‘বৃষ্টি পড়লে এক দিন, বাজ পড়লে দু’দিন, ঝড় হলে তিন দিন’।
লালগড়ের আকাশে মেঘ ডাকলে এমনই প্রবাদ এলাকাবাসীর মুখে-মুখে ফেরে। জঙ্গলমহলের বহুচর্চিত এই জনপদে উন্নয়নের হাজারো আয়োজন চলেছে। কিন্তু এখনও বিদ্যুতের বেহাল পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র উন্নতি হয় নি। টানা বিদ্যুত্ বিভ্রাটের ফলে বাসিন্দাদের জেরবার অবস্থা। স্পর্শকাতর লালগড় এলাকায় বেশিক্ষণ লোডশেডিং করে রাখার নিয়ম নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও রোজই দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে। এ ছাড়া নিত্য লো-ভোল্টেজের সমস্যা তো রয়েইছে। কখনও টানা কয়েক দিন বিদ্যুত্ থাকছে না। এই নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের পারদ চড়ছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত লো-ভোল্টেজ ও দফায় দফায় লোডশেডিং-এর সমস্যা নিত্যদিনের সঙ্গী। ইদানিং ঝড়-বৃষ্টি হলে নাগাড়ে লোডশেডিং হচ্ছে। টানা দু’-তিন দিন বিদ্যুত্ থাকছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিতে গোয়ালতোড় থেকে রামগড় হয়ে জঙ্গলপথে লালগড়ে বিদ্যুত্ সরবরাহ করা হয়। এই জন্যই এত সমস্যা।
লালগড়ের এসআই চকের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী দীনেশ দাস বলেন, “লো ভোল্টেজের জন্য স্টেবিলাইজারের মাধ্যমে ফ্রিজ চালাই। কিন্তু ইদানীং ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং-এর জন্য ফ্রিজ চলছে না। মজুত ছানা-পনির পচে যাচ্ছে। আইসক্রিম গলে যাচ্ছে।” লালগড়ের একটি খুচরো চাল কলের মালিক দেবব্রত রায় বলেন, “লো ভোল্টেজের জন্য ডিজেলে মেশিন চালিয়ে খরচ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। টানা ২-৩ দিন লোডশেডিংয়ের সময় তাই মিল বন্ধ রাখা হয়।” লালগড়ের বাসিন্দা গোয়ালতোড় কলেজের বিএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী অন্তরা মণ্ডল বলেন, “আগামী ২৩ তারিখ থেকে প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। লো ভোল্টেজের জন্য এমনিতেই পাখা ঘোরে না। টিমটিমে আলো জ্বলে। এখন টানা লোডশেডিংয়ের জন্য রাতে পড়াশুনায় খুবই সমস্য হচ্ছে।” লালগড় জুড়ে চলছে নানা উন্নয়নের কর্মকাণ্ড। লালগড়ে সরকারি কলেজ চালু হয়েছে। রামগড়ে চালু হয়েছে পলিটেকনিক। কিন্তু লোডশেডিং ও লো ভোল্টেজের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে কম্পিউটার-চালিত কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। নাগাড়ে লোডশেডিং থাকলে সরকারি অফিস কাছারিতে জেরারেটর চালিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।
বিদ্যুতের বিল জমা দেওয়া নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে। লালগড় ব্লক-সদর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৩ হাজার। এর মধ্যে হাজার ছ’য়েক গ্রাহকদের বিদ্যুত্-বিল জমা দিতে যেতে হয় ৪২ কিমি দূরে মেদিনীপুর সদরের বাড়ুয়া গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে। আবার রামগড় ও কাঁটাপাহাড়ি-সহ লালগড়ের বাকি এলাকার সাত হাজার গ্রাহকদের বিদ্যুতের বিল জমা দিতে যেতে হয় ৩৬ কিমি দূরের রোড চন্দ্রকোনার গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে। বিদ্যুত্ বিভ্রাট হলে এলাকায় অভিযোগ জানানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। গোয়ালতোড় সাব স্টেশনে কিংবা বাড়ুয়া অথবা রোড চন্দ্রকোনা গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে ফোন করে খবর দিতে হয়। অভিযোগ জানিয়েও সমস্যার কোনও সুরাহা হয় না বলে এলাকাবাসীর দাবি।
রাজ্য বিদুত্ বন্টন সংস্থার এক মুখপাত্র জানান, লালগড় ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রায় ১৩ হাজার গ্রাহক লো ভোল্টেজ ও বিদুত্-বিভ্রাটের শিকার। শালবনির পিড়াকাটায় বিদ্যুতের একটি সাব স্টেশন তৈরির কাজ চলছে। এ বছরের শেষ নাগাদ সাব স্টেশনটি চালু হলে সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। গ্রাহকদের সুবিধার্থে মাঝে মধ্যে এলাকায় শিবির করে বিদ্যুতের বিল জমা নেওয়া হবে বলেও জানান বিদ্যুত্ বন্টন সংস্থার ওই মুখপাত্র। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিদ্যুত্ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বলেন, “লালগড়ে লো-ভোল্টেজের সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। আমি নিজে এলাকায় গিয়ে লো-ভোল্টেজের সমস্যাটা অনুভব করেছি। সমস্যা মেটানোর জন্য লালগড়ে বিদ্যুতের পৃথক একটি সাব স্টেশন করার জন্য সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
কবে সেটা হয় সেই অপেক্ষায় রয়েছেন লালগড়বাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy