Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিক্ষোভ

পাইপ ফেটে ছাই-জলে ভাসল রাস্তা

পুকুরের জল ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে দেখে প্রথমে সন্দেহ হয়েছিল গ্রামবাসীর। প্রথমে কেউ বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। পুকুরের জলস্তর ক্রমে বাড়়তে থাকায় শোরগোল পড়ে যায়। মেচেদা গ্রামের বাসিন্দারা খোঁজ করতে গিয়ে দেখেন, কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য ছাই-জল বেরনোর পাইপ ফেটে গিয়েছে।

ছাই-জল ঢুকছে মেচেদা গ্রামে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ গ্রামবাসীর (ইনসেটে)। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

ছাই-জল ঢুকছে মেচেদা গ্রামে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ গ্রামবাসীর (ইনসেটে)। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

আনন্দ মণ্ডল
কোলাঘাট শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৬
Share: Save:

পুকুরের জল ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে দেখে প্রথমে সন্দেহ হয়েছিল গ্রামবাসীর। প্রথমে কেউ বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। পুকুরের জলস্তর ক্রমে বাড়়তে থাকায় শোরগোল পড়ে যায়। মেচেদা গ্রামের বাসিন্দারা খোঁজ করতে গিয়ে দেখেন, কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য ছাই-জল বেরনোর পাইপ ফেটে গিয়েছে। আর সেই পাইপ থেকেই গ্রামে হু হু করে ঢুকছে ছাইগোলা জল। ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামের বাসিন্দারা শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচ নম্বর গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। ঘণ্টা পাঁচেক চলার পর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসে বেলা ১১টা নাগাদ বিক্ষোভ ওঠে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাইপ লাইন ফেটে ছাই-জল গ্রামে ঢোকার কথা স্বীকার করছেন কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার তাপস পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘পাইপ লাইন ফেটে ছাই-জল গ্রামের কয়েকটি পুকুরে ও নিকাশি খালে পড়েছে। পাইপ মেরামতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিক্ষোভের জেরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজে অসুবিধা হয়নি।’’ তাপসবাবু জানান, ওই নিকাশি খাল পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ছাই দূষণ বন্ধ করতেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উত্তর দিকে রয়েছে মেচেদা গ্রাম। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য ছাই-জল পাইপ লাইনের মাধ্যমে কিছু দূরে ছাই পুকুরে নিয়ে গিয়ে ফেলা হয়। এর মধ্যে একটি পাইপ ফেটে যায়। এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রাচীরের ফাঁকা অংশ দিয়ে বর্জ্য ছাই-জল গ্রামের সামন্ত পাড়ার একটি পুকুরে পড়ছে। ছাই জমে ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে পুকুরের জল। সামন্ত পাড়া লগোয়া দোলই পাড়ার মোরাম রাস্তাতেও জমে গিয়েছে ছাই-জল। সামন্ত পাড়ার পুকুরের উপর এলাকার ১০-১২টি পরিবার নির্ভরশীল। এই পুকুরের মালিক কার্তিক সামন্ত বলেন, ‘‘পাড়ার ১০টি পরিবারের যৌথ মালিকানার এই পুকুরের জলে পোনা, চিংড়ি মাছের চাষ হয়েছে। অন্য সময় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই উড়ে জলে পড়ে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আচমকা ঘোলাটে ছাই-জল পুকুরে ঢুকতে শুরু করে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ছাই-জল মেশায় সব মাছ মরে গিয়েছে। বেশ কয়েক হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুকুরে স্নানও করা যাচ্ছে না।’’

কার্তিকবাবুদের পুকুর ছাড়াও লগোয়া সুকুমার দোলই, শুকদেব বাগ, মৃত্যুঞ্জয় প্রামাণিকের পুকুরেও ছাই-জল মিশে লক্ষাধিক টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ। গ্রামে ছাই-জল ঢুকলেও ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগে শুক্রবার সকাল থেকে ছাই বোঝাই লরি যাওয়ার রাস্তা আটকে স্থানীয়রা বিক্ষোভ দেখায়। ফলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই বহনকারী একশোরও বেশি লরি আটকে যায়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসে বিক্ষোভ উঠে যায়।

বিক্ষোভকারী শঙ্করী সামন্ত, গঙ্গারানি বাগ, নিয়তি জানাদের অভিযোগ, ‘‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই উড়ে ঘরেও ঢুকে যায়। ছাইয়ের আতঙ্কে সব সময় ঘরের দরজা,জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। দূষণের জন্য শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগও ছড়াচ্ছে।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘গতকাল বিকেল থেকে ছাই-জল ঢুকতে শুরু করেছিল। সারারাত ছাই-জল ঢুকলেও কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেননি।’’ ছাই দূষণ বন্ধের দাবিতে সরব গ্রামের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মহেন্দ্র কর, স্বপন বাগদের কথায়, ‘‘তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সীমানা দেওয়াল ঘেঁষা আমাদের গ্রামের প্রায় ৭০০ বাসিন্দা ছাড়াও পাশের আন্দুলিয়া গ্রামের এক হাজারেরও বেশি বাসিন্দা ছাই দূষণের শিকার। ছাই দূষণ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

pipelines dirt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE