Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

রাস্তায় উদ্ধার রক্তাক্ত ছাত্র

পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হল রাস্তা থেকে। ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য মেদিনীপুর শহরে। বৃহস্পতিবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরের কেরানিতলা এলাকায় একটি বহুতল বাড়ির সামনের রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় বছর দশেকের এক ছাত্রকে। পরনে মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলের পোশাক। স্থানীয় বাসিন্দারাই তাকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।

মেদিনীপুর মেডিক্যালে বিশ্বজিৎ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

মেদিনীপুর মেডিক্যালে বিশ্বজিৎ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ০১:২৭
Share: Save:

পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হল রাস্তা থেকে। ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য মেদিনীপুর শহরে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরের কেরানিতলা এলাকায় একটি বহুতল বাড়ির সামনের রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় বছর দশেকের এক ছাত্রকে। পরনে মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলের পোশাক। স্থানীয় বাসিন্দারাই তাকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় সেখান থেকেই কলকাতার হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয় তাকে।
জানা গিয়েছে ওই ছাত্রের নাম বিশ্বজিৎ জানা। বাড়ি গোপীবল্লভপুরে। রামকৃষ্ণ মিশনের পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া বিশ্বজিৎ থাকত নতুনবাজার এলাকার একটি মেসে। কেরানিতলার ওই বাড়িতে পড়তে যেত। কিন্তু কী ভাবে আহত হল বিশ্বজিৎ তা নিয়ে সংশয়ে পুলিশ। ঘটনার তদন্তে নেমে বেশ কিছু রহস্যজনক তথ্যও পেয়েছে পুলিশ।
প্রথমত, ওই ছাত্রের গলায় ছুরি বা ছুরির মতো ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। বাড়ির সামনে যেখানে সে পড়েছিল, ঠিক তার পাশেই ছিল জুতোটি। অথচ স্কুলব্যাগটি উদ্ধার হয়েছে তিনতলার কার্নিশ থেকে। অর্থাত্‌, প্রাথমিক ভাবে মনে হবে, চারতলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছে বিশ্বজিৎ।
দ্বিতীয়ত, বিশ্বজিতের পরনে ছিল স্কুলের পোশাক। কিন্তু স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে শুধু বৃহস্পতিবার নয়, গত ২০ জুলাই থেকেই সে অনুপস্থিত ছিল স্কুলে।
তৃতীয়ত, কেরানিতলার বাড়িটিতে গত তিন-চার দিন সে থাকছিল বলে জানিয়েছেন পড়শিরা। নতুন বাজারের বাড়ি ছেড়ে কেন বিশ্বজিৎ এখানে থাকছিল তাও জানা নেই। পুলিশ ওই ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানতে চেষ্টা করছে।

এ দিকে যে ঘরে বিশ্বজিৎ পড়তে আসত বা গত কয়েকদিন ছিল, সেখানে থাকে অন্য দুই ছাত্র। এই ঘটনার পর তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে বলেই প্রাথমিক ভাবে অনুমান। কারণ তাদের ঘরে গিয়ে দেখা যায় দরজার পাল্লা হাট করে খোলা, ভিতরে পড়ে রয়েছে অগোছালো বালিশ, বিছানা, মশারি। বন্ধ অবস্থায় রয়েছে একটি কম্পিউটার। তাদের পরিচয় জানতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “এক ছাত্রকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তার গায়ে স্কুলের পোশাকও ছিল। তদন্তে সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এ দিন ঘটনাস্থলে আসেন ডেপুটি পুলিশ সুপার শ্যামল মণ্ডল, কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী। বেশ কয়েকজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে কিছু তথ্য উঠে এসেছে। তবে তা যাচাই না করে ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।”

এ দিন যাঁরা ওই ছাত্রকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান তাঁদের মধ্যে ছিলেন শুভাশিস দাস বর্মন, মিঠুন চট্টোপাধ্যায়রা। শুভাশিসবাবু বলেন, “রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। স্থানীয়দের জটলা দেখে দাঁড়িয়ে পড়ি। তারপরেই ওকে নিয়ে এসেছি।”

অন্যদিকে ওই বহুতলে আরও বেশ কয়েকটি পরিবার ভাড়া থাকে। তাঁদেরই একজন ব্যবসায়ী অমিত ভগত বলেন, “কখন ঘটনাটি ঘটেছে বুঝতেই পারিনি। কী ভাবে ওই ছাত্র জখম হল, তাও স্পষ্ট নয়।” প্রায় একই বক্তব্য কৃষ্ণা প্রসাদ নামে অন্য এক ভাড়াটের। কৃষ্ণাবাবু বলেন, “গতকালই শেষবার ছাত্রটিকে ঘরে ঢুকতে দেখেছিলাম। তারপর এই ঘটনা।”

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, এক ভাড়াটের না কি চিত্‌কারের শব্দ পেয়েছিলেন। পুলিশের অনুমান বিশ্বজিৎকে মারধর করা হয়ে থাকতে পারে।

গোপীবল্লভপুরে ইতিমধ্যে বিশ্বজিতের বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে। তার মামাতো দাদা শুভাশিস জানার সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বিশ্বজিত্‌ যে কেরানিতলার মেসে থাকছে তা জানা ছিল না পরিবারের। তিনি জানান, ‘‘ঠিক কী হয়েছে তা না-জেনে আর কিছু বলব না।”

মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক ব্রহ্মচারী ধ্যানচৈতন্য বলেন, “হাজিরা খাতা থেকে দেখেছি, ও ২০ জুলাই থেকে স্কুলে আসেনি।” স্কুলে না- গেলেও গায়ে স্কুলের পোশাক এল কী ভাবে, কেনই বা প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে স্কুলে গরহাজির ছিল ওই ছাত্র, পুলিশকে ভাবাচ্ছে এই সব বিষয়ও। সাম্প্রতিক অতীতে অবশ্য মেদিনীপুর শহরে এমন ঘটনার নজির নেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE