Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বাঘ নেই বনে, ছন্দে ফিরছে জঙ্গল জীবন

বনে আর বাঘ নেই। নেই আর ভয়ও। তাই জঙ্গল জীবনের ছন্দ ফিরেছে গোয়ালতোড়ে। নির্ভয়ে ফের জঙ্গলে শালপাতা কুড়োতে যাচ্ছেন সুমিত্রা সরেন, পার্বতী মাল, সুখী হেমব্রমেরা। মাথায় শালপাতার বোঝা চাপিয়ে সবুজের বুক চিরে ফিরে আসছেন খিলখিলিয়ে।

শালপাতা সংগ্রহে জঙ্গলের পথে মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

শালপাতা সংগ্রহে জঙ্গলের পথে মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য
গোয়ালতোড় শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৮ ১১:১৬
Share: Save:

বনে আর বাঘ নেই। নেই আর ভয়ও। তাই জঙ্গল জীবনের ছন্দ ফিরেছে গোয়ালতোড়ে। নির্ভয়ে ফের জঙ্গলে শালপাতা কুড়োতে যাচ্ছেন সুমিত্রা সরেন, পার্বতী মাল, সুখী হেমব্রমেরা। মাথায় শালপাতার বোঝা চাপিয়ে সবুজের বুক চিরে ফিরে আসছেন খিলখিলিয়ে।

ডোরাকাটার আতঙ্কে এই ছন্দেই ছেদ পড়েছিল এক মাসেরও বেশি। ইচ্ছে থাকলেও বন দফতরের নিষেধাজ্ঞায় জঙ্গলে ঢুকতে পারছিলেন না আদিবাসী মহিলারা। বাঘের মৃত্যুর পরে সেই আতঙ্ক কেটেছে। ব্যস্ততা ফিরেছে সুবলবান্দি, কাদড়া, জিরাপাড়া, লোগিনোহারি-সহ গোয়ালতোড়ের জঙ্গলখণ্ডে। বন দফতরের গোয়ালতোড়ের রেঞ্জ অফিসার বিশ্বনাথ ভঞ্জ বলেন, ‘‘বাঘের আতঙ্ক নেই। তাই চিরাচরিত ভাবে জঙ্গলে শালপাতা তুলতে অনেকেই যাচ্ছেন। আমরাও নজরদারি চালাচ্ছি।’’

জঙ্গলপথে বন্যজন্তুর বিপদ, বিষধর সাপের আনাগোনা আছে। সে সবের তোয়াক্কা না করেই রুজির টানে জঙ্গলে গিয়ে শালপাতা সংগ্রহ করেন মহিলারা। হঠাৎ রয়্যাল বেঙ্গলের আবির্ভাবে সেই কাজ বন্ধ হয়েছিল। গোয়ালতোড়ের জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে জখম হয়েছিলেন একজন, বাঘের সন্ধানে গিয়ে দুই বনকর্মীর বেঘোরে মৃত্যুও হয়েছিলল। বন দফতর জঙ্গলে যাতায়াতে জারি করেছিল নিষেধাজ্ঞা। বাঘের মৃত্যুতে ছবিটা রাতারাতি বদলেছে।

বসন্তের শেষ থেকেই নতুন পাতায় সাজতে শুরু করেছে শাল জঙ্গল। বাজারে এই নতুন শালপাতার চাহিদাও থাকে প্রচুর। খাবারের দোকান কিংবা হোটেলে কাঁচা শালপাতার থালার চাহিদা তো আছেই, ভিন রাজ্যেও এই পাতার কদর যথেষ্ট। সেই মতো গোয়ালতোড়ের আদিবাসী মহিলারা গভীর জঙ্গলে ঢুকে তুলে আনেন কাঁচা শালপাতা। কখনও নিজেরাই দোকানে গিয়ে বিক্রি করেন, কখনও আবার মহাজন এসে ঘর থেকে তা নিয়ে যান।

সুবলবান্দির গীতা হেমব্রম, সুমিত্রা সরেনরা জিরাপাড়ার জঙ্গল থেকে মাথায় করে শালপাতা আনার পথে বললেন, ‘‘সকাল থেকে রোদ ওঠা পর্যন্ত ঘন্টাখানেক পাতা তুললে একশো-দেড়শ টাকা রোজগার হয়। সবেরই দর বাড়ছে। শালপাতার দর কেন বাড়েনি কে জানে!’’ কাদড়ার জঙ্গলে শালপাতা সংগ্রহের কাজে বরাবর যুক্ত জিরাপাড়ার সুবল সরেনের পরিবার। পঞ্চাশোর্ধ্ব সুবল বললেন, ‘‘ঘরের মেয়ে-বৌরা প্রতিদিন জঙ্গলে গিয়ে শালপাতা এনে গোয়ালতোড় বাজারের দোকানে দোকানে দেয়। কিন্তু ক’পয়সা আর হয়!’’ সারা ভারত শালপাতা শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সতীশ সিংহ বলেন, ‘‘বাঘের ভয়ে শালপাতা তোলার কাজ একরকম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফের তা শুরু হয়েছে। শালপাতা শিল্প বাঁচাতে আমরা আন্দোলনও করছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lalgarh Royal Bengal Tiger Women Work Jungle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE