Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

ম্যালেরিয়ার মারণ থাবা

সাধারণত বছরে যেখানে এক-দু’জনের মৃত্যু হয়, সেখানে গত দু’মাসেই মৃতের সংখ্যা সাত! পশ্চিম মেদিনীপুরে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ এ বার বেশি। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বছর ঘুরে ফের হাজির বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। আজ, সোমবার এই দিনটি পালন হবে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। পদযাত্রা হবে। সচেতনতা শিবির হবে।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২৭
Share: Save:

সাধারণত বছরে যেখানে এক-দু’জনের মৃত্যু হয়, সেখানে গত দু’মাসেই মৃতের সংখ্যা সাত! পশ্চিম মেদিনীপুরে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ এ বার বেশি। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।

বছর ঘুরে ফের হাজির বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। আজ, সোমবার এই দিনটি পালন হবে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। পদযাত্রা হবে। সচেতনতা শিবির হবে। কিন্তু ম্যালেরিয়া কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে, সেই প্রশ্নের উত্তর নেই। রাজ্যের মধ্যে এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরেই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। এই জেলায় যেখানে এ বছরে এরই মধ্যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে পুরুলিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ২ জনের, বাঁকুড়ায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।

পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক তা মানছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরও। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে। ম্যালেরিয়া রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা তুলে ধরা হচ্ছে। কী করণীয় তা-ও জানানো হচ্ছে।’’ জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধানও জানান, দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করে চিকিৎসা শুরু করা হচ্ছে। সকলকে মশারি খাটিয়ে শোয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু এই সব পরামর্শ তো বছরভরই দেওয়া হয়। তা-ও কেন ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ছড়াচ্ছে জঙ্গলমহলের এই জেলায়?

এর সদুত্তর নেই জেলার স্বাস্থ্য-কর্তাদের কাছে। এক স্বাস্থ্য-কর্তার সাফাই, “ম্যালেরিয়া তার চরিত্র বদল করছে। এ নিয়ে গবেষণাও চলছে। ওষুধের পরিবর্তন না ঘটালে এর থেকে বাঁচার উপায় নেই!” আগে ম্যালেরিয়া হানা দিত মূলত ঝাড়গ্রাম মহকুমায়। সব থেকে বেশি আক্রান্ত হত বিনপুর ২ ব্লক অর্থাৎ বেলপাহাড়িতে। এখন জেলার সর্বত্র কম-বেশি মশাবাহিত এই রোগ ছড়াচ্ছে। গত দু’মাসে যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে মেদিনীপুর সদর, শালবনি, গড়বেতা-২ অর্থাৎ গোয়ালতোড়, কেশপুরের বাসিন্দাও রয়েছেন।

চলতি বছরের প্রথম দু’মাসে জেলায় ম্যালেরিয়ায় কেউ মারা যাননি। শুধু মার্চ-এপ্রিলে (২৪ তারিখ পর্যন্ত) ৭ জন মারা গিয়েছেন। কেন ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু বাড়ছে? জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রের বক্তব্য, এর প্রধান কারণ প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরামের বাড়বাড়ন্ত। তা ছাড়া, সচেতনতারও অভাব আছে। জ্বর হলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া উচিত। কিন্তু অনেকে যান না। আবার কোথাও কোথাও পরিকাঠামোর অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলেও শুরুতেই রোগ ধরা পড়ে না। যখন ধরা পড়ে, তখন রোগ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে গিয়েছে। ফলে, মৃত্যু আর ঠেকানো যায় না। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা জানান, মশা বাহিত রোগ নিবারণে কিছু কর্মসূচি চলছে। স্বাস্থ্য কর্মীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কোনও গ্রামে এক হাজার মানুষের মধ্যে ৫ জনের জ্বর হলেই তা জানাতে। পাশাপাশি মশারি ব্যবহার করা, চারপাশ পরিষ্কার রাখা, জল জমতে না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গবেষণায় উঠে আসছে, এখন প্রতিরোধী ম্যালেরিয়া ছড়াচ্ছে। ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ গড়ে উঠছে। এখন ম্যালেরিয়ায় যে ওষুধ দেওয়া হয়, সেটি এসিটি বা আর্টিমিসিনিন থেরাপি। এই এসিটি কাজ করছে না। ক্লোরোকুইন আগেই প্রতিরোধ হয়ে গিয়েছিল। পরে এসিটি চালু হয়। দেখা যাচ্ছে, এখন বেশ কিছু ক্ষেত্রে এই আর্টিমিসিনিনও কাজ করছে না। ফলে, নতুন কম্বিনেশন তৈরি করা জরুরি। না হলে মৃত্যু ঠেকানো যাবে না। ওই সূত্রের দাবি, ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরামের মধ্যে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (এমডিআর-১) নামে যে জিনটি রয়েছে সেটিরও জিনগত পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। পুরনো জিনটির গঠন বদলে নতুন যে জিনটি তৈরি হয়েছে সেটি-সহ ওই পরজীবীর আরও কয়েকটি জিনেরও গঠনগত পরিবর্তন হয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, ‘‘ম্যালেরিয়ার জীবাণু নিজেকে বাঁচাতে জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলছে। কিন্তু এখনও ওষুধের কম্বিনেশনের পরিবর্তন হয়নি। এটাও সমস্যা। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে ওষুধের পরিবর্তন না ঘটালে এর থেকে বাঁচার উপায় নেই!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Midnapore Malaria increasing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE