দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বিষ্ণুপদ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে বিষ-মদ কাণ্ডে ১৭২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নুর আলম ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশা সহ ৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।
আলিপুর আদালতের এই রায় আশার আলো দেখিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের কাঁকটিয়া ও রামরতারক বাজার এলাকার বিষ-মদ কাণ্ডে মৃতদের পরিবারকে। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের কয়েকদিন আগে ওই দুই এলাকায় চোলাই খেয়ে মারা গিয়েছিলেন ৪৮ জন। বিষ মদের জেরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন। ঘটনায় জড়িত চোলাই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতে সেই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া এখনও চলছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি হবে এই আশায় বুক বেঁধেছেন মৃত ও অসুস্থদের পরিবার। তাঁদের সেই আশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে বিষ-মদ কাণ্ডে আদালতের রায়।
জেলা সদর তমলুক শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারে কাঁকটিয়া বাজার। তিন কিলোমিটার দূরে রামতারক বাজার। ৯ বছর আগে ওই দুই বাজারে একাধিক চোলাই ঠেকে মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শতাধিক মানুষ। মৃত্যু হয় ৪৮ জনের। মৃতদের একজন কাঁকটিয়া গ্রামের অজিত পাত্র। বছর ছেচল্লিশের অজিতের চায়ের দোকান ছিল। স্ত্রী ও তিন ছেলের সংসারে একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুতে অথৈ জলে স্ত্রী রীতা পাত্র। ছেলেদের কেউ চায়ের দোকান চালিয়ে, কেউ মিষ্টির দোকানে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। ৯ বছর আগে সেদিনের ঘটনা এখনও চোখে জল এনে দেয় রীতাদেবীর। শনিবার কান্নাভেজা গলায় বলেন, ‘‘সেদিন দুপুরে বাড়িতে ফিরেই ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। বমি আর পেটব্যথায় ছটফট করছিল । কোনওরকমে বাড়ির কাছে জানুবসান ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাই। পরে তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু মানুষটা আর ফেরেনি।’’ মেজছেলে ২৯ বছরের শিবুর দাবি, ‘‘চাই বিষ-মদকাণ্ডে জড়িতদের কড়া শাস্তি হোক।’’
মারা দিয়েছিলেন নোনাকুড়ি গ্রামের রবীন্দ্রনাথ মন্ত্রীও । মাছ ব্যবসা করে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতেন। বছর বিয়াল্লিশের রবীন্দ্রের মৃত্যুর পর সংসার চালাতে স্ত্রী নিয়তিদেবী কাঁকটিয়া বাজারে মাছ ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্বামীর হঠাৎ মৃত্যুতে খুব কষ্টে পড়েছিলাম। সরকারি সাহায্যও মেলেনি। নিজেই মাছ ব্যবসা শুরু করি। তাতেই এখনও চলছে।’’ নিয়তি দেবী বলেন, ‘‘ঘটনার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছিল। কয়েকজনকে ধরেছিল বলে জানি। স্বামীর মৃত্যুর জন্য যারা দোষী তাদের শাস্তি চাই।’’ ওই ঘটনাতেই চোলাইয়ের বিষক্রিয়ায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন কাঁকটিয়া গ্রামের ৭৩ বছরের বিষ্ণুপদ পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘চোলাই খেয়ে অসুস্থ হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে চিকিৎসা চলে। কিন্তু দৃষ্টি আর ফিরে পাইনি।’’ দোষীদের শাস্তি হবে এই আশায় এখনও দিন গোনেন তিনি।
ঘটনার যখন ঘটে তখন এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য ছিলেন সন্তোষ মাইতি। তিনি বলেন, ‘‘চোলাই খেয়ে মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার পুলিশের কাছে পৃথকভাবে প্রায় ২০ জন মদ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল। পুলিশ মামলা দায়ের করে। কয়েকজন গ্রেফতার হয়। কিন্তু তারপর তদন্তের বিষয়ে আমাদের আর কিছু জানানো হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy