Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বর্জ্য পুনরায় ব্যবহারে নয়া দিশা আইআইটি-র

আইআইটি-র বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ভারতে এখন থার্মাল বর্জ্য ব্যবস্থাপন পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে শুকনো বর্জ্য সহজেই পুনর্ব্যবহার যোগ্য করা যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৯ ০২:১৬
Share: Save:

সারা দেশে উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আবর্জনার পরিমাণও। ফলে বিভিন্ন শহরে গড়ে তোলা হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপন পদ্ধতি। কিন্তু ওই পদ্ধতিতে মাত্র ২০-৩০ শতাংশ বর্জ্যই পুনর্ব্যবহারের যোগ্য করে তোলা যাচ্ছে। এ বার প্রায় শূন্য বা ‘জিরো লস’ বর্জ্য ব্যবস্থাপন পদ্ধতি গড়ে নজর কাড়ল খড়গপুর আইআইটি!

প্রতিষ্ঠানের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ব্রজেশকুমার দুবে এবং গবেষক পড়ুয়া হরিভক্ত শর্মা ও সাগরিকা পানিগ্রাহী এই প্রযুক্তির আবিস্কর্তা। মূলত হাইড্রো থার্মাল কার্বোনাইজেশন (এইচটিসি) প্রক্রিয়া ব্যবহার করে এই প্রযুক্তি গড়ে তোলা হয়েছে। এই প্রযুক্তিতে আর্দ্রতা যুক্ত কঠিন বর্জ্য প্রায় সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব— দাবি গবেষক দলের। ওই বর্জ্য দিয়ে জৈব জ্বালানি এবং দূষণ শোষক পদার্থ তৈরি সম্ভব বলেও গবেষণায় প্রমাণ করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারা দেশের বর্জ্য সমস্যা মেটানো সম্ভব। আবিষ্কারের নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক ব্রজেশকুমার দুবে বলছেন, “হাইড্রো থার্মাল প্রক্রিয়া নতুন নয়। এটা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি অংশ। এই পদ্ধতিতে আর্দ্রতা যুক্ত বর্জ্যের প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ পুনর্ব্যবহারের যোগ্য করে তোলা যায়, সেটাই গবেষণায় তুলে ধরেছি।”

আইআইটি-র বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ভারতে এখন থার্মাল বর্জ্য ব্যবস্থাপন পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে শুকনো বর্জ্য সহজেই পুনর্ব্যবহার যোগ্য করা যায়। বিদেশে শুকনো বর্জ্যের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এই পদ্ধতি সফল হয়েছে। কিন্তু ভারতের মতো দেশে বর্জ্যের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ আর্দ্রতাও মিশে থাকে। ফলে আবর্জনার মাত্র ২০-৩০ শতাংশই পুনর্ব্যবহার যোগ্য করা যায়।

নতুন প্রযুক্তিতে হাইড্রো থার্মাল কার্বোনাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। হাইড্রো থার্মাল প্রযুক্তি আসলে প্রেসার কুকারের মতো একটি যন্ত্র, যেখানে আর্দ্রতা যুক্ত বর্জ্য দিলে তা তরল এবং কঠিন পদার্থকে আলাদা করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলে। একই সঙ্গে এই প্রক্রিয়ায় পাওয়া কঠিন পদার্থ পরিণত হয় চারকোল এবং অ্যাবজরবেন্ট কিংবা শোষকে। অন্যদিকে, তরল পদার্থ থেকে তৈরি হয় মিথেন। চারকোল জ্বালানি হিসেবে কাজে আসে। এবং অ্যাবজরবেন্ট জল বা মাটি পরিশোধনে কাজে লাগে। অন্যদিকে, মিথেন থেকে তৈরি করা যায় জৈবগ্যাস বা জৈব-ডিজেল। অধ্যাপক ব্রজেশকুমার দুবের কথায়, “এটি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি অংশ। আমাদের দেশে ৫০-৬০ শতাংশ আর্দ্রতা যুক্ত জৈব বর্জ্য পাওয়া যায়। তাই আমার গবেষক ছাত্র হরিভক্ত শর্মার গবেষণার বিষয় হিসাবে এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছি। সহযোগিতা করেছে আমার গবেষক ছাত্রী সাগরিকা পাণিগ্রাহী।”

এই পদ্ধতিতে খরচও অনেক কম হচ্ছে। অধ্যাপক ব্রজেশকুমার দুবের যুক্তি, “থার্মাল পদ্ধতিতে সারা দেশের সকল বর্জ্য সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহার করা যায় না। অথচ এক হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার ব্যবহারে বিদ্যুৎ খরচ হয় অনেক বেশি। কিন্তু আমরা যে হাইড্রো থার্মাল প্রযুক্তি তৈরি করেছি, তাতে ২০০-২৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা ব্যবহার হওয়ায় বিদ্যুতের খরচ তুলনায় কম হবে।” তবে এই প্রযুক্তি বাজারজাত করার আগে আরও গবেষণার প্রয়োজন, দাবি আইআইটির এই বিজ্ঞানীদের। অধ্যাপক ব্রজেশ দুবের দাবি, গবেষণার হিসাবে ছোট মাত্রায় এই প্রযুক্তি গড়ে তোলায় খরচ হয়েছে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা। কিন্তু বাণিজ্যিক ভাবে করতে যে গবেষণার প্রয়োজন তার জন্য দরকার প্রায় এক কোটি টাকা। এর জন্য কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের কাছে ওই টাকার মঞ্জুরের দাবি জানানো হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Waste Management Kharagpur Kharagpur IIT
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy