আকাশে আতঙ্ক। চন্দ্রকোনায়। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
শূন্য থেকে চলছে অতর্কিত হানা। বাঁচতে ভরসা ছাতা, টুপি বা লাঠি। মাস দেড়েক ধরে চিলের হানায় দিশাহারা চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের ভগবন্তপুর-২ পঞ্চায়েতের কেশেডাল গ্রামের বাসিন্দারা।
গ্রামের মাইতি পাড়ায় নারকেল আর তালগাছের মাথায় বাসা বেঁধেছে চিল। তারাই ত্রাস। কেউ বাইরে বেরলে বা ছাদে উঠলেই মাথায় ঠোকরাচ্ছে। আঁচড়ে দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই চিলের হামলায় জনা দশেক শিশু। ভয়ে বাচ্চাদের স্কুলে, টিউশনে, মাঠে খেলতে যাওয়া কার্যত বন্ধ।
মঙ্গলবার মাইতি পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল সকলেরই মাথায় ‘রক্ষাকবচ’। মহিলারা ছাদে উঠলে সঙ্গে নিচ্ছেন বড় কালো ছাতা। বাচ্চারা কেউ মাথায় গামছা বেঁধে, কেউ টুপি পরে, কেউ বা ছাতা নিয়ে বাইরে বেরচ্ছে। সকলেরই চোখ আকাশের দিকে। দেখা মিলল চিলেরও। স্থানীয় বিকাশ মাইতির কথায়, “আমার ছেলের মাথায় দু’বার চিল ঠুকরে দিয়েছে।” আর এক বাসিন্দা তপন মাইতি বলেন, “সকাল হলেই আতঙ্ক।” অপর্ণা মাইতি, বাসন্তী মাইতি, প্রিয়াঙ্কা মাইতিরা জানালেন, দেড়-দু’মাস হল চিলগুলি এসেছে। বাচ্চাদেরই বেশি নিশানা করছে তারা। অপর্ণাদেবীর কথায়, “ছাতা দেখালেই পালাচ্ছে। কিন্তু সব সময় কি ছাতা ব্যবহার করা যায়!”
বিষয়টি বন দফতর ও স্থানীয় পঞ্চায়েতকে জানান অতিষ্ঠ গ্রামবাসী। পঞ্চায়েত প্রধান ইসমাইল খান বলেন, “বিডিও ও বন দফতরকে সব জানিয়েছি।” বন দফতর দেখছে বলে জানান চন্দ্রকোনা ২-এর বিডিও শ্বাশতপ্রকাশ লাহিড়ি। খড়্গপুরের ডিএফও অরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গ্রামের গাছে বাসা বেঁধেছে চিলগুলি। ডিমও পেড়েছে। ক্ষতির আশঙ্কাতেই আক্রমণ করছে তারা। আতঙ্কের কিছু নেই।”
পক্ষী বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর ব্যাখ্যা, পশুপাখিরা সকলেই সদ্যোজাতের নিরাপত্তার প্রশ্নে শুধু সতর্ক নয়, বেপরোয়া হয়ে ওঠে। চিলগুলিও হয়তো সে কারণেই ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। তিনি বলেন, “স্বভাবগত ভাবেই চিল হিংস্র। শাবকদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাই লোকজন দেখলেই হয়তো আক্রমণ করছে।” তবে ত্রস্ত গ্রামবাসীর প্রশ্ন একটাই, ছাতা-টুপি ছাড়া কবে আবার ঘরের বাইরে বেরতে পারবেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy