বক্তা সাংসদ কুনার। পাশে সুখময়। রবিবার ঝাড়গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
একে দলের শক্তি কমেছ। তার উপর ঝাড়গ্রামে জেলা বিজেপির গোষ্ঠী বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। রবিবার দলের ‘বহিষ্কৃত’ চার নেতার ডাকে অরণ্যশহরের এক অতিথিশালায় ‘রুদ্ধদ্বার বৈঠক’ হল। সেখানে হাজির ছিলেন ঝাড়গ্রামের দলীয় সাংসদ কুনার হেমব্রম ও বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি বর্তমানে রাজ্য কমিটির সদস্য সুখময় শতপথীও। কুনার স্পষ্ট জানালেন, এক তরফা ভাবে চারজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে তিনি বিষয়টি জানাবেন। সুখময়েরও আশ্বাস, কর্মীদের ক্ষোভ যথাস্থানে জানাবেন তিনি।
গত বছর বিধানসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হন সুখময়। সেই কারণে তাঁকে সরিয়ে তুফান মাহাতোকে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সুখময় পরাজিত হন। পরে তাঁকে রাজ্য কমিটির সদস্য করা হয়। তবে ভোটের পরে রাজনৈতিক হিংসায় আক্রান্ত কর্মীদের পাশে তুফান দাঁড়াননি বলে অভিযোগ কর্মীদের একাংশের। চলতি বছরের গোড়ায় জেলা সভাপতি পদে তুফান দ্বিতীয় বারের জন্য মনোনীত হন। ২৬ জানুয়ারি তিনি দলের নয়া জেলা কমিটির তালিকা প্রকাশ করলে শুরু হয় ক্ষোভ-বিক্ষোভ। নয়া জেলা কমিটিতে তুফানের কাছের লোকজন রয়েছেন অভিযোগে ২৭ জানুয়ারি বিজেপির যুব মোর্চার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক পালহান সরেন-সহ চার নেতার নেতৃত্বে জেলা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তুফানকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। পরে সুখময়ের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে।
ওই ঘটনার জেরেই সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি চিঠি দিয়ে চার নেতাকে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও দলবিরোধী কাজে যুক্ত থাকায় বহিষ্কারের কথা জানায়। বহিষ্কৃতেরা হলেন, বিজেপির জেলা যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক সুমন্ত মহান্তি, প্রাক্তন জেলা যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক পালহান সরেন, যুব মোর্চার বিনপুর বিধানসভার প্রাক্তন পর্যবেক্ষক সত্য মল্লিক ও ঝাড়গ্রাম শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা বাপ্পা বসাক।
এদিন ওই চার বহিষ্কৃত নেতার ডাকে জেলা বিজেপির ১৮টি মণ্ডল থেকে কয়েকশো নেতা-কমী বৈঠকে হাজির হন। কুনার ও সুখময় ছাড়াও প্রাক্তন জেলা সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত মাহাতো, যুব মোর্চার প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক অনুরণ সেনাপতির মতো জেলার অনেক পরিচিত গেরুয়া শিবিরের লোকজন ছিলেন। বৈঠকে সাংসদ কুমার জানান, দিল্লি গিয়ে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে গোটা বিষয়টি তিনি জানাবেন। দেড়টা নাগাদ বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান কুনার। তারপরও বৈঠক চলেছে। সেখানে সুখময় বলেন, ‘‘কর্মীরা না থাকলে দল থাকবে কী করে।’’ পালহানদের বহিষ্কার নিয়েও বৈঠকে সরব হন সুখময়।
বৈঠকে বহিষ্কৃত বাপ্পা বসাকের অভিযোগ, বিধানসভা ভোটের পরে রাজনৈতিক সন্ত্রাসে যে সব দলীয় কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, তাঁরা দলের তরফে ক্ষতিপূরণ পাননি। ক্ষতিগ্রস্ত হননি অথচ জেলা সভাপতির ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীদের নাম ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় রাখা হয়েছে। পালহান বলেন, ‘‘যাঁরা দল করতে গিয়ে মামলায় সর্বস্বান্ত হলেন, তাঁদের পক্ষ নিয়ে সরব হওয়ায় এখন আমাদের দল বিরোধী তকমা দেওয়া হচ্ছে।’’ সত্য মল্লিক বলেন, ‘‘আমাকে খুনের চেষ্টার মামলায় জড়ানো হয়। জেলা সভাপতি সাহায্য না করে উল্টে আমাকে পালিয়ে এলাকার বাইরে থাকতে বলেছিলেন।’’ চার নেতা বৈঠকে জানিয়ে দেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বহিষ্কার করে তাঁদের অপমান করা হয়েছে। সমস্যার সমাধান না হলে তুফান দলীয় কার্যালয়ে বসতে পারবেন না হুঁশিয়ারিও দেন তাঁরা। সব শেষে সুখময় বহিষ্কৃত চার নেতাকে সামাজিক কর্মসূচি করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘‘জেলা কমিটি এখন পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, তবে কর্মীরা যাতে মর্যাদা পান সেজন্য যথাযথ স্থানে জানাব।’’ পরে সুখময় বলেন, ‘‘বহিষ্কৃতদের বক্তব্যও শোনা উচিত। তাই ওদের কথা শুনতে এসেছিলাম।’’ একই কথা কুনারেরও। পরে পালহান, সত্য, সুমন্ত ও বাপ্পা দাবি করেন, বহিষ্কারের চিঠি তাঁরা পাননি। তাই তাঁরা দলেই রয়েছেন। এদিন সভাস্থলের চারপাশে বিজেপি দলীয় পতাকাও ছিল।
তুফান ফোন ধরেননি। তবে জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু জানান, জেলা সভাপতি চিকিৎসার জন্য বাইরে রয়েছেন। আর দেবাশিস বলেন, ‘‘বহিষ্কৃতরা সাংসদ ও প্রাক্তন সভাপতিকে একটি বৈঠকে ডেকেছিলেন। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে জানা নেই। তবে ওটি কোনও ভাবেই দলের বৈঠক নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy