ট্রেন কম। বেলদা থেকে হাওড়া যেতে হলে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘক্ষণ। সকালে কম সময়ের ব্যবধানে পরপর তিনটি হাওড়াগামী লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন বেলদা দিয়ে যায়। এরপরের হাওড়াগামী লোকাল বা প্যাসেঞ্জার ট্রেন পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে রাত পর্যন্ত। মাঝের সময়ে কয়েকটি এক্সপ্রেস ট্রেন অবশ্য বেলদায় দাঁড়ায়। ফলে সকাল সাড়ে সাতটার পর রাত পর্যন্ত সময়ে বেলদা থেকে হাওড়়া যাওয়া দুষ্কর। দূরদূরান্ত থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনে কেউ খড়্গপুর নামলে সেখান থেকে বেলদা যেতে নাজেহাল হতে হয় যাত্রীদের।
প্রতিদিন সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বেলদা থেকে ছাড়ে হাওড়াগামী লোকাল। এরপর মিনিট পনেরোর মধ্যেই ৬টা ২৩ মিনিটে বেলদায় আসে জলেশ্বর-হাওড়া লোকাল। এই লোকাল ট্রেন আগে বেলদা থেকেই ছাড়ত। ২০১৪ সালে এই ট্রেনের যাত্রাপথ বাড়িয়ে জলেশ্বর পর্যন্ত করা হয়। ঘণ্টাখানেকে পরে ৭টা ২৫ মিনিট নাগাদ বেলদায় আসে ভদ্রক-হাওড়়া বাঘাযতীন প্যাসেঞ্জার। তারপরে সারাদিন আর কোনও লোকাল বা প্যাসেঞ্জার ট্রেন বেলদা দিয়ে যায় না। এরপরে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ পুরী-সাঁতরাগাছি প্যাসেঞ্জার বেলদা দিয়ে যায়। যদিও এই ট্রেন হাওড়া পর্যন্ত যায় না। এ ছাড়ও হাওড়াগামী জগন্নাথ এক্সপ্রেস, ধৌলি এক্সপ্রেস, ইস্টকোস্ট এক্সপ্রেস ট্রেন বেলদায় থামে। যদিও এই ট্রেনের জেনারেল কামরায় ভিড়ের চাপে ওঠা দায় বলে অভিযোগ।
সকালে হাওড়াগামী যে লোকাল ট্রেন বেলদা থেকে ছাড়ে, রাতে সেই ট্রেন হাওড়া থেকে সরাসরি বেলদায় আসে না। খড়্গপুর পর্যন্ত আসে ওই ট্রেন। খড়্গপুর থেকে একটি মাতৃভূমি লোকাল বেলদায় যায়। আট কামরার এই ট্রেনে ভিড়ের ঠেলায় ওঠা দায়। ফলে বেলদার যাত্রীদের খড়্গপুরে ফের ট্রেন বদল করতে হয়। ট্রেন বদল করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন বেলদার অনেক যাত্রী।
রাজ্যের প্রায় সীমানাবর্তী এলাকায় অবস্থিত বেলদা নারায়ণগড় ব্লকের সদর শহর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্যতম ব্যবসার কেন্দ্র বেলদা স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করেন। রেল সূত্রে খবর, এই স্টেশন থেকে রেলের আয়ও হয় ভালই। বেলদা শহর ছাড়াও নারায়ণগড় ব্লকের বাকি অংশ, কেশিয়াড়ি, দাঁতন-১, দাঁতন-২ ব্লকের বাসিন্দারাও এই স্টেশনের উপর নির্ভরশীল। রেলযাত্রীদের একাংশের দাবি, রেলের কাছে বেলদা থেকে হাওড়াগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে। বেলদার বাসিন্দা ব্যবসায়ী লক্ষ্মণ সাহু, রাজু চান্ড্যকেরা বলেন, ‘‘ভিড় হওয়ায় এমনিতেই বেলদা থেকে ট্রেনে বসায় জায়গা পাওয়া যায় না। তার উপরে ট্রেনের সংখ্যাও কম হওয়ায় সমস্যা হয়। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানালেও কাজ হয়নি।’’ বেলদার বাসিন্দা গঙ্গাধর আকাদেমির প্রধান শিক্ষক ননীগোপাল শিট বলেন, ‘‘কারও যদি দুপুরে কলকাতায় কোনও কাজ থাকে, তাহলে তাঁকে সকালের ট্রেন ধরতে হবে। রেলের এই ট্রেনের সময় সারণীতে যাত্রীরা চূড়ান্ত ভোগান্তির শিকার।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ট্রেন কম থাকায় ভিড়ের ঠেলায় বসার জায়গা পাওয়া দুষ্কর। এতটা পথ ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাওয়া কষ্টের। আমাদের দাবি, বেলদা থেকে আরও প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালু করুক রেল।’’
বেলদা-হাওড়া লোকাল বাঁচাও কমিটির নেতা রামলাল রাঠির দাবি, বেলদা স্টেশনের উপর অনেক ব্যবসায়ী এমনকী ভিন্ রাজ্যের মানুষও নির্ভরশীল। তাই হাওড়াগামী আরও বেশ কয়েকটা প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালু করা হোক। এ ছাড়াও হাওড়া থেকে ভুবনেশ্বরগামী জনশতাব্দী এক্সপ্রেস, দিল্লিগামী নীলাচল এক্সপ্রেস, পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের বেলদা স্টেশনে স্টপেজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। তাঁর দাবি, রেলের কাছে এ বিষয়ে জানানো হলেও কোনও কাজ হয়নি। রেলের আধিকারিক বদল হলে ফের নতুন করে আবেদন করতে হয়। ফলে আসল কাজ হতে দেরি হয়।
এ বিষয়ে খড়্গপুরে রেলের এডিআরএম মনোরঞ্জন প্রধান বলছেন, ‘‘আমি আসার পরে এই সংক্রান্ত কোনও আবেদন পাইনি। বেলদার মানুষ আমাকে কোনও আবেদন জানালে বা আগে জানানো আবেদনের প্রতিলিপি দিলে ভেবে দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy