কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহত পূজার মা। —নিজস্ব চিত্র।
এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠল ওই নাবালিকারই জ্যাঠতুতো দাদার বিরুদ্ধে। বুধবার শালবনির এই ঘটনায় নিহত পূজা মাহাতোর পরিবারের অভিযোগ, ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ওই কিশোরীকে। খুনের পর মৃতদেহ বস্তাবন্দি করে ঘরেই রেখে দিয়েছিল অভিযুক্ত বাপ্পাদিত্য মাহাতো। পরে তা উদ্ধার হয়। তবে অভিযুক্তের খোঁজ মেলেনি। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “ধর্ষণ করেই খুন কিনা তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে জানা যাবে। অভিযুক্ত যুবক পলাতক। তার খোঁজ চলছে।”
শালবনির ঢ্যাঙ্গাশোলে বাড়ি প্রদীপ মাহাতোর। প্রদীপবাবুর এক ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে পূজা দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ছেলে বিনয় পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। বুধবার বিকেলে খুন হয় পূজা। ঘটনার সময় তার বাড়িতে কেউ ছিল না। বাবা প্রদীপবাবু কাজে বেরিয়েছিলেন। মা সুভদ্রাদেবী এবং ভাই বিনয় গিয়েছিলেন আত্মীয় বাড়িতে। পূজাদের পাশেই বাড়ি বাপ্পাদিত্যের। সে প্রদীপবাবুর জ্যাঠতুতো দাদার ছেলে। বাপ্পাদিত্য বিবাহিত। তবে ঘটনার সময় মেয়েকে নিয়ে বাপেরবাড়ি গিয়েছিলেন বাপ্পাদিত্যের স্ত্রী। আর তার মা লুলকি মাহাতোও বাড়িতে ছিলেন না। অভিযোগ, বুধবার দুপুরে পূজাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বাপ্পাদিত্য। ওই নাবালিকা চিত্কার শুরু করলে ভয়ে পূজার শ্বাসরোধ করে খুন করে সে। তারপর মৃতদেহ বস্তায় ভরে ঘরের কোণে রেখে দেয়।
বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বাড়ি ফেরেন পূজার মা সুভদ্রাদেবী। মেয়েকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। খবর পেয়ে আসেন প্রদীপবাবুও। এই সময় বাপ্পাদিত্য পূজাদের বাড়িতে আসে। উদ্বিগ্ন প্রদীপবাবু ও সুভদ্রাদেবীকে সে বলে, পূজা নিশ্চয়ই কোথাও গিয়েছে। ঠিক ফিরে আসবে। মেয়ের খোঁজ না পেয়ে রাত ৮টা নাগাদ সুভদ্রাদেবী পাশেই বাপ্পাদিত্যের বাড়িতে যান। ঘরের কোণে বস্তা দেখে সন্দেহ হয় তাঁর। বস্তা খুলে তিনি দেখেন, মেয়ের মৃতদেহ। অবস্থা বেগতিক বুঝে ততক্ষণে চম্পট দিয়েছে বাপ্পাদিত্য। রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। যান ডেপুটি পুলিশ সুপার (অপারেশন) সৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়। দেহ উদ্ধার করে শালবনি থানায় নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে মেদিনীপুর মেডিক্যালে দেহের ময়নাতদন্ত হয়।
প্রদীপবাবু বলেন, “মেয়েকে কোনও প্রলোভন দেখিয়েই বাপ্পাদিত্যে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। আমাদের সন্দেহ, ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করেই খুন করা হয়েছে। আমরা ওর চরম শাস্তি চাই।” কাঁদতে কাঁদতে সুভদ্রাদেবীর হাহাকার, “এ ভাবে যে মেয়েকে হারাতে হবে, ভাবিনি। যে ওর এই দশা করল তার যেন ফাঁসি হয়।” দিদিকে হারানোর পর চোখের জল যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে বিনয়ের। সকাল থেকে প্রদীপবাবুর পাশেই বসেছিল সে। বিনয়ের কথায়, “দিদির শরীরটা ক’দিন ধরেই খারাপ ছিল। কেন যে ও দিদিকে মারল!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy