জলবন্দি। কাঁথি-৩ ব্লকের কুমিরদা গ্রামের বাড়ি ডুবেছে জলে ।
প্রবল বৃষ্টি চলতে থাকায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। জেলার ৫২টি পঞ্চায়েতের ৫২৮ টি গ্রামের প্রায় ১ লক্ষ ২২ হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় পাঁশকুড়া ব্লকের বিজয়রামচক এলাকায় ক্ষীরাই নদীর বাঁধ ভেঙে ও রাতে স্থানীয় মাগুরি জগন্নাথচক গ্রামের কাছে পিয়াজখালি খালের বাঁধ চৈতন্যপুর-১ ও ২ গ্রামপঞ্চায়েতের প্রায় ৮ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
জেলার কাঁসাই, চণ্ডিয়া, রূপনারায়ণ, কেলেঘাই-বাগুই ও হলদি নদীতে নতুন করে জলস্তর বৃদ্ধি না পেলেও কাঁসাই ও চণ্ডিয়া নদীর জল এখনও চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। গত চারদিনের মত শুক্রবারও সারারাত ধরে ভারী বৃষ্টি চলার জেরে জেলার অধিকাংশ এলাকায় আমন, আউশ রোয়া ধান, ধানের বীজতলা, সব্জি, পান বরজ, ফুল চাষের জমি ও মাছের ভেড়ি আরও জলমগ্ন হয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শনিবার জেলার সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের অফিসে জেলা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিক ও বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। সৌমেনবাবুর কথায়, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত নন্দকুমার, ভগবানপুর-১, ২ , খেজুরি-১, পাঁশকুড়া, দেশপ্রাণ ও চণ্ডীপুর ব্লক মিলিয়ে জেলা মোট ১৬০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। এইসব শিবিরে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়ের জন্য ২৫ হাজার ত্রিপল বন্টন করার জন্য দেওয়া হয়েছে।’’
প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন পটাশপুর-বালিচক মোড় ।
জেলা প্রশাসন ও কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৭০ মিলিমিটার। শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত আরও প্রায় ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে গত চারদিনেই জেলায় গড়ে মোট প্রায় ৩৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়ে অনেকটাই বেশী। কয়েকদিন ধরে একটানা ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে জেলার অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকায় বৃষ্টির প্রচুর জল জমা হওয়ার পাশাপাশি কাঁসাই, চণ্ডীয়া, রূপনারায়ণ, হলদি ও কেলেঘাই-বাগুই প্রভৃতি নদীর জলস্তর ক্রমশ বাড়তে থাকে। ফলে ওইসব নদীর সঙ্গে যুক্ত খাল দিয়ে বৃষ্টির জল নিকাশির সুযোগ কমে যায়। জেলার অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টির জল জমে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পাঁশকুড়া স্টেশন বাজার জলমগ্ন হয়ে দোকানপাটে জল ঢুকেছে। চণ্ডীপুর থানার অফিসেও জল ঢুকেছে। অনেকেই নিজেদের বাড়ি ছেড়ে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাইস্কুলগুলিতে আশ্রয় নিচ্ছে। তবে আশ্রয় শিবিরের অনেকগুলিতে সরকারি ত্রাণ গিয়ে পৌঁছাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার সকালে নদীবাঁধ ভাঙনের এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ক্ষীরাই নদীর পূর্ব দিকের বাঁধের প্রায় ৩০ ফুট ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবল গতিতে গ্রামগুলিতে জল ঢুকছে। এদিন নন্দীগ্রামের মহেশপুর বাজারের কাছে স্থানীয় বাসিন্দারা জলনিকাশির দাবিতে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে রাস্তা অবরোধ করেন।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁশকুড়ায় ক্ষীরাই নদীবাঁধ ভাঙার পাশাপাশি জেলার তমলুক শহর, কোলাঘাট, মহিষাদল ব্লকে রূপনারায়ণ নদীর বাঁধের কয়েকটি স্থানে ধস নেমেছে ও কাঁথিতে রসুলপুর নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হলদিয়া ব্লকের বাঁশখানা জালপাই গ্রামের কাছে হলদি নদীর বাঁধে ধস নেমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঁথি মহকুমার ভগবানপুর-২ ব্লকের ইটাবেড়িয়া, কাঁথি-৩ ব্লকের ভাজাচাঊলি, কুমিরদা, কানাইদিঘী, মারিশদা এলাকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
জেলা কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৬০০ মিলিমিটার। কিন্তু চলতি বছরে জুন ও জুলাই এই দু’মাসেই জেলায় গড়ে মোট প্রায় ১২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সোহম গুহ ও কৌশিক মিশ্রের তোলা ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy