প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে হাজার টাকার নোটে ওষুধের দাম নেওয়া হচ্ছে। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে।
পুরনো পাঁচশো টাকার নোট চলবে না!
কথাটা শুনেই হকচকিয়ে গেলেন কমলকুমার সিংহ। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে ২৭০ টাকার ওষুধ কিনে তিনি পুরনো পাঁচশো টাকার নোট দিয়েছিলেন। পাঁচশো টাকা ছাড়া তাঁর কাছে আর কোনও নোট না থাকায় বিপাকে পড়েন তিনি। ওষুধ তো আর টাকার জন্য বন্ধ থাকবে না। অনেক অনুরোধ করলেও দোকানের কর্মী পুরনো নোট নিতে নারাজ। শেষমেশ ওই ছবি ক্যামেরা বন্দি করতেই ভোলবদল। দোকানের ম্যানেজার ছুটে এসে পাঁচশো টাকা নিয়ে নিলেন। কমলবাবু বলেন, “আপনারা এসেছিলেন বলে পাঁচশো টাকার নোটটা নিয়ে নিল। আমি বহু অনুরোধ করা সত্ত্বেও পুরনো নোট নিচ্ছিল না। ওষুধটা খুব দরকার ছিল।”
আগামী ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে, ওষুধের দোকানে পুরনো পাঁচশো-হাজার টাকার নোট নেওয়ার নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারপরেও কেন পুরনো নোট নিতে অনীহা? খড়্গপুর হাসপাতলের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের ইন-চার্জ কুমার পেরা বলেন, “আমরা কোথা থেকে এত একশো টাকার নোটের জোগান দেব। এ বার তো দোকান ছেড়ে আমাদের ব্যাঙ্কের দীর্ঘ লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সারাদিন ব্যাঙ্কে একজন কর্মীকে দাঁড় করিয়ে যে টুকু টাকা পাচ্ছি তা দিয়ে চালাচ্ছি। তার পরেও টাকা না থাকলে কী করার আছে।” ক্যাশ বাক্সে টাকা থাকা সত্ত্বেও কেন দিচ্ছিলেন না? কুমার পেরার যুক্তি, “সকলকে খুচরো দিয়ে দিলে তো চলবে না। তাই পরিস্থিতি বুঝে খুচরো বের করছি।”
হাসপাতালের সামনের একাধিক ওষুধের দোকানে ঘুরেও দেখা গেল, অনেক দোকান বাতিল পাঁচশো-হাজার টাকার নোট নিতে অস্বীকার করছে। হাসপাতাল সংলগ্ন ওষুধ দোকানের মালিক অরুণ দণ্ডপাট বলেন, “খুচরো টাকা থাকলে বাতিল নোট নিচ্ছি। কিন্তু এত খুচরো পাব কোথায়? তাই মাঝে মধ্যেই পুরনো নোট নিতে পারছি না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ব্যাঙ্কে গেলে তো বাড়তি সুবিধা পাচ্ছি না। নিয়ম জারির আগে ব্যাঙ্কে ওষুধ ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা লাইন করার নির্দেশ দেওয়া উচিত ছিল সরকারের।”
মালঞ্চর এক ওষুধ দোকানের মালিক নিখিলরঞ্জন হাতি বলছেন, “সরকার নিয়ম করলেই তো হবে না। আমরা পাঁচশো-হাজার টাকার পুরনো নোট নিচ্ছি না। কারণ আমাদের কাছে খুচরো নেই।’’ ওষুধ না পেয়ে রোগীরা যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন? সদুত্তর এড়িয়ে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘ব্যাঙ্কে আমাদের জন্য তো বাড়তি সুবিধা নেই। আমার অ্যাকাউন্টে আড়াই লক্ষ টাকার বেশি বাতিল নোট জমা পড়লে সেই ঝক্কি কে সামলাবে?” ওষুধের পাইকারি ব্যবসায়ীরাও পুরনো নোট নিতে চাইছেন না বলে অভিযোগ। শহরের এক পাইকারি ওষুধ ব্যবসায়ী নীলু রাও বলেন, “কলকাতা থেকে আমরা ওষুধ নিয়ে এসে খুচরো দোকানে সরবরাহ করি। কলকাতাতেই অচল নোট নিচ্ছে না। তাই আমরাও নিচ্ছি না।”
যে কয়েকটি দোকান এখনও বাতিল নোট নিচ্ছে, তাঁরাও সংশয়ে কতদিন পুরনো নোট নেওয়া যাবে। হাসপাতালের উল্টো দিকের এক ওষুধ দোকানের ম্যানেজার এ রামকৃষ্ণ বলেন, “প্রথম দিকে পাঁচশো টাকার নোট না নিলেও এখন সরকারি নিয়ম মেনে নিতে হচ্ছে। আগে কিছু খুচরো টাকার বন্দোবস্ত করেছিলাম, তা দিয়ে এখনও চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এর পরে কী হবে জানিনা।”
অনেক নার্সিংহোমেও পুরনো টাকা নিতে না চাওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন রোগীর পরিজনেরা। খড়্গপুরের প্রেমবাজারের সোসাইটির বাসিন্দা ইতিহাসের গবেষক ভাস্বতী ভট্টাচার্যের কথায়, “খড়্গপুরের হাসপাতালের সামনে থাকা অধিকাংশ ওষুধ দোকান বাতিল নোট নিচ্ছে না। অনেক চিকিৎসকের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলিও বাতিল নোট নেওয়া হচ্ছে না। এমন চলতে থাকলে জরুরি পরিস্থিতিতে মানুষ কী করবে!”
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy