Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর

ভাঙা বাড়িতে অফিস, ভোগাচ্ছে কর্মী সঙ্কটও

কখনও ছাদ থেকে খসে পড়ছে চাঙড়, কখনও দেওয়াল থেকে চুন-সুরকির পলেস্তারা। ছাদ থেকে নেমে এসেছে বট-অশ্বত্থের ঝুরি। বৃষ্টি হলে বিভিন্ন জায়গা দিয়ে জল পড়তে থাকে। জলে ভিজে অনেক দরকারি কাগজপত্রও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

ভবনের হাল এখন এমনই। নিজস্ব চিত্র।

ভবনের হাল এখন এমনই। নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৫
Share: Save:

কখনও ছাদ থেকে খসে পড়ছে চাঙড়, কখনও দেওয়াল থেকে চুন-সুরকির পলেস্তারা। ছাদ থেকে নেমে এসেছে বট-অশ্বত্থের ঝুরি। বৃষ্টি হলে বিভিন্ন জায়গা দিয়ে জল পড়তে থাকে। জলে ভিজে অনেক দরকারি কাগজপত্রও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

এমনই জরাজীর্ণ দশা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের ঝাড়গ্রাম মহকুমা কার্যালয়টির। ঝড়-বৃষ্টি হলে প্রমাদ গোনেন দফতরের কর্মীরা— ব্রিটিশ আমলের বিপজ্জনক দোতলা বাড়িটি ভেঙে পড়বে না তো! অথচ পিছিয়ে পড়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের বাসই বেশি জঙ্গলমহলে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪১ শতাংশ। আর রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতোও জঙ্গলমহলের মানুষ। গত বছর অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরে এই অফিস পরিদর্শন করেছিলেন চূড়ামণিবাবু। সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বছর ঘুরতে চললেও সুরাহা হয়নি।

আর কয়েক মাস পরে নতুন জেলা হতে চলেছে ঝাড়গ্রাম। অথচ আদিবাসী-মূলবাসীদের উন্নয়নের মূলকেন্দ্র অবহেলিতই থেকে গিয়েছে। মন্ত্রী চূড়ামণিবাবুও মানছেন, “আমি নিজে অফিসটি পরিদর্শন করে দেখেছি, সমস্যা আছে।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, আগে ভাড়া বাড়িতে ঝাড়গ্রাম মহকুমা অফিসটি চলত। ২০০৭ সালে কাজের সুবিধার জন্য ঝাড়গ্রাম এসডিও অফিসের কাছে পুরনো সরকারি ভবনে অফিস স্থানান্তরিত করা হয়। প্রায় একশো বছরের পুরনো জরাজীর্ণ দোতলা বাড়িটি আগে ইংরেজ ডেপুটি ম্যাজিস্টেটের আবাসন ছিল। দফতরের এক কর্মী বলছিলেন, “জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। ঝড়-ঝৃষ্টি হলে ভয়ে আমরা অফিস থেকে বেরিয়ে গাছতলায় দাঁড়িয়ে থাকি।” অফিসের এক তলার একটি ঘরে বসেন হেড ক্লার্ক। একটি হল ঘরে বসেন বাকি কর্মীরা। দোতলায় আধিকারিকের অফিস ঘরটি সাধারণত বন্ধ থাকে। জেলা আধিকারিক এলে তখন খোলা হয়। আর জলে ভিজে সরকারি নথি নষ্ট হয়ে যায় বলে এখন তা বান্ডিল করে অফিস ভবনের বাইরে অ্যাসবেসটস্‌ ছাউনির নীচে রাখা হয়।

শুধু জীর্ণ ভবন নয়, রয়েছে কর্মী সঙ্কটও। প্রায় তিন বছর ধরে এই দফতরে ঝাড়গ্রাম মহকুমা আধিকারিকের পদটি খালি রয়েছে। অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রকল্প আধিকারিক পুষ্পেন্দু সরকার ঝাড়গ্রাম মহকুমা আধিকারিকের বাড়তি দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। প্রায়ই তাঁকে জেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে ঝাড়গ্রাম অফিসটি কার্যত অভিভাবকহীন অবস্থায় চলছে। এখন এই অফিসে তিন জন করণিক-সহ স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা সাত। আরও দু’জন অস্থায়ী কর্মী আছেন।

অথচ এই অফিস থেকে ঝাড়গ্রাম একলব্য আদর্শ আবাসিক স্কুল-সহ জঙ্গলমহলের আরও চারটি আদিবাসী ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসের কাজকর্ম পরিচালনা করা হয়। জঙ্গলমহলের ৮টি ব্লকের ১০২টি স্কুল লাগোয়া তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতিদের ছাত্রাবাসের অনুদানও এখান থেকে দেওয়া হয়। আধিকারিক না থাকায় নিয়মিত ওই ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসগুলি পরিদর্শন করা হয় না। বন্ধ রয়েছে ‘লোধা উন্নয়ন সেল’-এর কাজকর্মও। চূড়ামণিবাবুর অবশ্য আশ্বাস, ‘‘ঝাড়গ্রামের অফিসটি অন্যত্র সরানোর জন্য প্রশাসনিকস্তরে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। শূন্যপদে দ্রুত কর্মী নিয়োগেরও চেষ্টা চলছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE