কন্যাকথা: পট আঁকতে ব্যস্ত শিল্পীরা। —নিজস্ব চিত্র।
রঙিন কাপড় আর থার্মোকলের নকশা দিয়ে তৈরি মণ্ডপ আর চোখেই পড়ে না প্রায়। দেবী প্রতিমার সাবেক রূপও ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। শহর কলকাতা থেকে ধীরে ধীরে জেলা, মফস্সলেও ছড়িয়ে যাচ্ছে থিমের পুজোর হুজুগ। নিত্য নতুন ভাবনায় ফুটে ওঠে শিল্পকলা। কিন্তু এ বার সেই ভাবনার অনেকটা অংশ দখল করছে সরকারি প্রকল্প।
কোথাও পুজোর থিমে তুলে ধরা হয়েছে ‘কন্যাশ্রী’, আবার কোথাও পথ নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা। পুজোর থিমে সরকারি প্রকল্প নাকি সরকারি প্রকল্পের প্রচারে দুর্গাপুজোর মণ্ডপকে বেছে নেওয়া হচ্ছে— বোঝা দায়! এমন অনেক পুজোই রয়েছে যেখানে থিমে রয়েছে দেশ বিদেশের নানা মন্দির, স্থাপত্য, দর্শনীয় সৌধ থেকে পরিবেশ সচেতনতা ও সামাজিক নানা সমস্যার বিষয়। কিন্তু পুজোর মণ্ডপকে সরকারি প্রকল্পের প্রচারের হাতিয়ার করে তোলার প্রয়াস বোধহয় এই প্রথম— অন্তত পূর্ব মেদিনীপুরে।
বছর কয়েক আগে কলকাতার একটি পুজো কমিটি বিশ্ব বাংলাকে থিম হিসাবে বেছে নিয়েছিল সরাসরি। সেখানে ব্র্যান্ড বাংলার লোগো ব্যবহার করা হয়েছিল মাটির বাড়ির দেওয়ালে। সে পুজোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতা।
পূর্ব মেদিনীপুরেও সে নজির তৈরি হচ্ছে। তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের নোনাকুড়ি সাংস্কৃতিক সংস্থার দুর্গাপুজোর থিমে তুলে ধরা হচ্ছে ‘কন্যাশ্রী’র প্রকল্প। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের এই সরকারি প্রকল্প চলতি বছরেই রাষ্ট্রপুঞ্জের পুরস্কার পেয়েছে। বিশ্ব দরবারের সেই স্বীকৃতিকে এ নিয়ে প্রচার চলছে সরকারি ভাবেও।
তাই নোনাকুড়ির এই পুজোর থিমে উঠে আসছে গ্রাম বাংলার কুঁড়ে ঘর। তার দেওয়াল জুড়ে পটচিত্র ৮০ ফুট লম্বা ও ৩ ফুট চওড়া। সেখানেই তুলে ধরা হচ্ছে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের বিভিন্ন দৃশ্য থেকে বিশ্বমঞ্চে পুরস্কার পাওয়ার ছবি। এই পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা জয়দেব বর্মন তৃণমূলের যুব সংগঠনের ব্লক সভাপতি।
শাসকদলের নেতা বলেই কি এমন থিমের ভাবনা? জয়দেববাবু অবশ্য বলেন, ‘‘উন্নয়নের জন্য সরকারি অনেক প্রকল্প চালু আছে। কিন্তু ‘কন্যাশ্রী’কে সেই সবে সঙ্গে এক সারিতে বসানো যায় না। এমন একটি ভাল কাজে শরিক হওয়ার জন্য আমরা এই প্রকল্পকে থিম হিসাবে বেছে নিয়েছি। এতে রাজনীতি নেই।’’ আবার পাঁশকুড়ার কেশাপাট সর্বজনীন দুর্গোৎসবের মণ্ডপে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
কোলাঘাট নতুন বাজারে সঙ্কেত ক্লাবের মণ্ডপ জুড়েই আবার ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ (আস্তে চালাও জীবন বাঁচাও)-এর নানা ছবি। মণ্ডপের প্রবেশ পথ করা হচ্ছে ট্র্যাফিক সিগন্যালের আদলে। মণ্ডপ চত্বর জুড়ে থাকছে ট্রাফিক আইন উপেক্ষা করার মাসুল— নানা দুর্ঘটনার দৃশ্য। থাকছে সাম্প্রতিককালে কোলাঘাটে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো তরতাজা যুবকদের ছবিও।
পুজোর থিমে এমন কেন? ক্লাবের অন্যতম কর্তা অসীম দাস বলেন, ‘‘সারা বছর ধরে নানা সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত থাকেন ক্লাব সদস্যরা। তবে কেউই রাজনীতি সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নন। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি দুর্ঘটনায় বহু মানুষের বিপন্নতার ছবি। তাই পথ নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা মানুষের কাছে তুলে ধরতেই এ বার থিম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।’’
পাঁশকুড়া চৌরিঙ্গী মোড় পুজো সমিতির মণ্ডপ করা হচ্ছে ইতালীয় রাজপ্রাসাদের আদলে। তবে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে পুজো হয় বলে এখানেও ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রচার হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy