ভেলোরের হোটেলে হরিপদ।
শয্যাশায়ী দাদার কোমরের অস্ত্রোপচার হবে ভাইফোঁটার দিন। খুশিতে ছিলেন বোন অর্পিতা। প্রশাসনের আশ্বাসে অস্ত্রোপচারের জন্য তাই আগেভাগেই তামিলনাড়ুর ভেলোরে পৌঁছে গিয়েছিল করোনা রোগীবাহী অ্যাম্বুল্যান্স দুর্ঘটনায় আহত হরিপদ সামন্তের পরিবার। ব্যয়বহুল ওই অস্ত্রোপচারের জন্য ভরসা ছিল রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। এ নিয়ে ভরসা জুগিয়েছিল কোলাঘাট ব্লক প্রশাসনও। কিন্তু হরিপদের পরিবারের দাবি, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কার্ডের জন্য টাকা খরচের কোনও অনুমোদন না দেওয়ায় নির্দিষ্ট দিনে অস্ত্রোপচার করা যায়নি। সরকারি হেল্পলাইনে ফোন করেও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ।
গত বছর ১৪ জুন কোলাঘাটের গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা পরিযায়ী শ্রমিক হরিপদ অ্যাম্বুল্যান্স দুর্ঘটনায় গুরুতর আহন হন। চিকিৎসায় প্রাণে বাঁচলেও হরিপদর কোমর, শিরদাঁড়া এবং একটি হাঁটু ভেঙে যায়। এসএসকেএম দু’মাস চিকিৎসার পর শিরদাঁড়ায় অস্ত্রপচারের জন্য হরিপদকে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। এক মাসে খরচ হয় বেশ কয়েক লক্ষ টাকা।
কিন্তু তার পরেও উঠে দাঁড়াতে পারেননি হরিপদ। কোমর থেকে পা পর্যন্ত অসাড় হয়ে যায়। টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারেনি পরিবার। তাদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকলেও কোনও বেসরকারি হাসপাতালে পরবর্তী অস্ত্রোপচার করা যায়নি। সম্প্রতি হরিপদের ওই খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কোলাঘাটের বিডিও তাপস হাজরা। দাবি, প্রশাসনের তরফে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডে হরিপদর অস্ত্রোপচার করা যাবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। সেই মতো হরিপদকে নিয়ে গত ১৯ অক্টোবর ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান হরিপদের মা, বোন ও জামাইবাবু। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর পর ৬ নভেম্বর অস্ত্রোপচারের দিন ঠিক হয়। পরিবার জানাচ্ছে, ওই অস্ত্রোপচারের জন্য খরচ ধার্য করা হয় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা।
হরিপদর পরিবারের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসার খরচ জমা করার জন্য দু'দিন আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য ভবনে একটি ই-মেল পাঠান। অভিযোগ, স্বাস্থ্য ভবন এখনও সেই ই-মেলের কোনও উত্তর দেয়নি। এ রাজ্যের তরফে সবুজ সঙ্কেত না মেলায় হয়নি অস্ত্রোপচার। হরিপদর পরিবাররে তরফে এর পরে কোলাঘাট ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কোলাঘাট ব্লক প্রশাসন তাঁদের একটি টোল ফ্রি নম্বরে কথা বলতে বলে। তাতে ফোন করা হলেও কেউ ফোন ধরেনি বলে অভিযোগ।
এ দিকে, ভিন্ রাজ্যে চারজন সদস্যের থাকা খাওয়া নিয়ে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে বেশ কয়েক হাজার টাকা। এই পরিস্থিতিতে আদৌ অস্ত্রোপচার করানো যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান হরিপদর পরিবার। হরিপদর মা রীনা সামন্ত বলেন, ‘‘সরকার ওঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল করোনার চিকিৎসা করার জন্য। দুর্ঘটনার পর সরকারি কোনও সাহায্য পাইনি। প্রতিশ্রুতি দিয়েও স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডে চিকিৎসার খরচ দিচ্ছে না স্বাস্থ্য দফতর। এখন আমরা কী করব বুঝতে পারছি না।’’ হরিপদর বোন অর্পিতা মল্লিক বলেন, ‘‘ভাইফোঁটার দিনেই দাদার কোমরের দুটি অস্ত্রোপচারের কথা ছিল। কিন্তু তা আর হল না। জানি না আমার দাদা আর উঠে দাঁড়াতে পারবে কি না।’’
ব্লক প্রশাসন যখন উদ্যোগী হয়েছিল হরিপদের চিকিৎসার ভার বহন করতে, তখন ভিন্ রাজ্যে গিয়ে এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে কেন তাঁর পরিবারকে?
এ বিষয়ে কোলাঘাটের বিডিও তাপস হাজরার জবাব, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখছি। যাতে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডের মাধ্যমে অস্ত্রোপচারের খরচ জমা করা যায়, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy