Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

চেনা ছবি বদলে গিয়ে ভোগান্তি

তমলুকের দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়া এলাকার বাসিন্দা শ্রীতমা সামন্ত মহিষাদল গার্লস কলেজের ছাত্রী। এদিন সকালে হাসপাতাল মোড়ে বাসের জন্য আধ ঘণ্টার ওপর অপেক্ষার পর বাড়ির পথ ধরলেন।

বাদুড়ঝালা: হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে মানিকতলায় শুক্রবার সকালে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

বাদুড়ঝালা: হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে মানিকতলায় শুক্রবার সকালে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০২:১৪
Share: Save:

দু’বছরের মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে সকালে তমলুক শহরে এসেছিলেন কোলাঘাটের বড়িশা গ্রামের সান্ত্বনা ভৌমিক। ডাক্তার দেখানোর পর বাড়ি ফিরতে তমলুকের হাসপাতাল মোড় বাসস্ট্যান্ডে মেচেদাগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সান্ত্বনাদেবী। কিন্তু কোথায় বাস? ঘড়িতে তখন সাড়ে সাড়ে ১২টা। জানালেন বেলা ১১টা থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে বাসের জন্য। কথার ফাঁকেই বাস এলেও তাতে উঠতে পারলেন না তিনি। কারণ প্রচণ্ড ভিড়। অগত্যা ট্রেকারেই রওনা দিলেন বাড়ির দিকে। কিন্তু তাতেও ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই দশা।

তমলুকের দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়া এলাকার বাসিন্দা শ্রীতমা সামন্ত মহিষাদল গার্লস কলেজের ছাত্রী। এদিন সকালে হাসপাতাল মোড়ে বাসের জন্য আধ ঘণ্টার ওপর অপেক্ষার পর বাড়ির পথ ধরলেন। বাস পাননি? প্রশ্নের উত্তরে হতাশ গলায় জানালেন, ‘‘ আগেই শুনেছিলাম এদিন কলকাতায় তৃণণূলের সমাবেশের জন্য বাস কম থাকবে। ভেবেছিলাম কম বাসের জন্য হয়তো একটু ভিড় হবে। তবে এমন অবস্থা হবে ভাবতে পারিনি। এ ভাবে কলেজে পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে, তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’’

চন্দ্রকোনার ভগবন্তপুরের ঊর্মিলা খান এদিন আট বছরের ছেলেকে ঘাটালে ডাক্তার দেখাতে এনেছিলেন। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘাটালের পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। বললেন, ‘‘ঘণ্টা দেড়েক আগে ডাক্তার দেখানো হয়ে গিয়েছে। এতক্ষণ দাঁড়িয়েও বাসের দেখা নেই। ছেলেটারও জ্বর। কী যে করি?”

কাঁথি থেকে এগরা, হলদিয়া থেকে তমলুক, ঘাটাল—শুক্রবার সর্বত্রই দেখা গিয়েছে এমন ছবি। বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘ লাইন। অথচ বাসের দেখা নেই। অটো-ট্রেকারেও বাদুড়ঝোলা। বাসের সমস্যা জেনে অনেকে এদিন অফিস ডুব মেরেছেন। ছেলেমেয়েদেরও স্কুলে পাঠাননি অনেক অভিভাবক। এদিন ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ সহ সরকারি অফিস, পুর ও পঞ্চায়েত অফিসগুলিতে হাজিরা ছিল বেশ কম। ঘাটালের একটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “আমাদের ১৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিরা বাসে আসেন। এদিন মাত্র দু’জন আসতে পেরেছেন।” পঞ্চায়েত দফতর, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে কাজে গিয়ে হয়রান হন অনেকেই। কারণ অনেক কর্মীই আসেননি বলে অভিযোগ।

দাসপুরে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে বেলা ১২টাতেও কর্মীর দেখা নেই। বসে আছেন কাজে আসা লোকজন। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বাস ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক মহম্মদ সামসের আরেফিন বলেন, ‘‘২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যাওয়ার জন্য জেলার বিভিন্ন রুট থেকেই বাস নেওয়া হয়েছে। ফলে জেলায় বাসের সংখ্যা কম। কিন্তু তা হলেও প্রতিটি রুটে যাত্রীদের জন্য বাস চলাচল করেছে। বাস কম থাকায় যাত্রীদের হয়তো একটু বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।’’

হলদিয়ার মঞ্জুশ্রী, রানিচক, মাখনবাবুর বাজার, ব্রজলাল চক বাসস্টপে অন্যদিনের তুলনায় ভিড় ছিল অনেক বেশি। বাসের সমস্যায় বিভিন শিল্পসংস্থায় অনেকেই সময়ে হাজিরা দিতে পারেননি। হলদিয়া –কুকড়াহাটি রুটের বাস ছাড়া এ দিন হলদিয়ায় অন্য রুটের বাস ছিল না বললেই চলে।

হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সন্ধ্যার পর জাতীয় সড়কে ট্রাক ও তেলের ট্যাঙ্কার ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কয়েক হাজার ট্রাক দাড়িয়ে যাওয়ায় যান চলাচল কখন স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Passengers Bus Shahid Diwas তমলুক
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE