কালীপুজোর অনুষ্ঠানে ডিজের দাপট। দাসপুরে। নিজস্ব চিত্র
উৎসবের মরসুম শেষ। সামনে পরীক্ষার মরসুম। কিন্তু সে সব ভুলেই চলছে মাইক আর ডিজের দৌরাত্ম্য।
কালীপুজোর পরে চার দিন হয়ে গেল। শুক্রবার হয়েছে ভাইফোঁটাও। কিন্তু শনিবারও ঘাটাল-সহ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বহু এলাকায় মাইক, ডিজে বেজেছে শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে। শুধু বহু এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে। বাজছে মাইক। সেই সব অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি থেকে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকরাও উপস্থিত থাকছেন।
অথচ সামনেই মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ১৫ নভেম্বর থেকে টেস্ট পরীক্ষা শুরু হবে। ওই পরীক্ষা শেষ হলেই পুরোদমে শুরু হবে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা। শিক্ষা দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “পুজো কমিটি ও উদ্যোক্তাদের পড়ুয়াদের কথা ভেবে দেখা উচিত। কিন্তু সে সব মানা হচ্ছে না। এতে পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়বে।”
টেস্ট পরীক্ষার মধ্যেই আবার রয়েছে জগদ্ধাত্রী পুজো। ঘাটাল, চন্দ্রকোনা-সহ জেলার বহু এলাকায় ঘটা করে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। সেই সময়ও টানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, অনেক জায়গায় বসে মেলাও। তাই পড়ুয়া থেকে অভিভাবক সকলেই প্রমাদ গুনছেন। কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর কথায়, “অষ্টপ্রহর কানের কাছে তারস্বরে মাইক বাজছে। পড়ায় মন দিতে পারছি না। জগদ্ধাত্রী পুজোতেও এ ভাবে মাইক বাজলে আমরা খুব সমস্যায় পড়ব।” সমস্যা অজানা নয় জেলা প্রশাসনেরও। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক পি মোহনগাঁধী বলেন, “এমনটা যাতে না হয় তা দেখা হচ্ছে। বিডিওদের সতর্ক করা হয়েছে। পড়ুয়াদের কথা আগে ভাবতে হবে।”
কাল, সোমবারই জেলার বেশিরভাগ স্কুল খুলছে। এ বার মাইক-ডিজের দাপট কমাতে পুলিশ কড়া হোক, চাইছেন সকলেই। ঘাটাল শহরের কুশপাতার এক পড়ুয়ার কথায়, “উৎসবের ক’দিন আমরাও খুব মজা করেছি। কিন্তু এখনও মাইক বাজছে। সমানে কানে আসছে হিন্দি, বাংলা গান। রাতেও জলসা চলছে। পড়াশোনায় মন বসবে কী করে!” শিক্ষক ও অভিভাবকেরাও গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের এক কর্তা তথা বরুণা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “পড়ুয়াদের কথা চিন্তা করে এখনই সব অনুষ্ঠান বাতিল করা জরুরি। তা না হলে পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়বে। এর দায় আমাদের উপরই বর্তাবে।” শিক্ষক মহল আরও মনে করিয়ে দিচ্ছে, ছেলে-মেয়েদের পড়াশেনার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়াটাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। পরীক্ষার বিষয়টি যে উদ্যোক্তারা সে ভাবে গুরুত্ব দেননি, তা তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা গেল। ঘাটাল ব্লকের খড়ার শহরের এক কালীপুজো কমিটির উদ্যোক্তা রুদ্রপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, “রাত বারোটার মধ্যেই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায়। পড়ুয়াদের একটু সমস্যা হবে বুঝতে পারছি। আসলে আগে থেকেই অনুষ্ঠান ঠিক হয়ে আছে।” চন্দ্রকোনার একবালপুরের এক কর্মকর্তা স্বরূপ দণ্ডপাট এবং দাসপুরের চক চাঁইপাটের এক উদ্যোক্তা দিলীপ মাঝি অবশ্য মানছেন, “রাত পযর্ন্তই অনুষ্ঠান হয়। টেস্ট পরীক্ষার বিষয়টি মাথায় ছিল না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy