বের তরফে প্রধান পদে নাম প্রস্তাব করা হয় যমুনা মুর্মুর। স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ সেই নামে আপত্তি জানিয়ে সুকুমণি হাঁসদার নাম প্রস্তাব করেন। ভোটাভুটিতে ৯-৫ ভোটে জিতেছেন সুকুমণি। এখানে কুড়মি সমাজের জয়ী প্রার্থী তৃণমূলকে ভোট দেন বলে তাঁদের নেতারা জানান।

খড়্গপুর-১ ব্লকের অর্জুনি গ্রাম পঞ্চায়েতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তৃণমূলের বোর্ড গঠন কার্যত নিশ্চিত ছিল। বোর্ড গঠনে দেখা যায় ১৭ জনের সমর্থন পেয়েছেন প্রধান মানসী গোস্বামী। তৃণমূলের খড়্গপুর ১ ব্লক সভাপতি অমর চক্রবর্তী বলেন, “অর্জুনি গ্রাম পঞ্চায়েতে আমাদের ১২টি আসন আছে। বোর্ড গঠনে ১৭ জনের সমর্থন পেয়েছেন আমাদের প্রধান। আসলে জয় গড়ামের যে ৪ জন জয়ী ছিল তাঁরাও আমাদের সমর্থন করেছেন। আগামীদিনে ওই ৪ জন আমাদের দলেও যোগ দেবেন।” ওই পঞ্চায়েতটি আগে বিজেপির দখলে ছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কুড়মি সমাজের ডাকে সারা দিয়ে সেখানকার প্রধান বাদল মাহাতো বিজেপি ও প্রধানের পদ ছেড়ে দেন। এ বার তাঁর নেতৃত্বেই ওই এলাকায় লড়াই করেছিল কুড়মিরা। বাদলের দাবি, “আমরা কোনও রাজনৈতিক দলকেই সমর্থন করি না। কিন্তু প্রধানের পদ তো রাজনৈতিক নয়। তৃণমূল তো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বোর্ড গড়বে এটা নিশ্চিত ছিল। আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যদের প্রধানের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করতে হবে। তাছাড়া মানসী গোস্বামীর স্বামী তৃণমূলে থেকেও আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। তাই আমাদের ৪ জন পঞ্চায়েত সদস্য প্রধান হিসাবে তাঁকে সমর্থন করেছেন।” আগামীদিনে তাঁদের সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দেবেন না বলেও দাবি তাঁর।

কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ) সভাপতি রাজেশ মাহাতোও বলেন, ‘‘আমরা কোনও রাজনৈতিক দল সমর্থন করব না। রাজনৈতিক দল আমাদেরকে সমর্থন করতে পারে। শালবনিতে বিজেপি লিখিত সমর্থন দিয়েছে। তবেই বোর্ড গঠন হয়েছে। যে কোনও রাজনৈতিক দল সমর্থন দিতে পারে।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, ‘‘আলাপ-আলোচনা রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে হতেই পারে। আলোচনা করা মানে সুর নরম হওয়া নয়। দাবি না মেটা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’’

‘কুড়মি ফ্যাক্টর’ ছাড়াও ঝাড়গ্রাম জেলার বেশ কিছু পঞ্চায়েতে নানা সমীকরণ দেখা গিয়েছে। ঝাড়গ্রাম ব্লকের নেদাবহড়া পঞ্চায়েতে সিপিএমের এক সদস্যের সমর্থনে তৃণমূল বোর্ড গঠন করেছে। লালগড় ব্লকের রামগড়, লালগড়, বৈতা, এড়গোদায় দলীয় ভাবে ঠিক করে দেওয়া প্রধান-উপপ্রধানকে মেনে নেননি তৃণমূলের জয়ী সদস্যদের একাংশ। গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের খাড়বান্ধী পঞ্চায়েতে বিজেপি ও নির্দল (বিক্ষুূব্ধ তৃণমূল) মিলে বোর্ড তৈরি করেছে। নয়াগ্রামের বড়খাঁকড়ি পঞ্চায়েতে তৃণমূলের এক সদস্য দলের মনোনীতকে হারিয়ে ভোটাভুটিতে প্রধান হয়েছেন। বিরোধী সদস্যরা তাঁকে ভোট দিয়েছেন বলে খবর।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE