পঠনপাঠন সামাল দেওয়া যাবে কী করে! জেলার একাধিক স্কুলের মতো এই চিন্তায় ছিলেন তমলুকের হ্যামিলন্টন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন জানা। শুক্রবার সকালে হঠাৎই তাঁর স্কুলে হাজির হয়েছেন দুই যুবক। সঙ্গে রয়েছে তাঁদের বায়োডাটা, শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি। ব্যাপারটা কি! জানতে চেয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। যুবকেরা তাঁকে জানান, তাঁরা স্কুলে আংশিক সময়ের শিক্ষক হতে ইচ্ছুক। সে ব্যাপারেই কথা বলতে এসেছেন!
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। পূর্ব মেদিনীপুরে সেই সংখ্যাটা দেড় হাজারের কাছাকাছি। জেলার একাধিক স্কুলে শিক্ষকদের চাকরি বাতিল হওয়ায় পঠনপাঠন সুষ্ঠু ভাবে চালানো নিয়ে চিন্তায় প্রধান শিক্ষকেরা। প্রশাসনিক ভাবে কোনও নির্দেশ না আসলেও একাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগের চিন্তা শুরু করেছেন। সেই চিন্তাভাবনা যেন বুঝতে পেরেছেন বেকার থাকা জেলার একাংশ যুবক-যুবক। তাঁদেরই কেউ কেউ এ দিন পৌঁছে গিয়েছেন একাধিক স্কুলে।
তমলুক হ্যামিল্টন হাই স্কুলের চার শিক্ষক-শিক্ষিকা বাদ পড়েছেন। শুক্রবার তাঁরা স্কুলে আসনেনি। প্রধান শিক্ষক মধুসূদন জানা বলেন, ‘‘অন্তত তিনজন আংশিক সময়ের শিক্ষক নিতে হবে। এ দিনই আংশিক সময়ের শিক্ষক হতে ইচ্ছুক দু’জন প্রার্থী শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি নিয়ে এসেছিলেন। এক জনের এডুকেশন এবং আরেক জনের এমফিল ডিগ্রি রয়েছে।’’ স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির প্রথম পার্বিক পরীক্ষা সামাল দিতে এ দিন ভোকেশনাল বিভাগের শিক্ষকদের সাহায্য নেওয়া হয়েছে বলেও জানান মধুসূদন।
জেলা একাধিক স্কুলেই চাকরিহারারা এ দিন স্কুলে আসেননি। ফলে কোথাও স্কুলে শিক্ষকদের একাংশকে স্কুল ঝাঁট দিতে দেখা গিয়েছে। কেউ বাজালেন ঘণ্টা। ময়নার বিবেকানন্দ কন্যা বিদ্যাপীঠে ৩৩ জন শিক্ষিকার মধ্যে ১৩ শিক্ষক এবং এক শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল হয়েছে। তাঁরা কেউ এ দিন স্কুলে আসেননি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বলছেন, “পরীক্ষা চালাতে শিক্ষিকাদের অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব নিতে হয়েছে।’’
কোলাঘাটের গোপালনগর বিহারীলাল বিদ্যাপীঠের দু’জন শিক্ষক ও তিন জন শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মাইতির আক্ষেপ, ‘‘এ দিন স্কুলে ঝাঁট দেওয়া থেকে তালা খোলার দ্বায়িত্ব আমাকেই নিতে হয়েছে।’’ লক্ষ্যা হাই স্কুলের তিন শিক্ষক-শিক্ষিকা বাদ পড়েছেন। প্রধানশিক্ষক দেবাশিস পাহাড়ি জানিয়েছেন, এডুকেশন বিষয়ে পড়ানো নিয়ে সমস্যা হবে। নন্দীগ্রামের দেবীপুর মিলন বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত অগস্তি জানান, তাঁদের তিনজন শিক্ষক বাদ পড়েছে। স্কুল চলবে কী করে, তা নিয়ে বৈঠকে বসবেন।
কাঁথি শহরে রাখালচন্দ্র বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের পাঁচজন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। প্রধান শিক্ষক নির্মল কুমার আদক বলেন, ‘‘প্রতিটি পরীক্ষা হলে দু’জন শিক্ষক পাহারা দিতেন। আজ সেই সংখ্যা কমেছে।’’ কাঁথির নয়াপুট সুধীর কুমার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বসন্ত কুমার ঘোড়াই বলেন, ‘‘আর মাত্র একজন করণিক রয়েছেন। তিনিও শীঘ্রই অবসর নেবেন। তখন কী হবে, জানি না।’’ পটাশপুরের বরবটিয়া হাই স্কুলে শিক্ষা কর্মী না থাকায় শিক্ষকরাই স্কুলের ঘণ্টা বাজান, পরীক্ষার খাতা হলে নিয়ে যান।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)