মেদিনীপুরের কেরানিতোলা মোড়ও শুনশান। ছবি: কিংশুক আইচ ও সৌমেশ্বর মণ্ডল
ছুটি-প্রবাহ! করোনা পর্বে শুরু হয়ে যা বছর তিনেক পরেও প্রবাহিত।
তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী। তাই আজ, সোমবার থেকে টানা এক সপ্তাহ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কথা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা দেখে অনেকেই মনে করছেন, এই ভাবে ছুটি না দিয়ে বিকল্প কোনও পথ ভাবা যেত। যাতে গরমের কষ্টও এড়ানো যেত, আবার পড়াশোনাও হত।
সরকারি স্কুল গুলিতে কয়েকমাস আগে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও বেসরকারি স্কুলগুলিতে সবে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। শিক্ষা দফতর থেকে আগে জানানো হয়েছিল, ২৪ মে থেকে গ্রীষ্মের ছুটি পড়বে। গরম বাড়তে থাকায় বলা হয় ২ মে থেকে সেই ছুটি এগিয়ে আনা হচ্ছে। সেই মতো পরিকল্পনা করেছিল অনেক স্কুল। এর মধ্যেই রবিবাসরীয় দুপুরে এল মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা। তারপরে বিকাশ ভবনের নির্দেশে ছুটির ঘণ্টা বেজেই গেল। এই সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকাও পৌঁছেছে জেলায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) চাপেশ্বর সর্দার বলেন, "সরকারি নির্দেশিকার বিষয়টি স্কুলগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।"
যা দেখে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার শিক্ষামহলের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, করোনা পর্ব থেকে যে ছুটির রেওয়াজ শুরু হয়েছে, তা এখনও অব্যাহত। তীব্র গরম এটা যেমন ঠিক, তেমনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঠনপাঠন চালু রাখাও কম জরুরি নয়। প্রয়োজনে সকালে বা বিকেলে, কিংবা অনলাইনে পঠনপাঠন ব্যবস্থা চালু করাই যেত।
সরকারের সেভাবে নির্দেশিকা না থাকলেও এই পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস শুরুর কথা ভাবছে অনেক স্কুল। মেদিনীপুরের রয়্যাল একাডেমির অধ্যক্ষ সত্যব্রত দোলই বলেন, "মে মাসে ইউনিট টেস্ট রয়েছে। ৪ এপ্রিল থেকে স্কুল খুলেছে। ইউনিট টেস্টের সিলেবাস প্রায় সম্পূর্ণ। আমরা স্কুল বন্ধ রাখছি। এই গরমে ছেলেমেয়েদের অসুবিধাও হচ্ছিল। শিক্ষক, শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলছি। অনলাইনে ক্লাস চালু রাখার কথা ভাবছি।" কেশপুর কলেজের অধ্যক্ষ দীপক ভুঁইয়া বলেন, "কলেজ বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার ভাবনা রয়েছে।" বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকও বলেন, "কলেজ মনে করলে অনলাইনে ক্লাস চালু রাখতে পারে।"
খড়্গপুরের ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক পার্থ ঘোষ বলেন, "বারবার ছুটিতে পড়ুয়াদের পড়াশোনায় একটা ক্ষতি হচ্ছে। সকালে স্কুল করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যেতে পারত। আমাদের একটা পরীক্ষা এখনও হয়নি।" খড়্গপুর মহকুমার এক কলেজের অধ্যক্ষ আবার বলছেন, "কলেজ সকালে করা সম্ভব নয়। তাছাড়া অনলাইন ক্লাসেও জটিলতা অনেক। তাই সরকারি নির্দেশ মেনে কলেজ বন্ধ করতে হবে।"
বাম সংগঠন এবিটিএ-র ঘাটালের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা খেপুত হাইস্কুলের শিক্ষক চন্দন ভট্টাচার্যের দাবি, "প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করছে রাজ্য সরকার। সামনেই লম্বা ছুটি। তার আগে এই নতুন ছুটি ঘোষণায় ছাত্রছাত্রীরা ব্যাপক সমস্যায় পড়বে। সকালের দিকে স্কুল চালু রাখলে ভাল হত।" বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (বিপিটিএ) ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক সমীর বেরা বলছেন, ‘‘আবহাওয়াবিদ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, অভিভাবক ও শিক্ষক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। শিক্ষাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার জন্যই ঢালাও ছুটি দেওয়া হচ্ছে।’’
ঝাড়গ্রাম ননীবালা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অরুন্ধতী সেন জানান, তাঁদের স্কুলে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা শেষ হয়নি। এদিকে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে ২ মে-র মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পোর্টালে পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর আপলোড করার কথা। ঝাড়গ্রাম শহরের মডেল প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুশান্ত বোস বলছেন, ‘‘ফাস্ট সামেটিভের স্ক্রুটিনির ধার্যদিন সোম ও মঙ্গলবার। তারপর পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র অভিভাবকদের দেখানোর জন্য দেওয়া হবে। ২৭ এপ্রিল ফাস্ট সামেটিভের ফল প্রকাশ। এত আগে গরমের ছুটি দেওয়া হলে তো সিলেবাসই শেষ করা যাবে না।’’
তৃণমূল প্রভাবিত প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চেয়ারম্যান শান্তনু দে অবশ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "প্রচণ্ড গরমে ছাত্রছাত্রীদের কথা চিন্তা করে রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ইতিবাচক। এই গরমে কোনও পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে সরকারকে দোষারোপ করে তোলপাড় হত রাজ্য। ছাত্রছাত্রীদের পড়ার কোনও ক্ষতি হবে না। হলেও শিক্ষক-শিক্ষিকারা পুষিয়ে দেবেন।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy